News update
  • Hadi's condition 'very critical' after bullet causes 'massive brain injury'     |     
  • DMP intensifies drive to arrest attackers of Hadi     |     
  • Tarique terms attack on Hadi a conspiracy against democracy     |     
  • Man held for tying, beating up youth on theft suspicion in Gazipur     |     
  • Sajid (2) lifted after 32 hrs from deep Rajshahi well, not alive     |     

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে উত্তাল বরিশাল

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2025-08-14, 7:55am

brishaal-2f611ab7507a75be7eab963fd95849931755136543.jpg




স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের তিন দফা দাবিতে বুধবারও (১৩ আগস্ট) বরিশালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে ছাত্রজনতা। এতে মহাসড়কের দুইপাশে অসংখ্য যানবাহন আটকে চরম যাত্রীদুর্ভোগ হয়। পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আন্দোলনকারী ও বাসশ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়াপালটাধাওয়া সংঘর্ষ বাঁধে। এতে চার থেকে পাঁচজন আন্দোলনকারী এবং একজন বাসচালক আহত হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল সংলগ্ন একই মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে আমরণ গণঅনশন ও মহাসড়ক অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের প্রধান সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।

এদিকে ১৭ দিন ধরে চলা এই আন্দোলনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জনদুর্ভোগের অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর। বুধবার দুপুরে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠিত সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রধান গেটে একই দাবিতে আন্দোলনরত তিনজন ছাত্রজনতার অনশন ভাঙাতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বুধবার শেবাচিম হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরাও নিরাপত্তা চেয়ে ছয় দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কর্মবিরতিসহ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে গত ১৭ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্রজনতা। এই দাবিতে গত ছয় দিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করছে ছাত্রজনতা। এর মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে চার ঘণ্টা, সোমবার সাড়ে চার ঘণ্টা এবং রোববার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। 

এছাড়াও শনিবার মহাসড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের শ্রমিক ও ছাত্রজনতা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেদিন ছাত্রজনতা আড়াই ঘণ্টা ও বাসশ্রমিকরা পৃথক সময়ে দেড়ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া গত শুক্রবার সাত ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার আড়াই ঘণ্টা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্রজনতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

বুধবার নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাসটার্মিনালে পৃথক অবরোধ করলে অন্যান্য দিনের মতো বরিশাল স্থবির হয়ে পড়ে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে যায়। মহাসড়কের দুইপাশে অসংখ্য যানবাহন আটকে চরম যাত্রীভোগান্তি হয়। ১৭ দিন ধরে চলা আন্দোলনে গত ৬ দিন ধরে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা নগরীর নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাসটার্মিনালে অবরোধ করছে ছাত্রজনতা।

এছাড়া মহাসড়কের সাগরদী পয়েন্ট অবরোধ করা হয়। সেখানে সাগরদী কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এর আগে গত সোমবার থেকে শেবাচিম হাসপাতালের সংস্কারে সাত দফা দাবিতে অনশনে বসেছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বুধবার বরিশালে আসেন। তিনি দুপুর ১২টায় শেবাচিম হাসপাতালে যান। প্রথমে তিনি জরুরি বিভাগের গেটে আন্দোলনের সমর্থনে অনশনরত তিনজনের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবে না বলে জানায়। পরে তিনি শেবাচিম হাসপাতালের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসিনক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।

সভাতে মহাপরিচালক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, স্বাস্থখাত সংস্কারে শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি তুলেছে তা সবগুলো স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। এগুলো রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার হবে। আন্দোলনকারীরা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পড়েনি। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জানা গেছে, এ আন্দোলনে তৃতীয় কোনো শক্তির ইঙ্গিত আছে। এমনকি উদ্দেশ্যেমূলকভাবে স্কুলের শিশু শিক্ষাথীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে না সরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

সভায় বরিশাল জেলা ডক্টরস অ্যাসোশিয়েসন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি ডা. কবিরুজ্জামানসহ একাধিক চিকিৎসক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তায় ছয় দফা দিয়েছেন। তা বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টা পর তারাও কাজ বন্ধ করে দেবেন। অপরদিকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ ও সাহাবউদ্দিন মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবায়ন দৃশ্যমান চাই। তা না হলে আন্দোলন চলবে। দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সভাকক্ষ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুইঘণ্টার মত সভা করে বিকেল ৩টায় মহাপরিচালক শেষ অনুরোধ জানাতে আমরণ অনশনকারীদের কাছে যান। তখনও অনশনকারীরা মহাপরিচালকের আহ্বান প্রত্যাখান করে দাবির বাস্তবায়ন চায়। পরে মহাপরিচালক রাজধানীর উদ্দেশে বরিশাল ত্যাগ করেন। এই সভায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) আহসান হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

এরপর বিকাল পৌঁনে ৪টার দিকে নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাসশ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চার থেকে পাঁচজন আন্দোলনকারী এবং একজন বাসচালক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিকেল ৫টার পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর শুরু হয় শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা বাস টার্মিনাল দখলে নেয় শ্রমিকরা। অবস্থা বেগতিক দেখে সরে যায় ছাত্রজনতা।

নথুল্লাবাদ বাস শ্রমিক আব্দুস সালাম খান বলেন, কেন তারা ড্রাইভারকে মারল। ড্রাইভার নিজেকে রক্ষায় বাসের ছাদে উঠলেও সেখানে গিয়ে ছাত্ররা মারধর করে। নিত্য এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া যাবে না। নথুল্লাবাদে আর আন্দোলন হবে না। আন্দোলন যারা করে তারা যেন শেবাচিমে গিয়ে করে। শ্রমিকের পেটে ভাত নেই, এ আন্দোলন আমরা মানি না।

তবে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মহিউদ্দন রনি বলেন, আন্দোলনে ছাত্ররাও নেমে পড়েছে। বুধবার সাগরদি মাদ্রাসার ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। আপনারা যে যেভাবে পাড়েন স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারে আন্দোলনে নেমে আসুন। তিনি আরও বলেন, নথুল্লাবাদে শ্রমিকরা তাদের ওপর বিকেলে হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের বেশ কয়েকজন আহত রয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শ্রমিকদের মারামারি হয়। পরে ছাত্ররা বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত রয়েছে।