
বাংলাদেশে জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলমান একটি সাধারণ ধারণা হলো—১২ বছর ধরে দখলে থাকলে জমির মালিকানা পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। আইনজীবীরা বলছেন, একটানা ১২ বছর দখল থাকলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকানা আসে না; এর জন্য আইননির্ধারিত বেশ কিছু কঠোর শর্ত পূরণ করতে হয়।
১৮৯৮ সালের ‘তামাদি আইন’ (Limitation Act) অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি নিরবিচারে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং প্রকাশ্যভাবে ১২ বছর একটি জমির দখলে থাকেন এবং প্রকৃত মালিক ওই সময়ের মধ্যে দখল ফিরিয়ে নিতে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেন, তবে দখলদারের পক্ষ থেকে মালিকানা দাবি করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এটিই আইনে Adverse Possession হিসেবে পরিচিত।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন স্রেফ দখল নয়, চারটি মৌলিক শর্ত পূরণ হলেই কেবল মালিকানা দাবি করা সম্ভব।
১. নিরবিচার ও শান্তিপূর্ণ দখল
দখল থাকতে হবে প্রকাশ্য, শান্তিপূর্ণ ও নিরবিচ্ছিন্ন। কোনো সময় সংঘাত, বিরতি বা কারও বাধার প্রমাণ থাকলে এই দখল আইনীভাবে গণ্য হয় না।
২. কোনো চুক্তি ছাড়া দখল
ভাড়াটে, কেয়ারটেকার, লাইসেন্সধারী বা মালিকের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি কখনোই ১২ বছর পর মালিকানা দাবি করতে পারেন না। দখল হতে হবে সম্পূর্ণরূপে মালিকের অনুমতি ছাড়া।
৩. প্রকৃত মালিকের প্রতিরোধ না থাকা
১২ বছর সময়সীমার মধ্যে যদি আসল মালিক কোনো ধরনের বাধা দেন নোটিশ, মামলা বা উচ্ছেদের চেষ্টা—তাহলে দখলদারের মালিকানা দাবি করার অধিকার বাতিল হয়ে যায়।
৪. আইনগত চ্যালেঞ্জহীন দখল
১২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মালিকের করা যেকোনো মামলা বা প্রশাসনিক অভিযোগ দখলকে আইনীভাবে চ্যালেঞ্জ করে। তখন আর মালিকানা দাবি করা সম্ভব হয় না।
ফরিদপুরের এক পরিবারের অভিযোগ তাদের দলিল ও নামজারি থাকা সত্ত্বেও অন্য ব্যক্তি দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে জমিতে বসবাস করছেন। আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রকৃত মালিক দ্রুত আইনি ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে জটিলতা আরও বাড়তে পারে
আইনজীবীদের পরামর্শ, যারা অন্যের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রাখছেন, তাদের অবশ্যই তামাদি আইনের সব শর্ত পূরণের প্রমাণ রাখতে হবে। আর প্রকৃত মালিকদের জন্য জমি ভাড়া বা কেয়ারটেকার নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তি রাখা এবং সময়মতো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জমি বাংলাদেশের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। ভুল ধারণা বা অসচেতনতার কারণে মালিকানা হারানো বা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জমি-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় দলিলপত্র নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।