News update
  • Dhaka seeks global pressure on Myanmar for lasting peace     |     
  • BSEC Chairman’s resignation urged to stabilise stock market     |     
  • Rain, thundershowers likely over 8 divisions: BMD     |     
  • First freight train leaves Mongla carrying molasses     |     
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     

দেশে না বিদেশে, বেনজীরের অবস্থান নিয়ে এত ধোঁয়াশা কেন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-06-06, 8:14am

eoirueoruoqier-bb8af94208e36445ce7d124e474c92171717640099.jpg




দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকে নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক এবং বেশ কিছু সম্পত্তি জব্দও করা হয়েছে।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে যখন এই অনুসন্ধান চলছে, তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে, গোপনে দেশে ছেড়েছেন সাবেক এই পুলিশ কর্তা।

কিন্তু তিনি কোথায় আছেন আর কীভাবেই বা দেশ ছেড়েছেন সেটি নিয়ে নানা প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না।

তিনি আসলেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কি না, গেলে কোথায় গিয়েছেন, সেই বিষয়ে বা তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ খোলাসা করে কিছু বলছেন না।

প্রশ্ন হচ্ছে, যখন তার অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তখন কি তিনি দেশ ছাড়তে পারেন? সরকার কেনই বা তার অবস্থানের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য জানাতে পারছে না?

কোথায় আছেন বেনজীর আহমেদ?

বেনজীর আহমেদের দেশ ছেড়েছেন নাকি দেশেই আছেন সেটি নিয়ে নানা কানাঘুষা আছে। কিন্তু এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ বলছেন না।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছে, গত চৌঠা মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক এই পুলিশ কর্তা। একই সাথে দেশ ছেড়েছেন তার তিন মেয়ে ও স্ত্রী।

কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবর বলছে, বেনজীর আহমেদ সিঙ্গাপুর আছেন। কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বর্তমান অবস্থান দুবাইয়ে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে তুরস্কে নিজের কেনা বাড়িতে আছেন সাবেক এই পুলিশ মহাপরিদর্শক।

এত সব খবরের ভিড়ে এখনো পর্যন্ত ধোঁয়াশা রয়েই গেছে তার অবস্থান নিয়ে।

গণমাধ্যমগুলোর কোনো কোনোটি আবার বলছে, দেশেই আছেন বেনজীর আহমেদ।

এমন অবস্থায় বুধবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সাবেক আইজিপির বর্তমান অবস্থান কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা তিনি নিজেও শুনেছেন। তবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেন না তিনি।

স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, “আমি এখনও সুনিশ্চিত নই যে সে আসলে কোথায় দিয়েছে। আমি শুনছি তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন”।

“আমার আশা তিনি হয়তো ফিরে আসবেন। তিনি এসে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ আছে তার সেগুলো ফেস করবেন,” বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুদকের আইনজীবী মি. খান বুধবার সুপ্রীম কোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, “গণমাধ্যম যেভাবে প্রেডিক্ট করছে উনি তুরস্কে, আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক সেটি প্রেডিক্ট করতে পারে না। কারণ আগাম প্রেডিক্ট করার সুযোগ আইন দুদককে দেয়নি”।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, এখন এই বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চান না।

অনুসন্ধান চলাকালে দেশ ছাড়া যায়?

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিশাল বিত্ত-বৈভব নিয়ে গত ৩১শে মার্চ প্রথম প্রকাশ করে দেশের একটি সংবাদপত্র। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সম্পদ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়।

যেসব খবরে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এসব অভিযোগর প্রেক্ষিতে তথ্য যাচাই বাছাই করে গত ১৮ই এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

এর দু’দিন পরে গত ২০ এপ্রিল ভিডিও বার্তায় মি. আহমেদ দাবি করেন তিনি ও তার পরিবারের নামে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা মিথ্যা ও অসত্য।

গত ২৩শে মে মি. আহমেদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের করার আদেশ দেন আদালত।

এরপর সাবেক পুলিশ প্রধান ও তার পরিবারের অঢেল সম্পত্তি অর্জনের নানা খবর আসতে থাকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে।

অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলাকালে তিনি দেশ ছাড়তে পারেন কি না এমন প্রশ্ন সামনে আসার পর বুধবার এ নিয়ে জবাবও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেছেন, “আদালত থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি যে সে বিদেশে যেতে পারবে না। কারো ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা না থাকে তাহলে তো দেশ ছাড়তে বাধা থাকার কথা না”।

তাহলে কারো বিরুদ্ধে তদন্ত বা অনুসন্ধান চলাকালে দেশের বাইরে যাওয়ার আইনি প্রক্রিয়া কী?

