Kazi Azizul Huq
Kazi Azizul Huq
০১.
"... জেলজীবন নিয়ে যা বলা দরকার, আমাদের জেলখানা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলের চেয়ে অনেক খারাপ। জেলে পান্না ভাবি আমাকে চিঠি লিখেছিলেন, শক্ত থাকবে! তােমার বড়দাও দু’বছর জেলে ছিলেন। বড়দার কথা ভাববে। আমি চিঠিটা পড়ে খুব হেসেছিলাম। বেরিয়ে এসে পান্না ভাবিকে বললাম, বড়দারা পাকিস্তান আমলে জেলে ছিলেন, রাজার হালে ছিলেন। সকালের খাবার কী খাবেন আগের দিন রাতে এসে জেনে যেত। দুপুরের মেন্যু কী হবে, ডিনারের মেন্যু কী হবে, এগুলাে আগের বেলা এসে জেনে যেত। তারা জেলে বসে রাজনীতিচর্চা, সাহিত্যচর্চা করেছেন দল বেঁধে। রাজবন্দীদের ব্রিটিশ আমলে, পাকিস্তান আমলে সে মর্যাদা দেয়া হতাে॥"
— শাহরিয়ার কবির / রাঙা মেঘ সাঁতরে যায় (আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকার) ॥ [ সাপ্তাহিক - বর্ষ ০৭, সংখ্যা ২২ (৩০ অক্টোবর, ২০১৪) । পৃ: ১১৮ ]
০২.
“... ১৯৪৮ সাল থেকে সব কমিউনিস্ট কর্মীদের মুসলিম লীগ সরকার গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। মুসলিম লীগ প্রশাসন জানত এই কমিউনিস্টরাই হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধান শত্রু। কারণ তখন পর্যন্ত (আজাদীর বছর না ঘুরতেই) পাকিস্তান সম্পর্কে মোহমুক্তিটা মুসলিম কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়নি। সেটা আওয়ামী লীগের কথাই বলি বা মুসলিম লীগের কথাই বলি।
... তোমরা তো জানো না যে কাজী মোতাহার হোসেন, নাসিরুদ্দীন সাহেব, নুরজাহান বেগম বা রোকনুজ্জামানের মত লোকেরা সাহিত্য সংসদে বিভিন্নভাবে জড়িত থাকলেও এরা মূলত ছিলেন কমিউনিস্টদের লোক। ... মুসলমান শিক্ষকদের মধ্যে কমিউনিস্টদের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলো এমন আরেকটা নাম শহীদুল্লাহ সাহেব অর্থাৎ ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।
... আমাদের পলিসি ছিলো কাউকে hostile না করে বিভিন্ন কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয়া। যেমন ধরো, মুসলিম লীগের নেতা আবুল হাশিম - বন্ধু, মান্যবর। আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। তাকেও আমরা ডিল করেছি কম্যুনিস্টের জায়গা থেকে। পার্টি আমাদেরকে হুকুম করেছে, তোমরা হাশিম সাহেবের কাছে কাছে থাকবা। যা সাহায্য লাগে করবা। এই রকম হুকুমই করা ছিলো। হুকুমের চোটে আবার ধরো দুই একজন নষ্টও হয়ে গেছে। যেমন ধরো শামসুদ্দীন। আবুল হাশিম সাহেবকে সামলানোর জন্য তাকেও পাঠানো হয়েছিলো। সে এমনি সামলায় যে নিজেই পাকিস্তানপন্থী হয়ে যায়। পরে পাকিস্তানেই চলে যায়। সেখানেই মারা যায়।
... এই যে পাকিস্তানিজমের চিন্তাটা, এটা যেহেতু মূল স্রোত একে hostile করে কি হবে? এটা হলো এক ধরণের চিন্তার কাঠামো। এখন এই চিন্তার যে ভ্রান্তি তাকে তো জোর করে কথার মাধ্যমে শেষ করে ফেলা যাবে না। আমাকে তার কাছে যেতে হবে, তাকে ম্যানেজ করে ফেলতে হবে।
... যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলো কম্যুনিস্ট অথবা কম্যুনিস্ট মাইন্ডেড। যদিও মুসলমান পরিবার থেকে আসা কম্যুনিস্টরা নিজেদের কম্যুনিস্ট হিসেবে উল্লেখ করতো না। সমস্যা ছিলো কম্যুনিস্টদের প্রধান সংযোগ ছিলো আওয়ামী লীগের সাথে। ঐ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের প্রধান ভিত্তি ছিলো কম্যুনিস্ট কর্মীরা। কেন যেন ১৯৫৪ পরবর্তী প্রজন্মের যে সব লোক কম্যুনিজম করে তারা এ কথাটা বলার উৎসাহ রাখে না। যদিও তৎকালে কম্যুনিস্টরা আওয়ামী লীগকে জয়ী করার জন্য শ্রম-মেধা ব্যয় করেছে তবুও অন্তত ত্রিশজন গোপন কম্যুনিস্টকে তুমি পাবে যারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরা কম্যুনিস্ট পরিচয় গোপন রাখতেন কিন্তু শেখ মুজিব এদেরকে জানতেন।
... মনে রাখতে হবে, আমরা যে স্বপ্ন দেখতাম সে স্বপ্নের মধ্যে এন্টি-হিউম্যান অর্থে এন্টি-পাকিস্তানী হওয়ার ব্যাপার ছিলো না। Pakistan was also a land of people. আমরা সেজন্য পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টি তৈরি করেছি। আমরা পাকিস্তানে গণতন্ত্র চেয়েছি এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রক্রিয়াটার মধ্যে ডেমোক্রেটিক ইলিমেন্টগুলোকে যুক্ত করতে চেয়েছি। এসব নিয়ে অনেক কথা আছে। যেমন ধরো, মুজিব মণি সিংহকে বলছে — 'দাদা, এবার লাগাইয়া দেই'? মণি সিংহ বলছেন — 'একটু ধৈর্য ধর। অস্থির হয়ো না'। আসলে কম্যুনিস্টরা লং টার্মে চিন্তা করে। তারা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার টার্মে চিন্তা করেনি। সেসব যাই হোক — আমি একটা সময়ে এসে এটাই ভাবছিলাম যে, যা হওয়া উচিত তাই হচ্ছে। পিপল মুভ করছে। দেশ গণঅভ্যুত্থানের পর্যায়ে যাচ্ছে। আসাদকে হত্যার ঘটনা যেদিন ঘটে সেদিন আমি সাংঘাতিকভাবে আলোড়িত হয়েছিলাম॥”
🔶— সরদার ফজলুল করিম / আমি সরদার বলছি ॥ [ অন্বেষা - ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ । পৃ: ৭১/২৫২/২৫৫/২৫৮/২৮১/২৮৮-২৮৯ ]
Mujtoba Khondker