News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

হালচাল: কানাডার তৃণমূল শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রবাস 2025-03-24, 12:13am

nazrul-islam-enayetpur-d535aa1c26118458cd6080737a9f5aca1742753580.jpg

Nazrul Islam



নজরুল ইসলাম

টরন্টো আমার বাসার দুই কিলোমিটার দূরে কারমাইন স্টেফানো কমিউনিটি সেন্টার যেখানে প্রায় প্রতিদিনই শারীরিক ব্যায়ামের নাম করে একবার আমার যাওয়া হয় । অবসর জীবন, এই কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়ামের নাম করে গিয়ে কিছু সময় কাটাই, যেখানে বিভিন্ন দেশের রং বেরঙের লোক শারীরিক ব্যায়াম ছাড়া ও নানাহ প্রোগ্রামে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অংশ গ্রহণ করার সুযোগ নিয়ে বসে গল্প করে ।

অনেকেই ব্যস্ত জীবনের কিছু সময় ছোটছোট ছেলেমেয়ে বা বন্ধুদের নিয়ে বাসা থেকে অথবা রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়াদাওয়া এনে বসে গল্প করে সময় কাটায় । কমিউনিটি সেন্টারের কয়েকশো গজের মধ্যেই "টিমহর্টন্স " ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট এবং অনতিদূরে "তালিমুল ইসলাম' মসজিদ,যেখানে রমজানের মাসে প্রতি রাতেই ইফতারের ব্যবস্থা,দুই -তিন শত লোক খাওয়া ও নামাজ পড়ে। এটা আমার অতি পছন্দের এলাকা, প্রতিদিনই একবার এই সেন্টার এবং মসজিদ বা রমজান মাস বাদ দিয়ে প্রতিদিনই একবার টিমহর্টন্স কফি শপে যাই।

এই কমিউনিটি সেন্টার আগে "সেন্ট বাসিল" নামে একটা ক্যাথলিক হাই স্কুল ছিল, সামনে প্রকান্ড খেলার মাঠ,ক্যাথলিক চার্চ ও এক দিক দিয়ে শহরের হাম্বার রিভার সরু ক্যানেল বা খাল প্রবাহিত হয়েছে ; গত কয়েক বৎসর এই স্কুল সরিয়ে নিয়ে নতুন স্থানে নতুন করে স্থাপন করেছে। বর্তমানে এই প্রকান্ড দ্বিতল বিশিষ্ট বিল্ডিং এ নানাহ ধরণের কমিউনিটি কার্যক্রম হয়ে থাকে। সপ্তাহে ৭ দিন এই বিল্ডিং সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যারা এই সেন্টার সমন্বয়/কাজ কর্মে জড়িত তাদের ৮০% কলেজ বা উনিভার্সিটির ছাত্র/ছাত্রী, অবসর সময়ে এই সেন্টারে পার্ট-টাইম বা ভলান্টারিং (স্বেচ্ছাসেবী) কাজ করে।

এই সেন্টারের বাইরে হাম্বার রিভার (খালের) দুই পার্শ্বে বিনোদন মূলক ব্যবস্থা/ বেঞ্চ দিয়ে সাজানো এবং হরেক রকম গাছ গাছালিতে ভর্তি,গ্রীষ্মে মনভুলানো ফুলের সমারোহ,যেন কোন স্বপ্ন দেশে বাস করি,শত শত রাজ্ হাস,পাখির কলরব,হরিনের আনাগোনা দেখে মন ভুলে যাবে; তবে পাখি বা হরিণ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ,এখানে পিকনিক স্পট, খেলাধুলা ও বনভোজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই খালের পাড়ে জঙ্গল থেকে সময় সময় হরিণ আনাগোনা করে এবং কাছে থেকে ছবি নেয়া যেতে পারে , এ ছাড়া খালে মাছ, যুবক- যুবতীরা বড়শি দিয়ে ধরে ও অবসরে বসে আনন্দ করে।

টরন্টো এবং এর উপ-শহরগুলিতে অসংখ্য বিনোদনমূলক পার্ক রয়েছে,প্রতিটি পার্কে বসা,রান্না করার ব্যবস্থা ও টয়লেট সহ সব ধরণের সুবিধা থাকায় অবসর সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাবাবা সময় কাটাতে আসে ,বাংলাদেশী,ভারতীয় বা যে কোনো দেশের লোক এই পার্কে গ্রীষ্মে শনি-রবি বা যে কোনো ছুটির দিনে বনভোজন, ছেলেমেয়েদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,বন্ধুদের গল্পের আড্ডায় বসে ।

