News update
  • Gaza ceasefire: Gazans hope to return to their ruined homes     |     
  • ‘Lebanon is on the cusp of a more hopeful future’: UN chief      |     
  • Ziaur Rahman's 89th birth anniversary today, BNP programs      |     
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     

হঠাৎ কেন এতটা অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য অঞ্চল?

বিবিসি নিউজ বাংলা বিবিধ 2024-09-24, 10:48am

retretertert-a2913fce58b6c06cbb662597f39175be1727153308.jpg

আগুনে পুড়ে যায় লারমা স্কয়ার বাজারের শতাধিক দোকান



খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ কেন তিন পার্বত্য জেলা এমন অশান্ত হয়ে উঠলো সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিন পাবর্ত্য জেলায় সেনাবাহিনীর বেশ কড়াকড়ি অবস্থান দেখা গেছে।

এই সংঘাত নিরসনে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য জেলাগুলোর পাড়ায় মহল্লায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের নিয়ে বৈঠক করছে জেলা প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “দীঘিনালায় গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে।”

এই পরিস্থিতিরি জন্য একে অপরকে দায়ী করছে পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনগুলো।

স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন সময় নানা কারণে পার্বত্য তিন জেলার সংঘাত সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটলেও এবারের পরিস্থিতি হঠাৎই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবি, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের এই সংকট সহজে কাটবে না।

যদিও পার্বত্য অঞ্চলের একটি বাঙালি সংগঠন হঠাৎই পাহাড় অশান্ত হওয়ার পেছনে অন্য রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে দাবি করেছে।

ঘটনার সূত্রপাত্র যেভাবে

বুধবার খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় মো. মামুন নামের এক যুবক গণপিটুনীর শিকার হন। পরে সে মারাও যান।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি দীঘিনালার লারমা স্কয়ার পর্যন্ত গেলে সেখানে হামলা হয় বলে অভিযোগ বাঙালি ছাত্রদের।

বাঙালি ছাত্র তাইফুল ইসলামের অভিযোগ, “এই মিছিলের ওপর হামলা পাহাড়িরা হামলা চালায়। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।”

দীঘিনালার কয়েকজন বাঙালি অভিযোগ করে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পাহাড়িদের কেউ কেউ হঠাৎই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালাতে শুরু করে। যে কারণে আরো বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালিরা।

তবে পাহাড়িদের অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, বাঙালি ছাত্রদের মিছিলটি ছিল উস্কানিমূলক যেটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

মিনতি চাকমা নামের লারমা স্কয়ার বাজারের এক দোকানি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যে সময় গন্ডগোল চলছিল, তখন মজসিদের মাইক ব্যবহার করে বলা হয়েছিল পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরপরই ভাঙচুর শুরু হয়।”

স্থানীয়দের ধারণ করা বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ রয়েছে বিবিসি বাংলার কাছে। তাতে আগুন ও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দেখা যায়।

দোকানে আগুন কারা দিয়েছে সেটি নিয়ে কোনো পক্ষই প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বাজারের কেউ কেউ বিবিসি বাংলার কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের কেউ কেউ তিন চারটি দোকান ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী দীঘিনালার লারমা স্কয়ার বাজারের ওই ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১০২টি দোকান পুড়েছে। যার মালিকানা রয়েছে বাঙালি ও পাহাড়ি উভয়ের।

ঐ ঘটনার পরে যা যা হলো

বৃহস্পতিবার বিকেলে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দোকানের আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করে।

পাহাড়িদের কেউ কেউ লাইভে জানান, তাদের দোকান বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাঙালি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতিও ক্ষোভ জানাতে দেখা যায়।

মুহূর্তেই সে সব তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদী মিছিল বের করে পাহাড়ি সংগঠনগুলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ ও বাজারে আগুনের ঘটনার পর রাতেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে। এতে দুইজন মারা যায়। আর দীঘিনালার ঘটনায় মারা যায় একজন।

পরদিন শুক্রবার সকালে রাঙামাটিতে মিছিল বের করে পাহাড়িরা। সেখান থেকে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাট, যানবাহনে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠে।

লাঠিসোঁটা নিয়ে বাঙালিরাও রাস্তায় নামে। পাহাড়িদের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙামাটিতে একজন মারা যায়।

পরে রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

এই ঘটনায় শনিবার থেকে তিনদিনের অবরোধের ডাক দেয় পাহাড়িরা। অবরোধে বন্ধ হয়ে যায় এই তিন জেলার যান চলাচল।

শুক্রবার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র প্রতিষ্ঠান আইএসপিআর এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে যে সেনাবাহিনীর সাথে 'গোলাগুলিতে' তিনজন নিহত হয়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করছে সেনাবাহিনী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১১টি গুজব

দীঘিনালার সংঘর্ষ ও আগুনের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

ফেসবুকে অনেককেই বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। এরমধ্যে এমন কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল, যে সব ছবি এই ঘটনার না।

ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সব ছবি ও তথ্য ছড়ানো হয়েছে এমন কিছু তথ্য ও ছবির তথ্য যাচাই করেছে।

রিউমার স্কানার পার্বত্য চট্টগ্রামের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত ১১টি গুজব শনাক্ত করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

এসব গুজবের মধ্যে ছিল জীবিত ব্যক্তিকে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে বলে প্রচার করা, ভিন্ন দেশের ও অন্য ঘটনার ছবি প্রকাশ করা কিংবা ভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদের ছবিকে পার্বত্য অঞ্চলের সংকটের প্রতিবাদ হিসেবে প্রচার করা।

গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভাঙা মূর্তির ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল সারাদেশে।

এসব গুজবের প্রসঙ্গ তুলে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মি. সহিদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গুজব মারাত্মক সন্ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি জানান, এই ঘটনায় যারা এসব গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উস্কে দিয়েছে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পাড়া মহল্লায় সম্প্রীতি কমিটি

দীঘিনালার ঘটনার রেশ খাগড়াছড়ি ও তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ চারজন উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকায় আসেন।

এসময় জেলা প্রশাসন, পাহাড়ি, বাঙালি বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে বৈঠকও করেন তারা।

পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রীতি রক্ষা ও সংঘাত সহিংসতা এড়াতে এসব এলাকায়, পাড়ায়-মহল্লায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সম্প্রীতি সভা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি-বাঙালিরা মিলে সম্প্রীতি সভা করেছেনও।

পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবি, এই সংঘাত সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোকে উস্কে দেয়। সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে এটি বন্ধ করতে হবে।”

খাগড়াছড়ির সমঅধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি সাম্প্রদায়িক অবস্থা থেকে বের হয়ে অসম্প্রাদায়িক পর্যায়ে যেয়ে এখানে আমরা যেন সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারি। সেই চেষ্টা করতে হবে।”

এ সময় প্রশাসনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মি. সহিদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই ঘটনার রেশ পরবর্তীতে যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে সে কারণে আমরা সম্প্রীতি বৈঠকের পাশে আরো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”

আটকা পড়েছিল দেড় হাজার পর্যটক

শনিবার থেকে পাহাড়ি সংগঠনের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন।

সেখানে খাবার ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সোমবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে ও অসুস্থতার কারণে হেলিকপ্টারে করে ফিরছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আটকা পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে সোমবার সারাদিন চেষ্টা করেও পারিনি। অবরোধ শিথিল করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম তাদের, তাতে কোনো কাজ হয়নি।”

এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে পানির ব্যবস্থা করা গেলেও খাবারের সংকটটা কাটেনি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোড়ে মোড়ে চলছে সেনাবাহিনীর টহল।