News update
  • 20 Syrian pro-govt forces killed in two IS attacks: monitor     |     
  • Google fires 28 workers protesting contract with Israel     |     
  • US vetoes widely backed resolution on Palestine as UN member      |     
  • Dhaka’s air quality remains ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • India starts voting in the world's largest election      |     

কলাপাড়ার গোলের গুড়ের কদর বাড়ছে দেশজুড়ে

error 2023-01-11, 8:35pm

golfruits-being-collected-to-produce-molasses-4c033af0deba5005b03a4327684e6af31673447707.jpg

Golfruits being collected to produce molasses.



পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রাকৃতিক ভাবে আহরিত গোলের গুড়ের কদর বাড়ছে দেশজুড়ে। গোলের গুড় সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে ক্রমশ। উপজেলার বিস্তীর্ণ লোনা জল ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোল বাগান। গোল গাছের ফল কেটে শ্বাস খেতে তেমন মজাদার তেমনি ডগা কেটে হাড়ি পেতে সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়।মা দিয়ে তৈরি পায়েস কিংবা বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক পিঠা পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে। তবে প্রকৃতির সৃষ্ট গোল বাগান থেকে আহরিত রস কিংবা গুড়ে সুগার কম থাকায় দিনে দিনে দেশজুড়ে এর কদর বেড়েছে কয়েকগুন। 

উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বিস্তৃর্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিচ্ছে গোলগাছ। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও ক্রমশই ধ্বংস করা হচ্ছে বাগান। ফলে বাগানের পাশাপাশি কমছে গাছিদের সংখ্যাও। গোল বাগান বিনষ্টের ফলে গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন অনেক গাছিরাও করেছেন পেশার পরিবর্তন। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে বাগান রক্ষা ও নদীর তীর কিংবা লোনা জলাশায়ে গোল বনায়নের দাবী গোলচাষী এবং গাছিদের। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাগান থেকেই বছরের প্রায় ৪ মাস সময় ধরে দুই দশক যাবৎ রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরীর মাধ্যমে জীবন জীবিকা চলছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের। শীতের শুরুতেই বিকালে গাছের ডগা কেটে হাড়ি পাতেন গাছিরা। রাতভর হাড়িতে জমা রস কাকডাকা ভোরে সংগ্রহ করেন তারা। পরে চাতালে জ্বাল দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তৈরী করা হয় গুড়। আর এসব গুড় গাছিরা বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে দুই’শ টাকা কেজি দরে। বিশেষ করে রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে লবনাক্ত এই গুড়ের চাহিদা অনেক।

পৌর শহরের অধিবাসী ডায়াবেটিস আক্রান্ত নাসির উদ্দিন জানান, আমার ডায়াবেটিসের জন্য সব ধরনের মিষ্টি খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন চিকিৎসক। তবে লবনাক্ত গোল গুড়ে সুগার কম থাকায় অমি মাঝে মধ্যেই গোলের গুড় সীমিত খেতে পারি। আমার তাতে সমস্যা হয়না। 

এদিকে এই গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাগান কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত রস সংগ্রহ করতে পারছেন না গাছিরা । এছাড়া বাগান ধ্বংসের ফলে রোজগার কমে যাওয়ায় পেশার পরিবর্তন করছেন অনেকে। গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গোলগাছ সংরক্ষনের দাবি কৃষি বিভাগেরও।

নীলগঞ্জ ইউপির নবীপুর গ্রামের গাছি পরিমল হাওলাদার (৬৫) জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ, তেগাছিয়া,নবীপুর গ্রামের ২৫ জন কৃষক এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে আসেন গুড়ের জন্য। কিন্তু ক্রমাগত বাগান ধংসের ফলে এখন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা। তার দাবি বেড়িবাঁধের বাহিরে সরকারি খাস জমিতে গোল গাছ লাগিয়ে আমাদের দ্বায়িত্ব দিলে রক্ষনাবেক্ষন সহ এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারতাম। 

একই গ্রামের ৯০ বছর বয়সী শিখা রানী জানান, ৭০ বছর ধরে এই কাজ করছি। শুরুতে প্রতি ১০ থেকে ১৫ কলস রস পেতাম। এখন ৮ কলস পাই মাঝখানে বন্যার কারণে বাহড়ে ছড়া কম হতো এখন আবার হচ্ছে। 

নবীপুর গ্রামের গাছি হরি নারায়ন মিত্র (৮৫) জানান, তার পূর্ব পুরুষ থেকে প্রায় ১৫০ বছর ধরে এই পেশায় নির্ভরশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন।  এই গাছির স্ত্রী পারুল মিত্র (৭০) বলেন, স্বামীর সাথে দীর্ঘ  কয়েক যুগ ধরে গুড় তৈরিতে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যোগান দিয়ে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে গোল গাছের সঙ্কটে তাদের পেশা প্রায় পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, এর আগে আমার ছেলে মেয়ে ও পুত্রবধুও এই কাজে সংশ্লিষ্ট ছিল। তারা এখন পেশার পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন। 

একাধিক গোল  গাজির বক্তব্য, প্রকৃতি রক্ষা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বনায়নের পাশাপাশি গোলগাছ সংরক্ষনের কোন বিকল্প নেই। খুব দ্রুতই সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআর সাইফুল্লাহ জানান, গোলগাছ মানুষের ঘরনির্মাণসহ প্রকৃতি রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গুড় থেকে বিশাল একটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি হাজারো মানুষ এর উপর নিভর্রশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে। এমনকি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ সহনশীল পরিমানে গোলগুড় খেতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। গোলবাগান রক্ষায় আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। যাতে বাগান রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোলবন সংরক্ষনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদী তীরসহ লোনা জলভ ভূমিতে গোলচারা রোপন করা হবে। - গোফরান পলাশ