
কিডনি আমাদের শরীরে যত কাজ করে, তা বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থেকে বোঝা যায় না। রক্ত পরিষ্কার রাখা থেকে শুরু করে পানি–লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ—সবই সামলায় এই দুই নীরব কর্মী। কিন্তু ভুল খাবার, কম পানি পান, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস হলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। সময়ের সঙ্গে এ চাপই কিডনি রোগ, পাথর বা আরও জটিল সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সুখবর হলো—কিডনিকে ভালো রাখতে আলাদা কিছু করতে হবে না। প্রতিদিনের খাবারেই আছে সহজ সমাধান। কিছু সাধারণ ফল কিডনিকে শক্ত রাখে, প্রদাহ কমায়, শরীর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এসব ফলে পটাসিয়াম–ফসফরাস কম থাকে, ফলে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না।
চলুন খুব সহজ ভাষায় জেনে নিই, কোন ছয়টি ফল কিডনির জন্য উপকারী -
১) ব্লুবেরি
ব্লুবেরির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন, যা কিডনির ভেতরে প্রদাহ কমায় এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। সেই সঙ্গে এটি খুব কম পটাসিয়াম–সোডিয়াম–ফসফরাসযুক্ত ফল, তাই প্রায় সবার জন্যই নিরাপদ।
কীভাবে খাবেন: সকালে ওটস বা দইয়ে মিশিয়ে খাওয়া যায়, সালাদ কিংবা স্মুদি বানিয়েও খাওয়া যায়। ফ্রোজেন ব্লুবেরিও ভালো বিকল্প।
২) ক্র্যানবেরি
ক্র্যানবেরি মূত্রনালী বা ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে দারুণ কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া যাতে ব্লাডার বা নালীতে আটকে না থাকে, সেটিই ঠেকিয়ে দেয় এই ফল। ফলে সংক্রমণ কমে এবং কিডনির ওপর চাপও কমে যায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির ভেতরের ক্ষতিও কমায়।
কীভাবে খাবেন: সালাদে মিশিয়ে, স্মুদিতে দিয়ে বা অল্প চিনি ছাড়া ক্র্যানবেরি জুস খেলেও উপকার মিলবে।
৩) স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে আছে প্রচুর ভিটামিন–সি আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো কিডনিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন স্ট্রবেরিকে কম পটাসিয়ামযুক্ত নিরাপদ ফলের তালিকায় রেখেছে।
কীভাবে খাবেন: সকালের সিরিয়াল বা দইয়ের সঙ্গে এটি দারুণ মানায়। স্মুদি বানিয়ে কিংবা সরাসরি ফল হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন বেরি মিশিয়ে বানানো যেতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–সমৃদ্ধ ফলের সালাদ।
৪) আপেল
একটা আপেল শুধু খিদেই মেটায় না, কিডনিও ভালো রাখে। আপেলে থাকে ফাইবার, ভিটামিন–সি আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আর পটাসিয়াম–সোডিয়ামও কম থাকে। এটি হজম ঠিক রাখে, রক্তের চিনি সামলায়, আর শরীরের বর্জ্য বের হতে সাহায্য করে—যা কিডনিকে দেয় বাড়তি সুরক্ষা।
কীভাবে খাবেন: সরাসরি বা সালাদে দিয়ে খাওয়া যায়। হালকা বেক করে খেতেও ভালো লাগে। চাইলে ওপর থেকে একটু দারচিনি ছিটিয়ে দেওয়া যায়।
৫) লাল আঙুর
লাল আঙুরে আছে রেসভেরাট্রলসহ আরও কিছু উপকারী উপাদান, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। এতে কিডনি রক্ত ছেঁকে আরও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। তাছাড়া এটি কম পটাসিয়ামযুক্ত হওয়ায় কিডনির জন্য বেশ নিরাপদ।
কীভাবে খাবেন: নাস্তা হিসেবে বা একটু ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে খাওয়া যায়। ফলের সালাদেও আঙুর দারুণ মানিয়ে যায়।
৬) লেবু ও অন্যান্য সাইট্রাসযুক্ত ফল
লেবু, মাল্টা, কমলা—এই সাইট্রাসযুক্ত ফলগুলোতে থাকে সাইট্রেট, যা কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়। একই সঙ্গে এগুলো শরীর হাইড্রেটেড রাখে এবং ভিটামিন–সি দিয়ে প্রদাহ কমায়।
কীভাবে খাবেন: পানিতে একটু লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সালাদ বা রান্নায়ও লেবু ব্যবহার করা যায়। তবে সবই পরিমিতভাবে করা উচিৎ।