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “অনুসন্ধানে দুদক কি পেয়েছে বা কী পায়নি সেটা এখনো নিশ্চিত না। এই অভিযোগের একটা প্রাইমারি গ্রাউন্ড যদি না থাকে তাহলে তো মুভমেন্ট বন্ধ করতে বাধা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক”।

যদিও দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা-টিআইবি তার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের সাথে আঁতাতের অংশ কি না সেই প্রশ্ন তুলেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মি. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এমন আলোচিত একটি ঘটনার তদন্ত শুরুর আগেই পালিয়ে গেলে সেটিকে খুব সহজভাবে মেনে নেয়ার সুযোগ নেই”।

তিনি বলেন, “তার মতো একজন সুপরিচিত ব্যক্তি গোপনে পালিয়ে যাবে, দেশত্যাগ করবে আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চিনবে না? সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে না? এটাকে খুব সহজে মেনে নেয়ার সুযোগ নেই”।

বৃহস্পতিবার হাজির হবেন দুদকে?

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর পর দুদকের কাছে একের পর এক তার সম্পত্তির নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ই জুন বৃহস্পতিবার মি আহমেদকে এবং ৯ই জুন তার স্ত্রী জীশান মির্জাসহ সন্তানদের দুদক তলব করেছে।

একই সাথে মি. আহমেদের দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদের বিষয়টি নিয়েও অনুসন্ধান করছে।

দুদক বলছে, অনুসন্ধান কার্যক্রমের প্রক্রিয়া হিসেবে মি. আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে ডাকা হয়েছে।

বুধবার দুদকের আইনজীবী মি. খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে অফিসিয়াল কোনো রেকর্ড নাই যে উনি বিদেশ চলে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে সুযোগ দিয়েছে। আমরা মনে করি উনি সুযোগটা গ্রহণ করবেন। তিনি যেখানেই থাকুক দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন”।

তবে বুধবার দুদকের কমিশনার জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ''আমি শুনেছি, দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাকে সময় দেওয়া হবে।''

এর আগে তিনি মঙ্গলবার বলেছিলেন, দুদক কাউকে নোটিশ পাঠালে তিনি আসতে বাধ্য কি না, আইনে এমন কিছু বলা নেই। কেউ হাজির না হলে ধরে নেয়া হবে তার কোন বক্তব্য নেই। তবে তারা দুদকের কাছে সময় চাইতে পারে। এক্ষেত্রে দুদক ১৫ দিন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিতে পারে।

বেনজীর আহমেদর একের পর এক সম্পত্তির খোঁজ মিললেও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না সেটি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী মি. খান বলেন, “এখনো অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে মামলা করা যায় না। আমরা যে তথ্য উপাত্তগুলো পেয়েছি সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আরো সম্পদ মিললে সেগুলোও জব্দ করা হবে”।

দায় নিয়ে বিতর্ক যে কারণে

বেনজীর আহমেদ যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনে তার নানা বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে।

দায়িত্ব ছাড়ার পর মি. আহমেদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিও রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।

বিরোধী দল বিএনপি বলছে, মি. আহমেদের দুর্নীতি দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ তিনি ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ও পদে থেকেই এই দুর্নীতি করেছেন।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বেনজীরের ভয়াবহ দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সরকারই তাকে বাঁচাতে গোপনে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে”।

তবে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এখন সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন? কী মনে হয় সরকার জেনেও গোপন করেছে? বেনজীর আহমেদ দেশের বাইরে থাকেও তার বিরুদ্ধে বিচার চলবে”।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দায় সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মি. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ক্ষমতায় থেকে তিনি যে অপরাধ করেছেন সেটি তো তিনি এককভাবে করেন নাই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত থেকে করেছেন বলেই দায় নিতে হবে, সেই সাথে জবাবদিহিতার দায়টাও সরকারের”।

তবে ভিন্ন মত দিয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মি. হুদা।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সাধারণত ক্রিমিনাল ল’ অনুযায়ী অপরাধ যিনি করেন দায় তারই থাকে। যার এটা তদারকি করার উচিত ছিল সে যদি ফেইল করে তাহলে তারও একই ধরনের অপরাধে অপরাধী হতে হবে”। বিবিসি বাংলা