News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

মক্কার কাবা শরীফের চাবি কার কাছে থাকে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-06-27, 11:42am

ertreyey-a421ecefd98ce7cd08c43d1193d695951719466959.jpg




মক্কায় মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান কাবা শরীফের দরজার চাবির দায়িত্বে থাকা ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল শেবির সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে।

কাবা শরীফের দরজার চাবি তার কাছেই থাকত। বিশ্বাস করা হয়, ইসলামের নবী মোহাম্মদের সময়ে এই চাবি পেয়েছিল তার পরিবার। সেই সময় থেকে তাদের কাছে রয়েছে কাবা শরীফের দরজার চাবি।

বহু শতাব্দী যাবৎ তার পরিবার এই চাবি রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে।

ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল শেবি ছিলেন আল-শেবি পরিবারের ১০৯তম উত্তরাধিকারী।

চাচা আব্দুল কাদির তাহা আল-শেবির মৃত্যুর পর ওই চাবি হস্তান্তর করা হয়েছিল ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল শেবির কাছে।

উম্ম আল-কোরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ড. সালেহ ১৯৪৭ সালে মক্কা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

বহু বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। এছাড়াও ইসলাম সম্পর্কিত বহু গবেষণা প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।

কাবা শরীফের চাবির দায়িত্ব

কাবা শরীফে প্রবেশ করার জন্য একটি মাত্র দরজা রয়েছে, যাকে বাব-ই-কাবা বলা হয়।

মেঝে থেকে দুই দশমিক ১৩ মিটার উচ্চতায় থাকা এই দরজা কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালের কাছে এবং হাজরে আসওয়াদ নামের কালো পাথরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত যেখান থেকে তাওয়াফ শুরু হয়।

ওমরাহের সময় হজ তীর্থযাত্রীরা এই কালো পাথরে চুম্বন করেন এবং তারপরে কাবা প্রদক্ষিণ করেন, যাকে তাওয়াফ বলা হয়।

কাবার চাবির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে বিবিসি সোমালিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসলামি ইতিহাসবিদ আহমেদ আদন বলেন, "ইসলামের নবীর যখন জন্ম হয়, তখন কুরাইশ গোত্রের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।

যে পরিবারে নবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই বনি হাশিম পরিবার জমজমের কূপের মালিক ছিল এবং এর চাবিও ছিল তাদের কাছেই।''

“আর কাবার চাবি ছিল উসমান বিন তালহার কাছে।“

বিবিসি সোমালিকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে আহমাদ আদন সেই ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে উসমান বিন তালহাকে ইসলামের নবী বলেছিলেন, "সেই দিন ঘনিয়ে আসছে যেদিন এই চাবি আমার কাছে থাকবে।"

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মক্কা বিজয়ের পর চাবিটি কিছু সময়ের জন্য উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে আল্লাহর নির্দেশে তাকেই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, এই চাবি উসমান বিন তালহাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের নবী নিজে।

সে সময় থেকেই উসমান বিন তালহার পরিবারে রয়েছে কাবার দরজার চাবি । প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই চাবিকে সুরক্ষিত রেখেছেন তারা।

উল্লেখ করা হয়, ইসলামের নবী এই চাবি ওসমান বিন তালহাকে দিয়ে বলেছিলেন, "কাবার এই চাবি সর্বদা আপনার কাছে থাকবে এবং অন্যায়কারী ছাড়া কেউ আপনার কাছ থেকে এই চাবি নিতে পারবে না।"

বিদ্যমান দরজা

সবশেষ ১৯৪২ সালের আগে কাবা শরীফের দরজা কে তৈরি করেছিলেন এবং কীভাবে তা নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে ইতিহাসে খুব একটা উল্লেখ পাওয়া যায় না।

তবে ১৯৪২ সালে ইব্রাহিম বদর একটি রূপার দরজা তৈরি করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে ইব্রাহিম বদরের ছেলে আহমেদ বিন ইব্রাহিম বদর কাবার জন্য একটি সোনার দরজা নির্মাণ করেন।

তিনশো কেজি সোনা দিয়ে তৈরি এই দরজা।

কাবার সাবেক পৃষ্ঠপোষক শেখ আবদুল কাদিরের শাসনকালে শাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে কাবার তালা বদলানো হয়।

শাহ আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সাল কাবা পরিষ্কার করার সময় নতুন তালা ও চাবি শেখ আবদুল কাদিরের হাতে তুলে দেন।

দীর্ঘ অসুস্থতার পর শেখ আবদুল কাদিরের মৃত্যু হয়। এরপর ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শেবি এই চাবি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন।

ইতিহাস বলছে এর আগেও অনেক শাসক বহুবার কাবার তালা ও চাবি বদলেছেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, কাবার চাবি যে ব্যাগে রাখা হয় তার গায়ে কোরানের আয়াতের নকশা করা আছে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালা খোলা ও বন্ধ করার মধ্যেই কাবার চাবি রক্ষকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তবে সৌদি আরবে আসা রাজ অতিথিদের জন্য সৌদি আরবের বাদশাহের কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সৈন্যবাহিনী চাবি ব্যবহার করে এই তালা খুলতে পারে।

এছাড়া ইসলামি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহররম মাসের প্রতি ১৫ তারিখে বাদশাহের আদেশে চাবির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এই দরজা খুলে দেন, যাতে কাবা শরীফের ভেতরটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।

কাবার তালা ও চাবি

কাবার বর্তমান তালা ও এর চাবি ১৮ ক্যারেট সোনা ও নিকেল দিয়ে তৈরি। যদিও কাবার ভেতরের দালানের রং সবুজ।

তালা এবং চাবিতে কুরানের আয়াতও লেখা আছে।

তুরস্কের জাদুঘরে ৪৮টি চাবি রয়েছে, যা অটোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন শাসকরা কাবার দরজা খোলার জন্য ব্যবহার করতেন।

সৌদি আরবে এই চাবির যে অনুলিপি রয়েছে তা খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি।

চাবির নিলাম

দ্বাদশ শতাব্দীর কাবা শরীফের একটি চাবি ২০০৮ সালে নিলামে এক কোটি ৮১ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

লন্ডনে ইসলামি বিশ্বের নিদর্শনগুলির নিলামের সময় অজ্ঞাত এক ক্রেতা সেই চাবি কেনেন।

নিলামে ওঠা কাবার চাবি লোহার তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ছিল পনের ইঞ্চি। চাবিতে লেখা আছে, 'এটি আল্লাহর ঘরের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত।'

লন্ডনে নিলামে ওঠা কাবার চাবিই একমাত্র চাবি যা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

এ ছাড়া কাবার ৫৮টি চাবি বিভিন্ন জাদুঘরে রাখা আছে।