ড. আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩-তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। এ দায়িত্ব গ্রহনের আগে তিনি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
এছাড়াও ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি আইএমএফের ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগে কাজ করেছেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নীতি উন্নয়ন ও পর্যালোচনা বিভাগ এবং মধ্যপ্রাচ্য বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮৯-১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ সময়ে তিনি মূল্য সংযোজন কর প্রবর্তনের সাথেও নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, সুদান ও ইয়েমেনে আইএমএফের সিনিয়র আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৯ সালে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদেও নিযুক্ত হয়েছিলেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে কেমন গভর্নর হিসেবে দেখতে চাই? এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণ করতে চাই, কয়েক বছর পূর্বে আমরা শ্রীলংকাকে অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের মধ্যে পড়তে দেখেছি যার জন্য সবচেয়ে বেশি দায় দেয়া হয় সাবেক রাজাপাকসে সরকারের আমলের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। সে দেশের গভর্নর ডন লাক্সমানের অধীনে ক্রমাগত মুদ্রা ছাপিয়ে বাজারে তারল্য বাড়িয়ে সমালোচনার শিকার হয় সিবিএসএল।
পরবর্তীতে অজিত নিভার্দ কাবরালের সময়ে ভুল মুদ্রানীতির কারণে ডলারের বিপরীতে লংকান রুপির টানা অবমূল্যায়ন ঘটে ও রিজার্ভের উপর ব্যাপক চাপ পরে। রিজার্ভ শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসায় ডলারের অভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিতে হয় শ্রীলংকাকে এবং আমদানী মূল্য ও অন্যান্য দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ২০২২ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণায় বাধ্য হয় দেশটি। ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে এ সময় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৬০ শতাংশে গিয়েছিল। ফলে আর্থিক দেউলিয়াত্ব, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের সংকটের কারণে ক্ষুব্ধ লংকাবাসী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল।
রাষ্ট্র ও প্রশাসন ভেঙ্গে পড়া ও জনগণের বিক্ষোভের কারণে সে সময় রাষ্ট্র ও সরকারের নির্বাহী প্রধানরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। দেশ যখন বিপর্যয়ের মুখে তখন দেশটিতে ১৭-তম গভর্নর হিসেবে হাল ধরেন আপাদমস্তক ক্যারিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকার ড. নন্দলাল বীরাসিংহে। তার কার্যকরী পদক্ষেপ যেমন সুদহার নীতি, নগদ অর্থ প্রবাহ নীতি ঋণ নীতি সহ অন্যান্য সঠিক নীতি গ্রহণের ফলে দেশটি দ্রুত বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় তেমনি মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশ হতে ২০২৩ সালে ৪ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসে ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংকিং সেক্টর ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাড়িয়ে। এর কারণ হিসেবে যদি দেখি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ড. ফরাসউদ্দিন, ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ড. আতিউর রহমানের মতো গুণীজনকে পেলেও পরবর্তীতে এর ব্যত্যয় করে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আমলাতন্ত্রের বিশ্বাসী সচিব জনাব ফজলে কবির ও এরপরে জনাব আব্দুর রউফ তালুকদারকে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে জাতি, ধর্ম ও নাগরিকত্বের কোনো তোয়াক্কা না করে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, গবেষণা, মুদ্রা অর্থনীতিতে জ্ঞান প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গভর্নর নিয়োগ প্রদান করা হলেও বাংলাদেশে গভর্নর নিয়োগের এমন নিয়ম নীতি না থাকায় ড. আতিউর রহমানের পর সরকার উল্লেখিত যোগ্যতার ভিত্তি ব্যতিরেকে এ দুজনকে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্র স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক তুষ্টি সাধনের সূচনা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
যার ফলে, সুদহার ও বিনিময় হারের নীতি সঠিকভাবে নিতে না পারা, রাষ্ট্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সামনে রেখে খেলাপি ঋণ বাড়িয়ে, ডলার সংকটকে মন্দ থেকে মন্দতর করে তোলা হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপী ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা সেটি ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ শতাংশ এবং মার্চ ২০২৪ শেষে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
