News update
  • Rail link with Khulna cut off as train derails in Chuadanga     |     
  • 3 killed, 10 injured in Pabna Bus-truck collision     |     
  • UN Chief Appalled as Gaza Crisis Deepens, Aid Blocked     |     
  • Dhaka’s air quality ‘moderate’ also on Friday morning     |     
  • Russia 1st country to recognize Taliban rule in Afghanistan     |     

৪৯ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন এলিজাবেথ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-03-31, 8:53pm

eirer8oi-a5d1446defbb58660991562f2078e6201711896793.jpg




মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পদ্মারচর গ্রামের ফিরোজা বেগম। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় মারা যান স্বামী বছির সরদার। শুরু হয় সংসারে অভাব। এরই মধ্যে ফিরোজা বেগমের কোল আলো করে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। নাম রাখা হয় মৌসুমী। সেই সন্তান লালন-পালনের সামর্থ্য ছিল না ফিরোজা বেগমের। বাধ্য হয়েই সন্তানকে ঢাকার মোহাম্মাদপুর এতিমখানায় দেন তিনি। সেই এতিমখানা থেকে মৌসুমীকে দেওয়া হয় নরওয়ের এক দম্পতির কাছে। ওই দম্পতির ঘরেই বড় হয়েছেন মৌসুমী। নাম বদলে হয়েছেন এলিজাবেথ। ৪৯ বছর পর আবারও ফিরোজা বেগমের কাছে ফিরে এসেছেন এলিজাবেথ।

পাসপোর্টে তথ্য অনুযায়ী, এলিজাবেথের জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই। জন্মের পাঁচ মাসের মাথায় ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এতিমখানা থেকে তাকে দত্তক নিয়ে যান নরওয়ের দম্পতি। সেই থেকেই মৌসুমী ওরফে এলিজাবেথ নরওয়ের বাসিন্দা। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তিনি জানতেনই না কে তার আসল বাবা-মা।

নরওয়ের চিকিৎসক রয় রয়েড ও ক্যারেন রয়েড দম্পতি মৌসুমীর নাম রাখেন এলিজাবেথ রয়েড। সেই দম্পত্তিই তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর এলিজাবেথ রয়েড হয়ে যান এলিজাবেথ ফাজালসেট। এলিজাবেথ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। সেই সময় চিকিৎসক তার পারিবার সম্পর্কে জানতে চান। তখনই এলিজাবেথের মধ্যে নিজের মা এবং পরিবার সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপর চার সন্তানের মা হয়েছেন এলিজাবেথ। পাশাপাশি শুরু করেন নিজের মাকে খুঁজে বের করার কাজ। ২০১৩ সালে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন মায়ের খোঁজে। তবে সেবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। কিন্তু, এবার আর ব্যর্থ হতে হয়নি মৌসুমী ওরফে এলিজাবেথকে।

গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পদ্মারচর গ্রামে গিয়ে পেয়েছেন মায়ের দেখা এলিজাবেথ। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে মা-মেয়ে দুই জনই কেঁদেছেন অনেকক্ষণ। একে অন্যের মুখের ভাষা বুঝতে না পারলেও আবেগ অনুভূতি দিয়ে তারা নিজেদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বিকেলে আবার ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ ও তার স্বামী হ্যানরি।

এর আগে, মোহাম্মদপুর এতিমখানা থেকে নথি সংগ্রহ করেন এলিজাবেথ। এরপর একটি গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে মাদবরচর গ্রামের ভাতিজা সেলিম সরদারের বাড়িতে আসেন এলিজাবেথ এবং তার স্বামী হ্যানরি। এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য নতুন জামা, কসমেটিক্সসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ, আটা-ময়দা সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান। নরওয়ে থেকে মেয়ে এলিজাবেথ যেন তার মাকে দেখেতে পরেন সেজন্য একটি মোবাইল ফোন কিনে দেবেন বলেও জানান।

এলাকাবাসী জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় ননদের বাসায় পদ্মারচর গ্রামের মৃত বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন মৌসুমী। সেই সময় ফিরোজা বেগমের আর্থিক অভাব অনটন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে মৌসুমীকে ঢাকার মোহাম্মাদপুরের সমাজ কল্যাণ পরিচালকের কাছে দেন।

এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমি যখন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন ওর বাবা মারা যায়। আমার মাথার ওপর কোনো ছায়া ছিল না। আত্মীয়-স্বজন অনেকের বাড়িতে ঘুরেছি। কোনো উপায় পাইনি। কিন্তু, কোলের মানিককে রাস্তায় ফেলে আসিনি। রেখেছি সরকারের কাছে। বেঁচে থাকলে একদিন দেখা পাবো এই বিশ্বাস ছিল। এক সময় আমার কোলে আসবে এই বিশ্বাসও ছিল। ৪৯ বছর পর আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি।

এলিজাবেথ বলেন, ছোটবেলা থেকে নরওয়েতে বড় হয়েছি। নরওয়ের বাবা-মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারপর থেকেই আমি ফিরাজো নামটাকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। ২২ বছর বয়সে যখন প্রথম সন্তান প্রসব করি তখন সেখানকার ডাক্তাররা আমার হিস্টরি জানতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে শুরু করি। এ ব্যাপারে আমার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।