News update
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     

ঢাকায় কেন এ তাপদাহ: সমাধান কোন পথে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2024-05-16, 4:15pm

images-1-20-5b4fd0f34caefee47fc391f7a91f2a3a1715854633.jpeg




গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে তাপদাহ চলছে। এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৯০ শতাংশ এলাকার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে এক সমীক্ষা বলছে।

বাংলাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে উল্লেখ করে বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিবাসীদের সর্তকতামূলক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, এই বছর বাংলাদেশে একটানা সবচেয়ে বেশিদিন ও সর্বোচ্চ তাপদাহের রেকর্ড গড়েছে। এবার ৩১ মার্চ থেকে ৪ মে পর্যন্ত টানা সারাদেশে তাপদাহ হয়েছে; যা ১৯৪৮ সাল থেকে কখনও এতদিন টানা ছিল না। গত ২৯ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৩০ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুননেছা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “গত ৩০ এপ্রিল এই বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোর অঞ্চলে। আর ২৯ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।”

তিনি বলেন, “এর আগে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪২.৩ ডিগ্রি) ছিল। তবে, ১৯৪৮ সালের পরে এ বছরই ৩১ মার্চ থেকে ৪ মে পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেশের ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে হিট ওয়েভ বিরাজ করেছে। এটাই একটানা তীব্র তাপদাহের রেকর্ড গড়েছে।”

দেশের চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ (২২ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত) হিট স্ট্রোকে সারাদেশে আটজন পুরুষ ও দু'জন নারীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গত ১ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য দিয়েছে।

ঢাকার ৯০ শতাংশ এলাকার মানুষ তাপদাহ ঝুঁকিতে সম্প্রতি তাপমাত্রা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য– এই চার বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ওই সমীক্ষার আলোকে ‘তাপপ্রবাহ: বাংলাদেশ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, আদাবর ও ধানমন্ডি সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা। সবমিলিয়ে ঢাকার ৯০ শতাংশ এলাকার মানুষ তাপদাহ ঝুঁকিতে আছেন।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আজম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাদের রিপোর্টটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা হিট ওয়েভ ম্যাপ (মানচিত্র) তৈরি করেছি। ঢাকা শহরে হিট এলাকাগুলো নির্ধারণ করেছি। সেখানে ৯০ শতাংশ এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”

তিনি বলেন, “তাপদাহে রিকশাচালক-শ্রমজীবীদের আয় কমে গিয়েছিল। আমরা রাজধানীতে ২১ হাজার ২১০ জনের মতো নিম্ন আয়ের মানুষকে ২ কোটি টাকার নগদ সহায়তা করেছি। ৬০ হাজার লিটার পানি বিতরণ করেছি।”

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ।

ঢাকায় বেশি গরম হওয়ার কারণ

অল্প জায়গায় বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস, গাছপালা-জলাভূমি না থাকায় এবং অতিমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ঢাকায় তীব্র তাপদাহ হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ ও স্থপতিরা।

তারা বলছেন, শহরের বেশির ভাগ জায়গা কংক্রিটের স্থাপনা দিয়ে আচ্ছাদিত। এতে অতি উষ্ণতার ঝুঁকি বছর-বছর বাড়ছে। গাছপালা কেটে, জলাভূমি ভরাট করে এবং অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের কারণে ঢাকা শহর তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সারাদেশে তাপদাহ হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরও অনেক কারণ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঢাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে আমাদের খোলা জায়গা নেই। গাছপালা নেই, জলাশয় নেই। আরেকটা হলো– ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’। এটা প্রাকৃতিক ঘটনা। গ্রাম থেকে যখন শহরে প্রবেশ করবেন, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।”

বাংলাদেশের মতো গরম দেশে কাচের ঘেরা ভবন, বহুতল ভবন থাকা উচিত না বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, “এখানে বিল্ডিংগুলোর ডিজাইন এমনভাবে করা যাতে আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে না। শুধু বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।”

ঢাকা শহরে গরম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ দূষণ বলে উল্লেখ করেন সিরাজুল ইসলাম।

গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে স্থপতি ইকবাল হাবিব একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, “গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকেই প্রায় ৮৫ ভাগ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি একই সময়ে স্থাপনা নির্মাণ বেড়েছে ৭৫ ভাগ; যা গাছপালা ও জলাশয় ধ্বংস করে তৈরি করা হয়েছে।”

“পরিবেশ অনুপযোগী বিদেশি গাছ রোপণ, কাচের ভবন নির্মাণ, বায়ুদূষণ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে তাপপ্রবাহে ঢাকার পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে” – বলেও উল্লেখ করেন ইকবাল হাবিব।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে গ্রামের তুলনায় গরম অনেক বেশি। কারণ অনেক বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার হয়।

তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর যখন বলে ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি, তখন মোবাইলের অ্যাপ বলে ৪২ ডিগ্রি আর ‘ফিলস লাইক’(অনুভূত) হয় ৪৫ ডিগ্রি। কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকার ফলে গরম বেশি অনুভূত হয়।”

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ‘তাপপ্রবাহ: বাংলাদেশ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলছে– তাপদাহের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন রিকশাচালক, হকার, নির্মাণশ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষরা।

তাদেরকে তাপদাহ থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে স্বল্পমেয়াদি কিছু পরামর্শ ও পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলছেন পরিবেশবিদরা।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক আইনুন নিশাত ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “তাপদাহ থেকে বাঁচার স্বল্পমেয়াদি সমাধান হচ্ছে রোদে বাইরে না যাওয়া। বেশি দরকার পড়লে মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করা। ঘরে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পানি খাওয়া। ফ্রিজের পানি না খাওয়াই উত্তম। শিশুদের স্কুল বন্ধ রাখতে হবে।”

আইনুন নিশাত বলেন, “সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক-শ্রমজীবীদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা। মানুষের জন্য প্রতিটি রাস্তার মোড়ে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা। টানা আধা ঘণ্টার বেশি তপ্ত রোদের নিচে যেন না থাকে– সেই পরামর্শ দেওয়া।”

“রাস্তা ও বস্তির পাশে কুলিং সেন্টার স্থাপন করা, যাতে শ্রমজীবীরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারে” – বলেও উল্লেখ করেন আইনুন নিশাত।

স্বল্প মেয়াদে ঢাকার তামমাত্রা হ্রাস কমাতে ছাদ কৃষিও ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ছাদ কৃষি বিল্ডিংয়ের গরম কিছুটা কমাতে পারে। এটাকে উৎসাহিত করতে হবে।”

অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হচ্ছে গাছ লাগানো, জলাধার তৈরি করা। কারণ, এখন গাছ লাগানো শুরু করলে ২০ বছর পর তার ফল পাওয়া যাবে।”

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “শহর এলাকায় গরম এমনিতে বেশি হবে। কিন্তু এটাকে হ্রাস করার জন্য নগর কর্তৃপক্ষকে সব সময় বুদ্ধিমানের মতো কাজ করতে হবে। খোলা জায়গা রাখতে হবে, জলাভূমি সংরক্ষণ করতে হবে। গাছপালা লাগাতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিল্ডিং হয়ে গেলে জলাধার করা যাবে না– বিষয়টি এমন নয়। বিল্ডিং ভেঙে জলাধার করা যায়। যেটা জাপান ও চায়নাতে হয়েছে– স্পঞ্জ সিটি; যেখানে জলাধারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সরকারকে প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে নিয়ে ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। একই সঙ্গে শহরের দূষণ কমাতে হবে।”

‘গ্রিন বিল্ডিং’-এর কিছু সুবিধা আছে বলে উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, “এ ধরনের বিল্ডিংয়ে পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কম হয়। ঘরের মধ্যে বাতাসের আসা-যাওয়া নিশ্চিত হয়। এতে গরম কম হয়। গ্রিন বিল্ডিং আমাদের দেশে শুধু গার্মেন্টস সেক্টরগুলোতে দেখা যায়। কারণ বৈদেশিক ক্রেতাদের গ্রিন বিল্ডিংয়ের একটা ডিমান্ড থাকে।”

তাপদাহে ঝুঁকি থেকে শ্রমজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের বাঁচাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বেশ কিছু পদপেক্ষ গ্রহণ করেছে বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “২৫০টি রিকশাভ্যানে করে পানি বিতরণ করছি। প্রতিটিতে ২৫০ লিটার করে পানি থাকে। এ ছাড়া ১০টি পানির ব্রাউজারে ৪ লাখ লিটার পানি প্রতিদিন সড়কে দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে সিটি করপোরেশন লাইসেন্সধারী রিকশাচালকদের মাঝে ৩৫ হাজার ছাতা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি চালককে ১০টি করে স্যালাইন ও পানির বোতল দেওয়া হচ্ছে।”

“দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন বস্তি এলাকায় কুলিং পয়েন্ট তৈরির পরিকল্পনা করেছি। যাতে তারা সেখানে এসে বিশ্রাম নিতে পারে। আর গাছ লাগানো শুরু হয়ে গেছে” – বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “প্রতিদিনই প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার লিটার পানি সড়কে ছিটানো হচ্ছে। সবচেয়ে হিট এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত গুলিস্তান এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় কুলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যেটাতে শ্রমজীবী মানুষেরা পানি পান, বিশ্রাম নিতে পারছে।”

দক্ষিণ সিটির আওতায় চারটি পানির ফোয়ারা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সচল রাখা হয়েছে বলেও জানান মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “কাউন্সিলররা তাদের নির্বাচনী এলাকায় সীমিত সাধ্যের মধ্যে শ্রমজীবীদের পানি ও শরবত খাওয়ানোর কাজটি করছে।”

মিজানুর রহমান বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন এলাকায় ৩০ হাজার গাছ লাগিয়েছি। যেটি ফলাফল পেতে হয়তো ৩০ বছর লাগবে। আদি বুড়িগঙ্গাকে দখলমুক্ত করে তার পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে এনেছি। এখন নদীর দুই পাশে বৃক্ষরোপণ, হাঁটার জায়গা তৈরিসহ বিনোদনের উপযুক্ত করার কাজ হাতে নিয়েছি। এ ছাড়া ঢাকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ খালকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

“শহরের আয়তনের তুলনায় বিল্ডিং বেশি হওয়ার কারণে তীব্র তাপদাহ এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই” – বলেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঢাকা শহর দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরায়ণ যত হবে, আবাসনের চাহিদা তত তৈরি হবে। চাহিদা পূরণ করতে প্রথমে আশেপাশের জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট করা হয়।”

আশরাফুল ইসলাম বলেন, “একটা পরিকল্পিত শহর তৈরি করতে গেলেও শহরের ধারণক্ষমতা কত, মানুষের সুযোগ-সুবিধাসহ সবকিছু নির্ভর করতে হয়। এটাকে ডেনসিটি জোনিং বলে। সেটা আমাদের পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। যার কারণে কোন এলাকায় কতজন মানুষ বসবাস করবে, কতগুলো বিল্ডিং থাকবে, তার সঠিক সংখ্যা আমাদের কাছে ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “রাজউকের আগের পরিকল্পনায় একটি বিল্ডিং করার সময় সেখানে কতটুকু সেটব্যাক ও গ্রিন থাকবে তার সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। এ ছাড়া অনেক বড় বড় ভবন আছে, সেখানে এমন প্রজাতির গাছ আছে, সেগুলো দেখতে সুন্দর। কিন্তু এগুলো শহরের তাপমাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে না। তাপমাত্রা কমাতে ইম্প্যাক্ট তৈরি করে এবং ছায়া দেয় এসব গাছ লাগাতে হবে।”

“ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে রাজউক ডেনসিটি জোনিং তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে” বলে জানান আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সর্বশেষ ২০২২ সালে যে ডিটেইল এরিয়া প্লান তৈরি করেছি, সেখানে ৪৫% জায়গা ফাঁকা থাকতে হবে।”

ঢাকা শহর অপরিকল্পিত হওয়ার মূল কারণ ছোট-ছোট প্লট বলেও দাবি করেন রাজউকের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২-৩ কাঠা প্লটে মানুষজন বাড়ি করতে চায়। তখন তাদের জায়গা ছাড়ার কোনো প্রবণতা থাকে না। একটা বিল্ডিংয়ের সঙ্গে আরেকটা বিল্ডিং লেগে থাকে। সেজন্য আমরা এখন ছোট প্লটগুলোকে নিরুৎসাহিত করে কয়েকজনকে একসঙ্গে বড় প্লটে বাড়ি করতে উৎসাহিত করছি। কারণ, বড় প্লটগুলোতে গ্রিন রাখতে জায়গা ছাড়তে মানুষের আগ্রহ থাকে।”

বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ চলছে, সেটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না বলে মনে করেন রাজউকের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “কারণ এটা বিগত ১০-২০ বছরের অপরিকল্পিত নগরায়ণের একটি ফলাফল।”

“ঢাকা শহরে ৮৫ শতাংশ কংক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে যাচ্ছে” – বলেও উল্লেখ করেন আশরাফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “যদি শহরে গ্রিনের ফুটপ্রিন্ট অথবা মাটিও থাকে তাহলে নরম্যালি তাপ মাটি শোষণ করে। উপরের লেভেলের তাপমাত্রা কমে যায়। কংক্রিট থাকলে সেই তাপমাত্রা বাউন্স ব্রেক করে তাপমাত্রা নিচে না গিয়ে আবার উপরে ফেরত আসে। যার কারণে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে– এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যের সঙ্গে কেন ফিলস লাইক মেলে না?

“আবহাওয়া অধিদপ্তর যেভাবে তাপমাত্রা রেকর্ড করে তাতে ‘ফিলস লাইক’ বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক” – মনে করেন আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা সরাসরি রোদের মধ্যে তাপ পরিমাপ করি না। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি স্টিভেনসন স্ক্রিনের মাধ্যমে তাপমাত্রা রেকর্ড করা। সে পদ্ধতিতে থার্মোমিটার থেকে বাতাসের তাপমাত্রা নেওয়া হয়।”

সরাসরি রোদের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলে প্রকৃত তাপমাত্রা আরও বেশি হতো বলে উল্লেখ করেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “রোদে গেলে যেটা ‘ফিল’ হচ্ছে সেটাকেই গুগল ‘ফিলস লাইক’ বলছে। বর্তমানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে গরমে বেশি অনুভূত হয়। ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।