News update
  • 13 killed in Faridpur road accident     |     
  • 15 missing after boat capsizes in Indian Kashmir     |     
  • Israeli military tells Palestinians not to return to north Gaza     |     
  • 13 dead in bus-pickup van collision on Dhaka-Khulna highway     |     
  • Fire at Ctg slum leaves upto 200 families homeless     |     

কপিরাইট দিবস ২৬ এপ্রিল - মেধাস্বত্ব অধিকার : প্রয়োজন সচেতনতা

error 2022-04-25, 10:03pm

intellectual-property-rights-dcebddd699ed11c2fafd97b6129562d81650902596.jpg

Intellectual property rights



পরীক্ষিৎ চৌধূরী

বছর কয়েক আগে দেশের একটি সরকারি সংস্থা অনুমতি না নিয়ে রাজধানীর একটি বিলবোর্ডে কবি নির্মলেন্দু গুণের ছবি আর একটি উক্তি ব্যবহার করেছিল। বিষয়টি কবির নজরে আসলে সেই কর্তৃপক্ষকে তাঁর ছবি ব্যবহারের জন্যে প্রাপ্য টাকা দিতে বাধ্য করেছিলেন। এমনকি ঐ ছবির আলোকচিত্রীর প্রাপ্য টাকাটাও আদায় করে দিয়েছিলেন।

আরেকটি ঘটনা মাত্র কিছুদিন আগের । ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখকস্বত্ব দাবি করে শেখ আবদুল হাকিমের মামলা এবং সেই মামলায় কাজী আনোয়ার হোসেনের পরাজয়।

প্রায় ১০ বছর আগে নিজেকে থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক দাবি করে বাংলাদেশ কপিরাইট রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযোগ জানিয়েছিলেন শেখ আবদুল হাকিম। বইয়ের রয়্যালটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের জন্ম। সেবা প্রকাশনীর অন্যান্য লেখকের মতো আবদুল হাকিমও পাণ্ডুলিপি লিখে দিয়ে টাকা নিতেন। বই বিক্রির পর আরও টাকা পেতেন। ছাপানো বইয়ের সংখ্যা সঠিকভাবে না দেখিয়ে প্রাপ্য রয়্যালটি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে কপিরাইট অফিসে

অভিযোগ করেন লেখক শেখ আবদুল হাকিম। ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের কিছু বই শেখ আবদুল হাকিম লিখেছেন, সেটি কপিরাইট বোর্ডের কাছেও লিখিতভাবে কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়, আবদুল হাকিম সেবা প্রকাশনীতে চাকরি করতেন। মালিকের কথায় বই লেখায় আবদুল হাকিম বইয়ের স্বত্ব পেতে পারেন না। যেসব বইয়ের ভেতর আবদুল হাকিমের নাম রয়েছে, সেগুলো ছাড়া কোনোভাবে তিনি অন্য বইয়ের স্বত্ব দাবি করতে পারেন না। পরে রায়ে কপিরাইট বোর্ড বলেছে, আবদুল হাকিম যে সেবা

প্রকাশনীতে চাকরি করতেন, এর তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেননি প্রতিপক্ষ কাজী আনোয়ার হোসেন। আবদুল হাকিম চাকরিজীবী হলেও পাণ্ডুলিপি প্রণেতা হিসেবে রচনার মূল মালিক।

কপিরাইটের মেয়াদ ৬০ বছর।

বাংলাদেশে কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের তোয়াক্কা না করেই গীতিকার ও সুরকারদের বঞ্চিত করে গান বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দু’জন সুপরিচিত শিল্পীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত আদালতে বাংলাদেশের দুটি জনপ্রিয় ব্যান্ড নগর বাউল ও মাইলসের প্রধান শিল্পীরা গত বছর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে গিয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। তাদের দাবি, ২০০৭ সাল থেকে একটি মোবাইল অপারেটর দেশের ব্যান্ডগুলোর গান, তাদের অনুমতি ছাড়াই গ্রাহকদের রিং টোন, কলার রিং ব্যাক টোন, ওয়েলকাম টিউন এবং ফুল-ট্র্যাক ব্রডকাস্ট এবং ডাউনলোডের পূর্ণ

