News update
  • Google fires 28 workers protesting contract with Israel     |     
  • US vetoes widely backed resolution on Palestine as UN member      |     
  • Dhaka’s air quality remains ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • India starts voting in the world's largest election      |     
  • Iran fires air defense batteries in provinces      |     

অধিকৃত এলাকায় গণভোটের মাধ্যমে পুতিন কী করতে চান

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2022-09-24, 8:07am

img_20220924_080740-79f33f18b1ca7441cf27ff84c182166e1663985274.png




ইউক্রেনের চারটি অধিকৃত অঞ্চলের রুশ সমর্থনপুষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ থেকে সেখানে গণভোট শুরু করেছে রুশ ফেডারেশনে যোগ দেয়ার প্রশ্নে।

ইউক্রেন বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমর্থনে আয়োজন করা এই গণভোটের কোন আইনি ভিত্তি নেই।

দনিয়েৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনে আয়োজন করা এই গণভোটকে পশ্চিমা দেশগুলোও অবৈধ বলে বর্ণনা করেছে। ইউক্রেনের এসব অঞ্চলকে যাতে রাশিয়ার সীমানা-ভুক্ত করা যায়, সেই লক্ষ্যেই এই গণভোট বলে মনে করা হচ্ছে।

গণভোট হবে পাঁচ দিন ধরে, যদিও ইউক্রেনের পূর্বে এবং দক্ষিণে এই চারটি অঞ্চল ঘিরেই যুদ্ধ অব্যাহত আছে।

রাশিয়া যদি এই অঞ্চলগুলো তাদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, তখন তারা বলতে পারবে যে, ইউক্রেনকে দেয়া পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এতে করে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

কী ঘটছে এবং এখন কেন এই গণভোট

রাশিয়া সাত মাস আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন এখন পাল্টা আক্রমণের মুখে আছেন।

ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে, তাতে তারা সাফল্য পেয়েছে। রাশিয়া ২৪শে ফেব্রুয়ারি অভিযান শুরু করার পর যেসব অঞ্চল দখল করেছিল, তার অনেক অংশ এখন ইউক্রেন পুনর্দখল করে নিয়েছে।

ক্রেমলিন এই যুদ্ধকে নতুন আঙ্গিকে পরিচালনার জন্য এখন যে তিনটি পরিকল্পনা নিয়েছে, অধিকৃত অঞ্চলে গণভোট তার একটি।

স্বাধীন ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ এলাকা রাশিয়া যদি নিজ দেশের সীমানাভুক্ত করতে পারে, তখন মস্কো দাবি করতে পারবে যে, ইউক্রেনকে দেয়া নেটো জোট এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

এদিকে রাশিয়া আরো তিন লাখ বাড়তি সৈন্যকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তলব করেছে। রাশিয়া তাদের এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রণক্ষেত্র প্রতিরক্ষায় এদের মোতায়েন করতে পারবে।

যুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত সৈন্য সংগ্রহের এই সময়কালে রাশিয়ায় সামরিক বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, আত্মসমর্পণ বা বিনা ছুটিতে কাজে অনুপস্থিত থাকা- এগুলো ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে।

রাশিয়ার নেতা অন্য দেশের ভূমি দখল করে নিজ দেশের সীমানাভুক্ত করছেন, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। এর আগে ২০১৪ সালে যখন তিনি ক্রাইমিয়া দখলের জন্য তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন, তখনো তিনি সেখানে এরকম গণভোটের আয়োজন করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্য তখনো এই গণভোটকে 'সাজানো খেলা' বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

চারটি অধিকৃত অঞ্চলে সর্বশেষ এই গণভোটকেও একইভাবে অবৈধ বলে নিন্দা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এদের মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপ 'ওএসসিই।' রুশ গণমাধ্যম বলছে, গণভোটে যে 'হ্যাঁ' জয়ী হবে, তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই।

ইউক্রেনের পূর্বদিকের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল লুহানস্ক এবং দনিয়েৎস্কে এবং দক্ষিণের খেরসন এবং জাপোরিঝিয়ার অধিকৃত অংশে পাঁচদিন ধরে এই গণভোট হবে।

এই গণভোটকে কেন পাতানো বলে বর্ণনা করা হচ্ছে

রাশিয়া ২০১৪ সালে কীভাবে ক্রাইমিয়াকে গ্রাস করে নিজ দেশের ভেতর ঢুকিয়েছিল, তা আমরা দেখেছি। গণভোটে রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল বলে দাবি করেছিল ক্রেমলিন। তবে রাশিয়ার হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের এক ফাঁস হওয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, আসলে মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিল, এবং কোন রকমে এর অর্ধেক ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল।

গণভোটের সময় ক্রাইমিয়ায় একটি গুলিও কিন্তু করা হয়নি। কিন্তু এবারের গণভোট হচ্ছে একটা যুদ্ধের মাঝে।

