News update
  • Heatstroke kills 30 in Thailand this year as kingdom bakes     |     
  • 160 pilot whales beach on Australian west coast, 26 die     |     
  • 282 million people faced acute hunger in 2023, worst in Gaza      |     
  • Weapons to be laid down if a 2-state solution is done: Hamas     |     
  • 3 new BD Supreme Court Appellate Division judges take oath     |     

‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ আসলে কী? আইনে কী ব্যাখ্যা আছে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক error 2023-04-01, 9:53am

b1c17b50-cfde-11ed-ba9d-71654b9d137a-946e6c0a59d0d2e6c7d008fbeba545cb1680321210.jpg




বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ বা বিনষ্ট করার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও জেলা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আইনের এই বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে।

বিভিন্ন সময় ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’র অভিযোগে মামলা হলেও এ বিষয়টি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়, বা এর তেমন কোন আইনগত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর কোন নিষ্পত্তি হয় না। তাদের মতে, ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’র বিষয়টির আইনি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকার কারণে এটি আসলে বিভিন্ন সময় হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও স্বীকার করেছেন যে, অনেক সময় হয়রানির উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে মামলার শিকার হয়ে থাকেন। তবে সরকার এই অভিযোগে কোন মামলা গ্রহণ করলে সেটি হয়রানিমূলক নয় বলেও জানান মন্ত্রী।

বাংলাদেশে সবশেষ, প্রথম আলোর সম্পাদক, পত্রিকাটির সাভারে নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরা পারসন এবং অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা অভিযোগে বলা হয়েছে যে, তারা ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বিনষ্টের হীন উদ্দেশ্যে’ অনলাইন মাধ্যমে অপপ্রচার করেছেন।

কী আছে আইনে?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ২৫ ধারার এক উপধারার (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন,-তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

এ ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

তবে এই আইনে যেসব বিষয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’র বিষয়টি নেই। অর্থাৎ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বলতে কি বোঝোনো হয় বা কী কী কাজ করলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে তার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

এর আগে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল সংসদে উত্থাপনের পর মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে এই আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছিলো যে, “নতুন আইনটি অনেকগুলো নতুন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছে, নিশ্চিতভাবে যেগুলো ভবিষ্যতে দেশটির অতিমাত্রায় রাজনৈতিকীকৃত ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।”

সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্ট্রাডিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এর আগের ১১ মাসে প্রতি মাসে অন্তত ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং প্রতি মাসে অন্তত ৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’র ব্যাখ্যা

বাংলাদেশে শুধুমাত্র ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই রাষ্ট্রের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’র বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। দেশে প্রচলিত আর কোন আইনে এর উল্লেখ নেই বলে জানান আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, বড়দাগে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো আজ থেকে একশ বা দেড়শ বছর আগে। পরে এই বিষয়টির ব্যাপক অপব্যবহার শুরু হলে সব দেশের আইন থেকেই এই শব্দগুলো বাদ দেয়া হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আগে আমাদের দেশের কোন আইনেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের বিষয়টি ছিল না বলেও জানান তিনি।

“এটি এখন আমাদের আইনে এসছে এবং ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে,” বলেন তিনি।

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’র কথা বলা হচ্ছে।

“দেশের সম্পর্কে যে তথ্য সত্য নয়, এরকম একটা খবর প্রকাশ করে দেশকে হেয় করা হয়, মানে হচ্ছে সারা পৃথিবীতে বা জনগণের কাছে দেশটার যা পজিশন(অবস্থান) তার থেকে যদি আরো নিচের দিকে দেখানো হয়।”

উদাহরণ হিসেবে আইনমন্ত্রী বলেন, “ধরেন, একটা দেশ গরীব না। তাকে বলা হলো গরীব বা দুর্দশাপূর্ণ- এই মিথ্যা তথ্যে এই খবরটা দেওয়াকেই দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় এবং সেটাই বলছি যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।”

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলা হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অনেক ব্যক্তি হয়তো হয়রানিমূলক মামলায় পড়তে পারেন। তবে এই মামলাগুলো শুধু হয়রানিমূলক হয় বললে সেটা ঠিক হবে না, আবার হয়রানিমূলক নয়, সেটা বলাটাও ঠিক হবে না।

“কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই দেখা গেছে যে, সরকার যখন এই সব ব্যাপারে মামলা গ্রহণ করে তখন সেগুলো হয়রানিমূলক হয় না,” বলেন তিনি।

বিচার কতটা হয়?

বাংলাদেশের একটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজের ২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ১৫০০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। এই দুটি মামলার মধ্যে একটি আনা হয়েছিল পুলিশের বিরুদ্ধে।

তবে দুটি মামলাতেই অভিযুক্তদের খালাস দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রাজনীতিবিদ। আর তাদের পরেই রয়েছে সাংবাদিক। আর যারা এসব মামলা দায়ের করেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে মূল ক্ষতিগ্রস্ত নন। এদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট।

বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের’ অভিযোগে যে মামলাগুলো হয়, এখনো পর্যন্ত এমন কোন মামলার বিচার শেষ হওয়ার নজীর নেই।

বরং এসব মামলা নিম্ন আদালতের গণ্ডি কখনোই পেরোয় না। শুনানি পর্যন্তই এগুলো আটকে থাকে বলে জানান মি. মতিন।

“ফাইল(মামলা) হচ্ছে শুনি, কিন্তু ডিসপোজাল(নিষ্পত্তি) হচ্ছে বলে জানি না।”

তিনি বলেন, “এগুলো পড়ে থাকছে, অভিজ্ঞতা সেটাই বলে।”

সাবেক বিচারপতি মি. মতিন বলেন, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অবশ্যই জরুরী। কিন্তু বাক স্বাধীনতার বিষয়টিও মাথায় রেখে একটা সমীকরণ রাখতে হবে যে, কী করলে সেটা ভাবমূর্তি নষ্টের দিকে যাবে না। এটা সামঞ্জস্য করার জন্যই আইন তৈরি করা হয়।

কিন্তু এই আইন যখন অপব্যবহার করা হয় তখন মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয় যা সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত। আর মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তা পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বলে মনে করেন মি. মতিন। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।