সুবিধা দিচ্ছে। উভয় মামলাই কপিরাইট আইন, ২০০০-এর ধারা ৭১, ৮২ ও ৯১-এর অধীনে দায়ের করা হয়েছিল।

উপরের উদাহরণগুলো সাম্প্রতিক সময়ের। এই সচেতনতা অতীতে ছিল না যে, মেধাসম্পদ অন্য কেউ দাবি করলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়। যেনো প্রায় ক্ষেত্রে আমরা তা করি না। 

আমাদের এ মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে। মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যাঁরা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা সবাই এ আইনের অংশীজন।

বর্তমান বিশ্বে বস্তুগত সম্পদের পাশাপাশি মেধাসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এই মেধাসম্পদ বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি’ নিয়ে বড়ো বড়ো কোম্পানির মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আইনি লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে। উদাহরণস্বরুপ আইওএস-এন্ড্রয়েড বিষয়ে অ্যাপল-স্যামসাং পেমেন্ট যুদ্ধ এবং এন্ড্রয়েডে জাভা ব্যবহার নিয়ে গুগল-

ওরাকল এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি মামলা। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে মেধাস্বত্ববিষয়ক আইনের চারটি বিষয় রয়েছে :ভৌগোলিক নির্দেশক, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইট। এই চারটি বিষয়ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনে স্বীকৃত এবং প্রতিটি বিষয়ে বাংলাদেশে পৃথক আইন রয়েছে। মেধাস্বত্ব আইন মূলত বাণিজ্যিক আইনের একটি শাখা। তাই বাণিজ্যিক আইনের শাখা হয়েও মেধাস্বত্ব আইন মানবাধিকারেরও অন্তর্ভুক্ত। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ২৭(২) অনুচ্ছেদে মেধাস্বত্বকে মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পেটেন্ট হচ্ছে কিছু স্বতন্ত্র বা একক অধিকার যেগুলো আইনগত সিদ্ধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোন উদ্ভাবককে তার উদ্ভাবনের জন্য প্রদান করা হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে কোনও পেটেন্ট এই পেটেন্টের মালিককে সিদ্ধান্তটি কীভাবে বা অন্যরা কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সরবরাহ করে। একটি নিদিষ্ট সময়কালের জন্য পেটেন্ট দেওয়া হয় যা পরে নবায়ন করা যায়। পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনের কৌশল সংশ্লিষ্ট আইনি দপ্তরের মাধ্যমে সবাই জানতে পারে।

কপিরাইট হলো একটি আইনি শব্দ যা সৃষ্টির মূল ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে তাদের সাহিত্য ও শৈল্পিক রচনাবলি বা কর্মের ওপর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। 

সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার সৃষ্টিকারীর জন্য মেধাস্বত্ব হতে পারে। কপিরাইট যে কাজটি মূলত করে থাকে, তা হলো সৃজনশীল শিল্পসত্তার মূল্যায়ন, রয়্যালটি সংগ্রহ ইত্যাদি। যা সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একইভাবে পরিচালিত হয়। মেধাস্বত্ব হতে প্রাপ্ত সুফল বলতে সাধারণত অর্থিক, একাডেমিক, ভাবমূর্তি এবং মর্যাদার বিষয়কে বুঝায়। মেধাস্বত্ব হতে প্রাপ্ত সুবিধা গ্রহণ করে সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনশীলতা, সৃষ্টি ও উদ্ভাবন কর্মের যথাযথ সুরক্ষা দিয়ে সম্পদ ও সুনাম আহরণে একটি জাতি যে পৃথিবীতে শীর্ষে অবস্থান করতে পারে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জাপান।