যে চারটি অঞ্চলে ভোট হচ্ছে সেগুলো হয় পুরোপুরি বা অংশত রুশদের দখলে। দক্ষিণের খেরসন এখন মোটেই কোন নিরাপদ এলাকা নয়। সেখানে ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে তা ঠেকাতে রুশ সৈন্যরা হিমসিম খাচ্ছে। মাত্র গত সপ্তাহেই খেরসনের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

সেখানে নিরাপদে গণভোট করা রীতিমত অসম্ভব, কিন্তু তারপরও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ ভোটের জন্য নিবন্ধন করেছে। ইউক্রেনের আরেকটি অঞ্চল মিকোলাইভকেও খেরসনের সীমানাভুক্ত করার পরিকল্পনা হচ্ছে, যাতে পুরোটাই রাশিয়ার অংশ করা যায়।

রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নির্বাচনী কর্মকর্তারা গণভোটের সময় ব্যালট বাক্স নিয়ে শুক্রবার হতে সোমবার পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন। ভোট কেন্দ্র খোলা হবে কেবল পঞ্চম দিনে, ২৭ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনী কর্মকর্তারা এজন্য নিরাপত্তার বিষয়টি কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

সেদিন শত শত ভোট কেন্দ্র খোলার কথা রয়েছে, তবে ভোটাররা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের বাইরে থেকেও ভোট দিতে পারবেন। রাশিয়ায় আছেন যেসব শরণার্থী, তারাও ভোট দেয়ার উপযুক্ত।

এদিকে জাপোরিঝিয়ার রাজধানী এখন পুরোপুরি ইউক্রেনিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে। কাজেই সেই অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অংশ করার জন্য গণভোট কীভাবে করা হবে, তা বোঝা মুশকিল।

ইউক্রেনের পূর্বদিকের দনিয়েৎস্কের মাত্র ৬০ শতাংশ রাশিয়ার দখলে এবং সেখানে এখনো তীব্র লড়াই চলছে। লুহানস্কের বেশিরভাগ অবশ্য রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানে তারা কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে। রুশ বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে কিছু লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে, যাতে বলা হচ্ছে, 'রাশিয়াই এখন ভবিষ্যৎ।'

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সেখানে যারা ছিল, তাদের অনেকেই পালিয়ে গেছে। রাশিয়া যখন অভিযান শুরু করে, তার আগে দনিয়েৎস্ক আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের মস্কোপন্থী প্রধান ডেনিস পুশিলিন পুরো অঞ্চল থেকে গণহারে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

রুশ সমর্থনপুষ্ট নেতারা কয়েক মাস ধরেই বেশ উদগ্রীব ছিলেন তাদের অঞ্চলে গণভোট করার জন্য। কিন্তু মাত্র তিন দিনের নোটিশে যে গণভোট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তাতে বোঝা যায়, তারা বেশ মরিয়া।

এই ভোটের সময় সেখানে কোন স্বাধীন পর্যবেক্ষক দল থাকবে না। বেশিরভাগ ভোট নেয়া হবে অনলাইনে, যদিও কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে ভোট কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কী পরিবর্তন হবে?

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউরি স্যাক বিবিসিকে বলেন, এই তথাকথিত গণভোট হবে সর্বনাশা। "আমরা দেখছি, স্থানীয় লোকজন ইউক্রেনে ফিরে আসার পক্ষে, এবং সেজন্যেই এসব এলাকায় আমরা এত গেরিলা প্রতিরোধ দেখছি," বলছেন তিনি।

তবে যাই ঘটুক, ইউক্রেনের সরকার বলছে, কোন কিছুই আসলে বদলাবে না এবং তাদের বাহিনী এসব অঞ্চলকে মুক্ত করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।

রাশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার বাউনভ বলেন, অধিকৃত অঞ্চলকে রুশ অঞ্চল বললেই তো আর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ঠেকানো যাবে না, তবে এর মাধ্যমে হয়তো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্থানীয় জনগণের কাছে একটা বার্তা পাঠানো যাবে।

ক্রেমলিন আশা করছে, মস্কো যে এলাকাকে নিজেদের দেশের সীমানা বলে ঘোষণা করেছে, সেখানে হয়তো পশ্চিমারা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে দ্বিধায় ভুগবে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন 'রাশিয়াকে রক্ষায়' তার হাতে যত উপায় আছে, তার সবই ব্যবহার করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন, যা বেশ উদ্বেগজনক। তিনি যেন এক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখতে চাইছেন না। রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপ প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেফ স্পষ্ট ভাষাতেই বলেছেন, রাশিয়ার সীমানাভুক্ত করা অঞ্চলগুলো প্রতিরক্ষায় পরমাণু অস্ত্রও ব্যবহার করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন 'পরিস্থিতি বিপদজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে' বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের আগের অবস্থান পুর্নব্যক্ত করে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের ভূমি যতই নিজের বলে দাবি করুক, সেটি রক্ষার জন্য ইউক্রেনের যে অধিকার, তা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

এমনকি তুরস্ক, যারা এই যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছে, তারাও এই গণভোটকে অবৈধ বলে নিন্দা করেছে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।