News update
  • BNP weighing review of some nominations amid grassroots unrest     |     
  • US presses for Gaza resolution as Russia offers rival proposal     |     
  • 35 crude bombs, bomb-making materials found in Geneva Camp     |     
  • 8 Islamic parties want referendum before polls, neutral admin     |     
  • Stocks sink on week’s last trading day; DSEX plunges 122 points     |     

টাঙ্গাইলে রাতের বাসে ডাকাত-দলের তিন ঘণ্টা ধরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও ধর্ষণ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অপরাধ 2022-08-05, 9:03am

রাস্তার পাশে বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে পালিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা। ছবি বিবিসি বাংলা।



টাঙ্গাইল জেলায় চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি এবং এক যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে আদালতে নিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

গাড়ির চালক এবং অন্য একজন কর্মচারীকেও পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

দেয়া হল না চাকরির ইন্টারভিউ

যারা দুর্ধর্ষ এই ডাকাতির শিকার হয়েছেন তাদের একজন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শিক্ষার্থী মোঃ আব্দুল আলিম। এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি।

বাসে উঠে বন্ধুর সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে বেশ আনন্দেই ছিলেন। গাড়ি চালকের ঠিক পিছনেই বসা ছিলেন দু'জনে।

মোঃ আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, "ডাকাতি হচ্ছে এটা বুঝতে পারলাম যখন হঠাৎ করে যাত্রী-বেশে থাকা কয়েকজন গাড়ির চালককে আক্রমণ করা শুরু করলো এবং তারপর একজন আমার গলায় চাকু ধরে বলে ওঠে যা আছে বের কর।

নড়াচড়া করলে একেবারে টান মেরে পেটের সবকিছু বের করে দেব। যাত্রীদের দুই একজন চিৎকার করে উঠলে তাদের চড় থাপ্পড় দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে বলে। এতজন একসাথে, তাদের হাতে ছুরি চাকু দেখে সবাই ভয়ে চুপ করে যায়।"

পুলিশ জানিয়েছে, ঈগল পরিবহন নামে একটি কোম্পানির ওই বাসটি ২৫ জনের মতো যাত্রী নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাছাকাছি একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারের জন্য যাত্রা বিরতি করে।

রাত বারোটার দিকে বাসটি আবার যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রী-বেশে থাকা ১০ থেকে ১৫ জন যুবক বাসটিতে থাকা যাত্রীদের হাত, পা বেঁধে তাদের কাছে থাকা টাকা, মূল্যবান গয়না, ফোন সবকিছু নিয়ে নেয়। এবং একজন নারী যাত্রীকে তারা দলবেঁধে ধর্ষণ করে।

মোঃ আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, "ডাকাত-দলের সদস্যদের মুখে শুরুতে মাস্ক ছিল। করোনার মাস্ক। পরে তারা মাস্ক খুলে ফেলে। ডাকাত-দল সাথে করে নিজেরাই গাড়ির চালক নিয়ে এসেছিল। সেই চালক পুরো সময় গাড়ি চালিয়েছে।"

গলায় ছুরি ধরে ডাকাতি

কুষ্টিয়ার ফল ব্যবসায়ী মোঃ হেকমত স্ত্রী, শাশুড়ি এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার হাসপাতালে স্ত্রীর কানে অস্ত্রোপচার করানো।

তিনি বলছিলেন, "তখন রাত বারোটা মত বাজে। আমি একটু ঝিমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম যে বাসটি থামিয়ে তিন জায়গা থেকে যাত্রী তোলা হয়েছে। এই যাত্রীরাই পরে দেখলাম ডাকাত। আমার গলায় ছুরি ধরেছিল। গালায় লাল কাটা দাগ পড়ে গেছে।"

তিনি জানিয়েছেন, ডাকাত দল সাড়ে তিন ঘণ্টা মতো বিভিন্ন রাস্তায় বাসটি নিয়ে ঘুরতে থাকে। জানালার কাঁচ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং পর্দা টেনে দেয়া হয়। পুরুষ সদস্যদের হাত পা বেঁধে দু'পাশে বসার সিটের মাঝখানে সরু জায়গাটিতে ফেলে রাখা হয়।

সেসময় বাসটিতে কোন আলো ছিল না। ডাকাত-দলের সদস্যরা তাদের প্রয়োজন মতো টর্চ অথবা মোবাইল ফোনের বাতি জ্বেলে নিচ্ছিল।

দল-বেঁধে ধর্ষণ

এ সময়ে বাসে কী হচ্ছিল তা পুরো দেখতে না পেলেও, মোঃ হেকমত শব্দ শুনে বুঝতে পারছিলেন বাসের পেছনের দিকে একজন নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন চলছে।

তিনি বলছিলেন, "একটা মেয়ে বাসের পেছন থেকে কাকুতি মিনতি করছিল। বলতেছিল আপনাদেরও বাড়িতে মা বোন আছে। নানা কথা বলে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। আমি তখন খালি আমার নিজের ওয়াইফেরে কথা ভাবতেছিলাম। আমরা ওই মেয়েটার প্রতি যে অত্যাচার হচ্ছে বুঝতে পারছি, কিন্তু কিছু করতে পারতেছি না, এইটা ভেবে চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল।"

স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে ধর্ষণের শিকার নারী একা ঢাকায় যাচ্ছিলেন পোশাক কারখানায় কাজ করবেন বলে।

ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে ধর্ষণের শিকার নারী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন। আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

ডাকাতি শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার একটি মসজিদের কাছে রাস্তার পাশে বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে পালিয়ে যায় ডাকাত-দলের সদস্যরা।

বাস ফেলে ডাকাত-দলের পলায়ন

মোঃ হেকমত বলছিলেন, "ওরা একটা হাই-এস মাইক্রোতে পালিয়ে গেছে। অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেলেও ওদের কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছিলাম। মোবাইল ফোনে হাই-এস কতদূর, এসব কথা আলাপ করছিল কারো সাথে।"

বাসটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে মনে করে প্রথমে এগিয়ে আসেন সেখানকার গ্রামের বাসিন্দারা। তারা যাত্রীদের সহায়তা করার জন্য বাসের ভেতরে ঢুকে অন্ধকারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আতঙ্কিত মানুষজন দেখতে পান।

মো: হেকমত ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়ায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছেন। তার স্ত্রীর কানের অস্ত্রোপচার করানো হল না।

ছোট শিশুদের একজন ডাকাতির সময় বাসে কেঁদে উঠলে তাকেও ছুরি দেখায় ডাকাতেরা। তখন সেও চুপসে যায়। তার দুই শিশুর মধ্যে চার বয়সী শিশুটি ও স্ত্রী এখনো আতঙ্কিত।

"এই রকম একটা ভয়াবহ কিছু যে হবে তা কল্পনাতেও ছিল না," বলছিলেন মো: হেকমত।

মি: আলিম বলছিলেন তার চাকরির ইন্টারভিউও আর দেয়া হল না।

"বাড়ি থেকে ফোন করে কান্নাকাটি করে সবাই বলেছে বেঁচে থাকলে এরকম আরও অনেক ইন্টারভিউ দিতে পারবি। এখন বাড়ি চলে আয়।" তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।