News update
  • 'So hot you can't breathe': Extreme heat hits the Philippines     |     
  • PM Hasina departs for Thailand on six-day official visit     |     
  • Prolonged heat wave: Mango farmers in Rajshahi region alarmed     |     
  • Probe mass graves found at 2 Gaza hospitals Israel raided: UN      |     
  • Venezuela expels 10,000 from illegal gold mine, now closed     |     

চট্টগ্রামে হিজড়া সেজে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ২ মাদক ব্যবসায়ী ছিনতাই, এক নারীর মৃত্যু

খবর 2022-11-20, 3:13pm

two-drug-traders-snatched-from-police-op-in-chittagong-b34e227852febf954b5995ad7419b4e21668935586.jpg

Two drug traders snatched from Police OP in Chittagong



চট্টগ্রাম 20 শে নভেম্বর - চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ার নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করার জেরে আসামী ছিনিয়ে নিতে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তদের একটি দল। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায়  (১৯ নভেম্বর) এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আহত এক নারীর মৃত্যু খবর জানা গেছে।

হানিফ মধ্যম মোহরা ৮ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন লোকমান সওদাগরের ছেলে। দেলোয়ারের পুরো পরিচয় জানা যায়নি।

জানা যায়,  পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ার  নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে কালুরঘাট  পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয়। পরে তাকে ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিতে বেশকিছু যুবক  হিজড়া সেজে  কালুরঘাট পুলিশ  ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে ছিনতাই করে নিয়ে যায়৷ এসময়  হামলায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়। এঘটনা  নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল হোসেন।

তিনি জানান, ' মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হামলা  হয়েছে  পুলিশ ফাঁড়িতে। এই ঘটনায় আহত এক নারীর মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে চমেক হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাওয়া যায় নি। হামলার ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য  আহত হয়েছেন।  হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া আসামীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।  '

স্থানীয়রা জানান, হামলার ঘটনায় নাজমা  আক্তার (৩০) নামের এক মহিলা মারাত্মকভাবে  আহত হলে তাকে  চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় । চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীন। 

সুত্রমতে, হিজরাদের একটি দলকে কাজে লাগিয়ে কালুরঘাট এলাকার এক প্রতাপশালী বালু ব্যবসায়ী ড্রেজিং এবং বালুর মহাল ইজারার আড়ালে দীর্ঘদিন  মাদকের রমরমা বাণিজ্য করে আসছে । স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্কের কারণে কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশের  ওই বালুর মহালকে নদীপথে ইয়াবা পাচারের ঘাট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চক্রটি।  কালুরঘাট বোয়ালখালী এলাকায় দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই বালু সিন্ডিকেটটি।

কিছুদিন আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভে আমরিন এন্ড ব্রাদার্সের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মনসুর আলম পাপ্পি ওই বালুর মহালকে ঘিরে 'ইয়াবা'সহ নানা অবৈধ ব্যবসা  ব্যবসার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনিও  'রেলওয়ে মুরিং ঘাট' নামের বালুর মহালের স্বর্ত্বাধিকারী।

ফেসবুক লাইভে পাপ্পি অভিযোগ করেন, উনি (বালু মহালের মালিক মোহাম্মদ আলম  ববি) এমন একটা সিস্টেম করছে কর্ণফুলী নদীতে উনার ড্রেজার ছাড়া আর কারো ড্রেজার চলবে না। সরকারের কোন অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে ড্রগ ইয়ার্ড। কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে রেলওয়ে থেকে ইজারা নেয়া 'রেলওয়ে মুরিং ঘাট' নামে পরিচিত। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে এটা টেন্ডার হয়। ওই মুরিং ঘাটের মধ্যে শুধু একটি অনুমোদন থাকবে, মানুষ চলাচল করবে। ওই জায়গায় বালু ব্যবসার কোন অনুমতি সরকারিভাবে নাই। কিসের ওই শক্তিতে,  তিনি এত বড়,  দিন দুপুরে কালুরঘাট সেতু দিয়ে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত এই এই ব্যবসা পরিচালনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভাল জানেন। '

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ার  নামের দুইজনকে আটকের জের ধরে  হিজড়া সাজিয়ে বেশ কিছু যুবককে দিয়ে হামলা  চালানো কালুরঘাট  পুলিশ ফাঁড়িতে। এসময় রেলওয়ে মুরিং  বালির মহাল থেকে বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশের  একটি অনুমোদিত মাওয়া ডগ ইয়ার্ড, মাওয়া বাগানবাড়ি ও মুরিং ঘাট নামের একটি  বালির মহালে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের আঁখড়া গড়ে তোলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ পরিচয়ে এক ড্রেজিং ব্যবসায়ীর চারলক্ষ টাকা মুল্যের ফাইপ চুরির চেষ্টা করে আলোচনায় আসে চক্রটি। এরআগে অন্য এক ব্যবসায়ীর কোটি টাকার ডেজ্রার ভাড়া নিয়ে কর্ণফুলী নদীর একটি প্রান্তে ডুবিয়ে রাখে একই চক্র।

এরশাদ নামের বালি মহালের এক বালি বিক্রেতা জানান,  ইয়াবা পাচারকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আসমী ছিনিয়ে নিতে দুইজন হিজড়াসহ বেশ কিছু যুবক অস্ত্রশস্ত্রসহ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,  বোয়ালখালী শীর্ষ সন্ত্রাসী  বিশু দাশ, বিএনপি নেতা শাহ সরওয়ার, এরশাদ, ওয়াসিমের নেতৃত্বে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয় । এ সময় বেশ কিছু যুবককে হিজড়াকে সাজিয়ে হামলার জন্য তৈরি করেন বিশু। পরে পার্শ্ববর্তী বালির মহালে অবস্থান নেন সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ সময় বেশ কিছু দেশী-বিদেশী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এদিকে,  পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার পর ফাঁড়িতে আসামি না রাখতে সব থানায় নির্দেশনা দিয়েছে নগর পুলিশ।

নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, সন্ধ্যায় দেলোয়ার ও হানিফ নামে দুই মাদক পাচারকারীকে পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ কালুরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদেরকে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়া হয়। এসময় তাদের কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের অনুসারীদের নিয়ে  কিছু মানুষ জড়ো করে ফাঁড়িতে হামলা চালায় এবং তাদের ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।'

ছিনিয়ে নেয়া দুই মাদক পাচারকারীকে ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ  ডিসি মোখলেছুর রহমান।

স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে মাদক ব্যবসা করে আসছে হানিফ ও তার সহযোগীরা। শনিবার রাতে হানিফ ও দেলোয়ারকে আটক করার পর হানিফের বোন নাজমার নেতৃত্বে বেশকিছু যুবক কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশের 'রেলওয়ে মুরিং ঘাটে ' অবস্থান নেয়। সেখান থেকে যুবকদের হিজড়া সাজিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ইজারা নেওয়া এই যাত্রী পারাপারের ঘাটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নদীপথে ইয়াবা পাচার করে আসছে একটি সংঘবদ্ধচক্র।