২) আজকের পৃথিবী আর ৫০-৬০ বৎসর পূর্বের পৃথিবী এক নয়, আমাদের যুগে মানুষ কোনো রকমে খেয়ে দিয়ে বেঁচে থাকলেই মনে করতো আমি সুখী। ১০-১২ বৎসর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতো,মেয়ের বিয়েতে কি ধরণের পাত্র চাই,কত যৌতুক দিতে হবে এ সব ছিল পরিবারের ভাবনা,বিয়ে না হলে মাথার বোঝা মনে করতো।

মেয়েরা স্কুলে ১-২ ক্লাস পর্যন্ত পড়ে নাম দস্তখত আর চিঠি পড়তে পারলেই মনে করতো বেশ হয়েছে, আর দরকার নেই , বেশি পড়লে মেয়েদের স্বভাব -চরিত্র খারাপ হয়ে যায়। মেয়েরা রান্না , হাতের কাজ যেমন হাত পাখায় ফুল তোলা, বিছানায় সুন্দর করে ফুল তোলা ও কিছু লিখতে পারলেই মনে করে তার মেয়ে অনেক কিছু শিখেছে। ঘটক বাড়িতে মেয়ে দেখতে আসলে এ সব হাতের কাজ দেখিয়ে বর পক্ষকে মেয়ে সম্পর্কে প্রশংসা করা হতো। আজকালকের মেয়েরা স্কুল , কলেজ ইউনিভার্সিটি এবং বিদেশে পড়াশুনা করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েদের সে যুগে যেন পণ্য হিসাবে ব্যবহার করা হতো, যৌতুকের পয়সা না দিলে নির্যাতন করা হতো।

আমাদের দেশে এখন ছেলেরা আর আগের মতো আংটি,ট্রান্সিস্টর এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না , আজকাল বিদেশে যাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে,বিশেষ ক্ষেত্রে গাড়ি,বাড়ি ও দাবি করে। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা এখনও পূর্বের ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি।

কানাডা শিশুদের কিভাবে যত্ন নিয়ে বড় করে তার কিছু বিবরণ এই "স্টেফানো কমিউনিটি সেন্টার" থেকে আমি সংগ্রহ করেছি :

ক) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা (স্পেশাল নিড চিলড্রেন ) : এ সব ছেলেমেয়েদের মাবাবা এই কেন্দ্রে রেখে যায় যেখানে সব ধরণের শিক্ষামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ ধরণের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়ে ও ছেলে দিয়ে ওদের দেখাশুনা এবং শিক্ষা দিয়ে থাকে।

খ) ) টরোন্টোর প্রতিটি মহল্লার কমিউনিটি সেন্টার গুলিতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বয়স্ক (অবসর) পুরুষ ও মহিলাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন : পেইন্টিং, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল , নাচ (ব্যালে), হিপহপ, হাঁটা- দৌড়, গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পিং এর মতো নানাহ প্রোগ্রাম দিয়ে এলাকার ছেলেমেয়ে ও বয়স্কদের ব্যস্ত রাখা হয়।

গ) ) কানাডা ঠান্ডার দেশ,ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে আনা-নেয়ার জন্য স্কুল বাসের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে; এমন কি এ দেশের গ্রাম গঞ্জে ও এ ধরণের বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় ছেলেমেয়েরা স্বাচ্ছন্দে স্কুলে যাওয়া আশা করতে পারে।

৩ ) এ দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষা অবৈতনিক এবং পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত বিনামূল্যে দেয়া হয়। মাবাবা বা অভিবাবক ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার কোনো খরচ বহন করতে হয় না। ছেলেমেয়েরা স্কুল পড়াশুনা শেষ করে কলেজ বা ইউনিভার্সিটি পড়াশুনার জন্য স্কলারশিপ বা সরকারি লোন ( খুবই সহজ স্বর্তে ) নিয়ে পড়াশুনা করে,পরে কাজে ঢুকার পর সহজ কিস্তিতে পরিশোধ করে ।

এতে মা বাবার উপর কোনো বাড়তি চাপ পড়ে না। অনেক মাবাবা জানে না তার বা তাদের ছেলেমেয়ে কি পড়াশুনা করবে,ওরা স্কুল থেকেই এ সব ঠিক করে ;তাছাড়া পার্ট টাইম কাজ করে নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করে। 

৪ ) আমাদের দেশগুলিতে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য মাবাবাকে অনেক ভাবনায় পড়তে হয়। যদি ও আজকাল দেশে শিক্ষার অনেক পরিবর্তন হয়েছে; তথাপি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। কানাডায় ছেলেমেয়েদের ক্লাসে ভালো করার জন্য শিক্ষকদের করণীয় থাকে, ছেলেমেয়েরা ভালো না করলে কেন করে না তার কৈফিয়ত শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীকে দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম এবং প্রাইভেট টিচার নিয়োগ দিয়ে পড়াশুনা না করলে ভালো করা বা আশান্বিত ফল পাওয়া যায় না।

সমাপ্ত