একটি দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে ঋণ খেলাপীর হার কমে আসলেও বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথে এ ধারা বেড়েই চলেছে। খালি চোখে দেখলে মনে হবে যারাই ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে তারা প্রায় সবাই লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে অথবা দেশের স্বার্থে লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।আপাত দৃষ্টিতে এটি মনে হলেও আদতে তা নয়। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণে জর্জরিত খেলাপিদের ‘ঋণমুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে পুরো ঋণের ৫ বা ১০ ভাগ দিয়ে খেলাপি কলঙ্ক ঘুচিয়ে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে।এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসার লস কাটিয়ে ওঠার কথা বলে আরও ঋণ নেয়ার সুযোগ পান ও তা অনৈতিক কাজে লাগাতে শুরু করেন।পরবর্তীতে সে ঋণগুলোও খেলাপী ঋণে পরিনত হয় এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় বারবার এমন সুযোগ দেয়া হয়েছে। পরিণামে ব্যাংকগুলো রুগ্ন হতে রুগ্নতর অবস্থায় গেছে দিনদিন।
ঋণ প্রশাসন সঠিক না থাকা ও পুরো ঋণ পরিশোধ না করেই পূণরায় ঋণগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার কারণে দিনদিন অসাধু ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে যার ফল ভোগ করছে পুরো রাষ্ট্র। জিডিপির অংশ হিসেবে ব্যক্তি বিনিয়োগ না বেড়ে বরং অর্থ পাচার বেড়েছে এবং প্রবৃদ্ধি কমছে। ঋণখেলাপি, কর ফাঁকিদাতা ও মুদ্রা পাচারকারীরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো এমনভাবে চক্রবূহ্য তৈরী করেছিল যার কারণে এ খেলাপী ঋণ দিনদিন ঝড়ের গতিতে বেড়ে যাচ্ছিল।
এ বূহ্য অথবা অপরাধের হাত থেকে দেশ যেন রেহাই পাচ্ছিল না ভেদ করে বাইরে আসার জন্য। পরিণামে ডলারের বিপরীতে টাকার মান যেমন কমতে থাকে এবং দেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যে দারুণ প্রভাব পড়তে শুরু করে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হতে শুরু করে। এ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি আর্থিক চাপে পড়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়, সরকারী চাকুরীজীবিসহ স্বল্প আয়ের মানুষেরা।বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও সে অনুপাতে মানুষের আয় না বাড়ায় তারা সঞ্চয়ী হিসাব ভেঙ্গে, ঋণ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। ফলে আয় বৈষম্য দিন দিন তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে।
এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে বেড়ে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছিলো যা সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল। কিন্তু নীতিগত সমন্বয়হীনতা ও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এ রিজার্ভ হতে ঋণ দেয়ার মতো একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও ওই সময় অর্থনীতিবিদরা রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার বিরোধিতা করছিলো কিন্তু আমলাতন্ত্রের গভর্নরা তা আমলে নেননি।
টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরার জন্য। কিন্তু বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক না করার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশী হওয়ায় রেমিটেন্স হুন্ডির মাধ্যমে আসার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার সরবরাহ কমে যাওয়ায় আমদানী ব্যয় মেটাতে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ হতে ডলার বিক্রি বেড়ে যায়। এছাড়াও কোভিডের পরপর ২০২৩–২৪ সালে বড় বড় প্রকল্পের জন্য যে বিভিন্ন সুদে অর্থ নেওয়া হয়েছে তা পরিশোধ করার কারণেও মজুতের ওপর চাপ বেড়েছে। ২০২০–২১ অর্থবছরে দেশে আমদানি ৬০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের হলেও ২০২১–২২ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৫০ ডলার।
ফলে সার্বিক ভারসাম্য ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছে যা আগের বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার ধনাত্মক। আমদানী ব্যয় অনেক বাড়লেও সে সময় রপ্তানি আয় বাড়েনি সে অনুপাতে । যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে সে সময়গুলোতে সে পরিমাণ রপ্তানি আয়ও আসেনি দেশে। এ রপ্তানি আয় ফেরত নিয়ে আসার জন্য কাযকর কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক হতে। উক্ত রপ্তানি আয় ফিরে আনার জন্য শুধুমাত্র রপ্তানি ভর্তকী/নগদ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যার কারণে রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েজিং করে হুন্ডির টাকা বৈধ চ্যানেলে নিয়ে আসার সুযোগ পায় সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা। এসবের কারনেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে ও টাকার অবমূল্যায়ন হতে থাকে।
