আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের বাইরে রয়েছেন মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এর মাঝেই তারপর ঋণ খেলাপি ও কাঁকড়া খামারের কর্মচারীদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাকিবের উপর। যার ফলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে এতদিন চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন সাকিব। সম্প্রতি দেশের বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাঁকড়া খামার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে নতুন তথ্যও দিয়েছেন তিনি।
সাকিব দাবি করেছেন, তার মামলাগুলো স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন এই মামলাগুলো সাধারণ গতিতে এগোচ্ছে না—বরং অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে চলছে।
কাঁকড়া ব্যবসা নিয়ে এই তারকা ক্রিকেটার বলেছেন, আমি মাত্র দুটি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম—একটা আমার কাঁকড়া খামার (ক্র্যাব ফার্ম), আরেকটা শেয়ার মার্কেট ব্যবসা। ২০১৯ সালে, কোভিডের আগ পর্যন্ত কাঁকড়া খামারটা বেশ ভালোই চলছিল। কিস্তি বা ঋণের ক্ষেত্রে কোনো বাকি ছিল না। কিন্তু কোভিড আসার পর প্রকল্পটি থমকে যায়, কিছু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়, ফলে অনেক বড় ক্ষতি হয়। আমরা বিষয়টি মিটিয়ে নিতে পারতাম, কিন্তু ভিতরে কিছু সমস্যা ছিল—কিছু অংশীদার টাকা নিয়ে চলে গিয়েছিল।
এর আগে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সাকিবের উপর। এ নিয়ে নিউজও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। তবে সাকিব জানিয়েছেন, সেখানে শুধু তার নামই প্রকাশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও অংশীদার রয়েছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, কাঁকড়া ফার্মে আমার শেয়ার ৩৫%, বাকি ৬৫% অন্যদের। কিন্তু অজানা কারণে মানুষ শুধু আমার নামটাই জানে। এই ব্যবসায় যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের কাউকে উল্লেখই করা হয়নি। আমি ওই ফার্মে মাত্র একবার কয়েক ঘণ্টার জন্য গিয়েছিলাম। আমি নিয়মিত যাইনি বা বিষয়গুলো খেয়াল রাখিনি, কিন্তু যখন শুনলাম সমস্যার কথা, তখন আমি নিজেই আমার পকেট থেকে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম, কারণ আমি চাইনি প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাক।
তিনি বলেন, যিনি প্রকল্পটি পরিচালনা করছিলেন, তার উচিত ছিল অন্য অংশীদারদের সঙ্গে বসে সমস্যাটা সমাধান করা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সব দোষ আমার ওপর এসে পড়ল, শুধুমাত্র আমার নাম প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে। আমার আরও জানতে চাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সেটা পারিনি কারণ আমার পুরো মনোযোগ ছিল ক্রিকেটে।
সব সমস্যা সমাধান করে আবারও কাঁকড়া খামার চালু করতে চান সাকিব। তার ভাষ্য, এখনও আমি ঋণ পুনঃতালিকাভুক্ত করতে চাই এবং ব্যবসাটা আবার শুরু করতে চাই, কারণ এর ভালো বাজার আছে, এবং আমরা বৈদেশিক আয়ও অর্জন করতে পারি। সরকার থেকেও এ ধরনের প্রকল্পে ভালো ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। তাই আমি চেষ্টা করছি ঋণটি রিসিডিউল করার জন্য। যদি তারা অনুমতি দেয়, তাহলে তা করা সম্ভব—কারণ আমি টাকা নিয়েছি, আমি সেটি ফেরত দিতেই চাই।
ঋণ খেলাপির মামলায় আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় সাকিবের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনে করা হয়নি বলে দাবি করেছেন এই ক্রিকেটার।
সাকিব বলেন, দেশের অনেক মানুষ শত শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে, আর এটা মাত্র ৪.৫ কোটি টাকার ঋণ। আমার ৩৫% শেয়ারের হিসেবে আমি মাত্র ১.২০ কোটি টাকা দিলেই চলবে। কিন্তু যেভাবে আমার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে—আমি মনে করি না এটা স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া। যদি অন্য কেউও এই পরিস্থিতিতে ভুল করে থাকে, তাহলে আমিও তো এক ধরনের ভিকটিম।আরটিভি