এ দেশে অনেকেই নিজেদের গুণ দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করছেন, কিন্তু নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা একদমই সামান্য। দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এমন অনেক মেধাবী মানুষের দেখা পাওয়া যায়, যাঁরা অসাধারণ গুণ দিয়ে বিশ্বে নিজেদের এবং বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সক্ষম। কিন্তু এত মেধাবী এবং তারুণ্যনির্ভর জাতি হয়েও আমরা মেধাস্বত্বের সঠিক চর্চা

করতে পারছি না বলে পিছিয়ে আছি। ফলে নিজেদের মেধার পূর্ণ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের মেধাকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তাঁদের মেধাস্বত্বের পূর্ণ মূল্যায়ন সম্ভব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের একটি অংশ কপিরাইট আইনের মাধ্যমে। এই কপিরাইট আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই প্রত্যেকের অধিকার সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশের মেধাস্বত্ব আইনের অধীনে যে সমস্ত জিনিস মেধাস্বত্বের জন্যে নিবন্ধনের আওতাভুক্ত তা হলো- সাহিত্য, গবেষণাতত্ত্ব, কম্পিউটার সফটওয়্যার, ডাটাবেজ, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেইম, সংগীত, রেকর্ড (অডিও-ভিডিও), ই-মেইল, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, বেতার ও টেলিভিশন সম্প্রচার, চলচ্চিত্র, নাটক, কার্টুন, অ্যানিমেশান, বিজ্ঞাপন (ভিডিও, অডিও, পোস্টার, বিলবোর্ডসহ অন্যান্য), অনুবাদকর্ম, বাংলা ডাবিংকৃত (বিদেশি চলচ্চিত্র, নাটক, কার্টুন, অ্যানিমেশান), স্লোগান, থিম সং, ফেসবুক ফ্যান পেইজ স্থাপত্য নকশা, চার্ট, ফটোগ্রাফ, স্কেচ, ভাস্কর্য, পেইন্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম এবং লোক সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি ইত্যাদি।

কপিরাইট দ্বারা মেধাসম্পদের ওপর প্রণেতার নৈতিক ও আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ওই সম্পদ পুনরুৎপাদন, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ, লাইসেন্স প্রদান এবং জনসমক্ষে প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে মূল প্রণেতা ব্যক্তি একচ্ছত্র অধিকার লাভ করেন। মেধাসম্পদের আইনগত স্বীকৃতি প্রদান, উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা নিশ্চিতকরণ এবং এই আধুনিক যুগে

পাইরেসি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কপিরাইট সংরক্ষণ, রয়্যালটি আদায় এবং ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন থেকে ট্রান্সমিশন এবং রিট্রান্সমিশন সঠিকভাবে নিশ্চিতকরণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সমগ্র বিশ্বে সমালোচনার বিষয় এখন ডিজিটাল মিডিয়া এবং ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন। কপিরাইট সুরক্ষিত কনটেন্ট ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি কপিরাইট স্বত্বাধিকারী লেখক, খবর পরিবেশক, গীতিকার, সুরকার, প্রোডিউসারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি এবং লাইসেন্সিংয়ের চর্চা সিএমওর মাধ্যমে কার্যকরকরণ কপিরাইট স্বত্বাধিকারীদের জন্য ব্যাপক সুবিধা করে তুলছে। কিন্তু প্রতিটি কপিরাইট কর্মক্ষেত্রে একটি করে সিএমও কাজ করে থাকেন, যার মনিটরিং করে থাকে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত বছরের শেষ দিকে কপিরাইট আইন, ২০২১-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে কপিরাইট-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন, অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামের স্বত্বাধিকারী, ডাটাবেজ, নৈতিক অধিকার, পাবলিক ডোমেইন, ফটোগ্রাফ প্রোডিউসার, লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ সম্প্রচার বন্ধে কপিরাইট রেজিস্ট্রারকে অবহিত করলে তিনি সেটি বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এ আইনের ৮০, ৯৩ ও ৯৪ ধারায়। এসব বিষয় কপিরাইট আইন, ২০০০-এ ছিল না।

মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস (টিটিও) খোলার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের উদ্ভাবনী মেধাস্বত্ব সুরক্ষার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-গবেষকদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ লক্ষ্যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দফতরে একজন ফোকাল পয়েন্ট থাকবেন, যিনি মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, লালন ও প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণে মেধাস্বত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা করার ক্ষেত্রে গবেষণার বাণিজ্যিকীকরণ ও নতুনত্ব আছে কিনা, সেসব বিষয়ে নজর রাখা এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশের আগে মেধাস্বত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের অনেক গবেষক মেধাস্বত্ব বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে মেধাস্বত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এই উদ্যোগ তরুণ গবেষকদের উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে। মেধাস্বত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তকে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলেও দাবি উঠেছে।

ভৌগোলিক পণ্য নির্দেশক (জিআই পণ্য) হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশ তার দেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যকে নিবন্ধন করে যা কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার (শহর বা দেশ) পণ্যের পরিচিতি বহন করে। জিআইএর ফলে ঐ পন্যটি যেমন ব্র্যান্ডিং পায়, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে সেই পণ্যের মূল্যও বাড়ে। বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য জিআইয়ের

নিবন্ধন পেলে দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটি পণ্যের ব্র্যান্ডিং পাবো।

ঐতিহ্যগতভাবে জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। দেশে-বিদেশে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও রয়েছে। এত কিছুর পরও ভারতের অন্ধ প্রদেশ ২০০৯ সালে জামদানিকে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে। এর নাম দিয়েছে ‘উপাদ্দা জামদানি’। 

ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হলেও দীর্ঘ সময় ধরে জিআই আইন না থাকায় এ দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের মালিকানা সুরক্ষার সুযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ নিয়ে কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন এবং ২০১৫ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য

(নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিধিমালা প্রণয়ন করার পরই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য নিবন্ধনের পথ সুগম হয়। জামদানি ও ইলিশের পর বাংলাদেশের তৃতীয় পণ্য হিসেবে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম’ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সাফল্যের পরে বাংলাদেশ সুন্দরবন থেকে ফজলি আম, ল্যাংড়া আম, কাটারিভোগ চাল, কালিজিরা চাল এবং মধুসহ আরও অনেক পণ্যের জন্য ভৌগোলিক সূচকের (জিআই) আবেদন এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মেধাস্বত্ব থেকে বঞ্চিত হলে জীবনধারণ কতটা কঠিন হতে পারে, সেটার উদাহরণ দেশের অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক। অনেকেরই জীবনসংগ্রামের কথা আমরা জানি। ‘মাসুদ রানা’ও ‘কুয়াশা’সিরিজ নিয়ে মামলায় লেখক শেখ আবদুল হাকিমও নিজের আর্থিক অনটনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সঠিক সময়ে আইন অনুযায়ী সৃষ্টিশীল কাজগুলো নিবন্ধিত হওয়া এই

অঙ্গনের পেশাদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সবার সচেতনতা দরকার। দেশে সৃজনশীল কাজগুলোর কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে তরুণদের ভূমিকা বেড়েছে। সৃজনশীল কাজের উদ্ভাবক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই এখন বেশি। মেধাসত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিছু কার্যক্রম থাকলেও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরো নিবিড় উদ্যোগ নিতে হবে। কপিরাইট আইন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। তাই পেশাদার সৃষ্টিশীল ব্যক্তিরাও নিজেদের স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে সচেতন হবেন ও ঐকবদ্ধ থাকলে সৃষ্টির উন্মাদনা ।

লেখক- সিনিয়র তথ্য অফিসার তথ্য অধিদপ্তরে। - পিআইডি ফিচার