উপরোক্ত সমস্যা সমাধানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প নেই তাই আইনের চোখে সবাই সমান এই নীতি অনুসরণ করে প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উপযুক্ত নিয়ম-নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে যেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিরাজমান থাকবে না। ঋণ যেন খেলাপি বা অনাদায়ী না হয়ে যায় এবং ইতোমধ্যে যে ঋণগুলো খেলাপী ঋণে পরিণত হয়েছে তা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থ ঋণ আদালততে প্রায় পৌনে এক লাখ খেলাপি ঋণের মামলা ঝুলে রয়েছে যার ঋণ মূল্য প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত কাযকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি দাড় করাতে হবে। ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ায় তা বাড়াতে কাযকর ব্যবস্থা গ্রহণ ।
একটি দেশের খেলাপি ঋণের অনিয়ন্ত্রিত হার ও স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যয়নের কারণে অর্থনীতিতে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিপর্যয়ের মূল কারণ খেলাপি ঋণের লাগামহীনতা। এ লাগাম টেনে ধরে তা আদায়ের কার্যকরী ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে নিতে হবে এবং খেলাপী ঋণের তথ্য গোপন না করে প্রকৃত তথ্য ব্যাংকের ওয়েবসাইডে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধিকাংশ ব্যাংকের মালিকানা যাতে বড় গুটিকয়েক শিল্পগোষ্ঠীর কব্জায় চলে না যায় তারও কাযকর ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ বিগত সময়ে আইনগতভাবেই/আইন সংশোধন করে ব্যাংকের পরিচালকদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের সংশোধনীতে একজন পরিচালককে দুই দফায় ছয় বছরের জন্য পদে থাকার বিধান রাখা হলেও ২০১৮ সালে সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ০৯ বছর করা হয়৷ এরপরে এটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে৷ এর ফলে গুটিকয়েক ব্যাংক পরিচালকই বছরের পর বছর পরিচালনা পরিষদে থেকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছে যা অনেক বেসরকারি ব্যাংককে আরো সমস্যায় ফেলতে পারে।
এছাড়া আমরা দেখেছি স্বাধীনতাপূর্ব ১২টি ব্যাংক একত্র করে ৬টি সরকারি ব্যাংকে রূপান্তরের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে অপ্রয়োজনে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিত্য নতুন ব্যাংক গঠনের অনুমতি দেয়া হলেও ব্যাংকগুলো অনৈতিকতা ও সুশাসনের অভাবে রুগ্নতর হলেও দেশে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাংকের এক্সিট প্লান নিতে দেখা যায়নি। দেশে অনেক ব্যাংক বাড়লেও সে অনুসারে কাস্টমার না বাড়ায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে অসম প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে এবং সুশাসনের ব্যাঘাত ঘটায় অনেক ব্যাংক বর্তমানে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ শোচনীয় অবস্থা থেকে উত্তরনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ খর্ব করা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের কর্তৃত্ব কমানো জরুরী। এটি গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বকীয়তা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে । ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদসমূহে পদোন্নতিতে উক্ত ডিভিশনের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণেও ব্যাংকের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছে বলে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করেন। দরকার হলে সরকারের উদ্যোগে ফাইন্যান্স ডিভিশনের বিলুপ্ত করাও যেতে পারে ।
এছাড়াও আর্থিক খাতের দুর্নীতি দূরীকরণ ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতে গভর্নর পদটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পরেই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হলে অন্যরা রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে না। কারণ বাংলাদেশে গভর্নরের অবস্থান কেবিনেট সচিবের নিচে হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহনের রাজনৈতিক ও মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ নিতে দেখা গেছে বিগত আমলে।
সর্বোপরি দেশের বিরাজমান সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বপ্নপূরণ তথা দেশের কল্যাণে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি হ্রাস, উচ্চ খেলাপি ঋণ কমানো, রিজার্ভ সংকট কমানো ও সুশাসন নিশ্চিতকরণসহ ব্যাংকিং খাতের মধ্যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডঃ আহসান এইচ মনসুর স্যারকে ড. নন্দলাল বীরাসিংহের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাহলে দেশ রক্ষা পাবে ব্যাংক খেকোদের হাত থেকে এবং জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে