News update
  • Action over ban on AL activities after getting official gazette: CEC     |     
  • Rickshaws and life in Dhaka City     |     
  • Crucial Sylhet road, bridge collapse for Kushiyara erosion     |     
  • Cannes, global Colosseum of film, readies for 78th edition      |     
  • ‘July Unity’ for next course of action based on consultations     |     

শিক্ষকের মর্যাদা

মতামত 2025-05-04, 12:53am

nazrul-islam-enayetpur-d535aa1c26118458cd6080737a9f5aca1746298389.jpg

Nazrul Islam



নজরুল ইসলাম

আমি যে যুগের মানুষ,সে যুগে আমরা শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম বা প্রণাম করতাম।মনে করতাম একজন শিক্ষক আমার শিক্ষা গুরু, তাকে সন্মান করে দোআ নিলে আমি পড়াশুনায় ভালো করতে পারবো। শিক্ষকের সামনে কোনো রকম অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকতাম,কারণ শিক্ষকের সামনে খারাপ আচরণ করলে বেয়াদবি হয় । শিক্ষকের সু-নজরে পড়লে আমি ক্লাসে পড়াশুনায় ভালো করতে পারবো। শিক্ষক আমার প্রতি একটু ভালো খেয়াল রাখবেন এ ধরণের ধারণা মনে মনে পোষণ করতাম ।

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা : একজন শিক্ষক বর্তমান যুগে শ্রেণিকক্ষে যদি বলেন ‘সদা সত্য কথা বলিবে, কখনও মিথ্যা বলিবে না’। ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমান সময়ে শিক্ষকের এ উপদেশ একবারেই গ্রাহ্য করে না বা মূল্যহীন। কারণ দেশে সত্য কথার কোনো দাম নেই। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষক ক্লাসে পাঠ দান করতে গিয়ে যদি বলেন , ‘চুরি করিবে না, চুরি করা বড় দোষ।' দেশে এখন চলছে চুরি করার মহোৎসব। রিলিফ চুরি, রাষ্ট্রের টাকা চুরি, ব্যাংকের টাকা চুরি ইত্যাদি এ সব দেশের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। চুরি করা ছাড়া তো তাড়াতাড়ি বড়ো লোক হওয়া যায় না। কাজেই এই যুগে কোনো সৎ উপদেশ দিলে ছেলেমেয়েরা তা শুনবে না ; কারণ ওরা দেখে তার বাবা, ভাই , আত্মীয়স্বজন চুরি করে রাতারাতি বড়োলোক হয়েছে। যারা চুরি করে না বা চুরি করা

পছন্দ করে না,তাদের সংসারের অবস্থা “নুন আনতে পন্থা পুরায়”। ছেলেমেয়েরা জানে “লেখাপড়া করে যেই, অনাহারে থাকে সেই।“ আমাদের যুগে পরীক্ষার হলে, নকল করা ছেলেমেয়েকে ভালো দৃষ্টিতে দেখতাম না, এই সব ছেলেমেয়ে নকল করে জীবনে ভালো কিছু করতে পারতো না। কিন্তু আজকালকার যুগে নকল করা ছেলেমেয়ে, রাজনীতি করে,সরকারের দলকে সমর্থন দিয়ে তার বিনিময়ে দুর্নীতি করে রাতারাতি বড়োলোক হয় এবং সৎ নিরীহ ছেলেমেয়ে ভালো পড়াশুনা করে ও বেকার থাকে এবং পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারে না।

অতীতে বাংলাদেশে শিক্ষক ছিলেন সমাজের দর্পণ, শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি । সব সময় সকল শ্রেণির মানুষের কাছে শিক্ষকরা ছিলেন সম্মানিত। প্রাচীন বাংলায় মক্তব,প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সম্মানের বিষয়টি ছিল সবার উপরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ঐতিহ্য শিক্ষকরা হারিয়ে ফেলেছে , তার কারণ আজকাল যাদের পয়সা আছে তারা একটি ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য

কয়েকজন গৃহ শিক্ষক রাখে,শিক্ষকদের পয়সার বিনিময়ে ব্যবহার করে। তাছাড়া শিক্ষক ক্লাসে ওই সব ছেলেমেয়েকে ভালো দৃষ্টিতে দেখে যারা আলাদাভাবে পয়সা খরচ করে ওদের নিকট পড়াশুনা করে । সে যুগে শিক্ষক ক্লাসে পুরা মনোযোগ দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতেন , আজকাল কে কত বাড়তি পয়সা খরচ করবে তার উপর ভালো-মন্দ নির্ভর করে। সে যুগে গ্রামে গঞ্জে পড়াশুনার ভালো পরিবেশ ছিল, গ্রামের স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা ভালো করতো। আজকাল গ্রামে গঞ্জে পড়াশুনার পরিবেশ নেই। যার পয়সা আছে সে বা তারা ছেলেমেয়েদের মাস্টারমাইন্ড,স্কলাস্টিকা, ভিকারুন্নেসা, হলিক্রস, সাউথ-নর্থ ইউনিভার্সিটি তে পড়াশুনা করিয়ে বিদেশে পাঠায়। এই হলো বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি।

গত এক মাসের ও অধিক সময় থেকে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষয়ত্রীদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য করানো হচ্ছে। এ সব শিক্ষকদের অনেকেই ছাত্র -ছাত্রীদের দ্বারা নানাহ ভাবে হয়রানি করেছে বলে খবরে প্রকাশ। আমাদের যুগে শিক্ষক -ছাত্র যে সম্পর্ক ছিল, তা কালের পরিবর্তনে আজ আর দেখা যায় না।

কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষকের মর্যাদা: কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষকের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। শিক্ষকরা শুধু শিক্ষাদানেই সীমাবদ্ধ নন; বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কানাডার প্রতিটি প্রদেশে শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

তাছাড়া শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধাও বেশ ভালো। তারা সাধারণত ভালো বেতন পান এবং বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ( বেনিফিটস), যেমন স্বাস্থ্য বীমা ও পেনশন সুবিধা উপভোগ করেন। এছাড়া, শিক্ষকদের কাজের পরিবেশও বেশ সহায়ক এবং সম্মানজনক।

এ দেশে শিক্ষক -ছাত্রছাত্রী এবং বাবা-মা সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; প্রতিটি স্কুলে “শিক্ষক ও কাউন্সেলিং” সিস্টেম থাকায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার সঙ্গে তার মানসিক,সামাজিক অগ্রগতি ও ভালোবভাবে দেখাশুনা করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি স্কুলে “অভিভাবক- শিক্ষক পরিষদ” (Parents and Teachers council )রয়েছে যারা স্কুলের পড়াশুনা ও ছেলেমেয়েদের নানাহ সুবিধা,অসুবিধা দেখাশুনা করে। এ

ছাড়া মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে নিযুক্ত একজন “স্কুল ট্রাস্টি” থাকে যার কাজ তার এলাকার প্রতিটি স্কুলের যাবতীয় কাজ ভালোভাবে দেখাশুনা করা এবং সময় সময় উপদেশ দেয়া।

এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে যে সব শিক্ষক ও শিক্ষয়ত্রী নিয়োগ দেয়া হয় তাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা “ইউনিভার্সিটি ব্যাচেলর অব এডুকেশন সহ স্নাতক ডিগ্রি” এবং কয়েক বৎসরের শিক্ষগত অভিজ্ঞতা বা ব্যাচেলর অফ এডুকেশন কয়েক বৎসরের স্বেচ্ছাসেবক অভিজ্ঞতা। আমাদের দেশগুলি থেকে যে সব শিক্ষক বা শিক্ষয়ত্রী এ দেশে আসে,তাদের পুনরায় এ দেশে ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অফ এডুকেশন কয়েক বৎসরের স্বেচ্ছাসেবক অভিজ্ঞতা নেয়ার পর পার্ট টাইম কাজ শুরু করতে হয়, কয়েক

বৎসর কাজ করার পর স্থায়ী কাজ হয় অথবা সারাজীবন অস্থায়ী হিসাবে কাজ করতে হয়।

কানাডা শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত উন্নতি করার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে :

ক) কানাডায় সু-প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশ এবং এ দেশে শক্তিশালী আইনি কাঠামো রয়েছে যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। আমরা বাংলাদেশে গত ৫৩ বৎসরে ও গণতন্ত্রের ধারে কাছে ও যেতে পারি নি। বলতে লজ্জার কথা, আমাদের দেশে কোনোদিন শক্তিশালী আইনি কাঠামো,সঠিক গণতন্ত্র ফিরে আসবে কিনা তা ও সন্দেহ রয়েছে।

খ) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: একটি শক্তিশালী এবং বলিষ্ঠ অর্থনীতি, অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।অনুন্নত দেশগুলিতে অস্থির অর্থনৈতিক অবস্থা সব সময় বিরাজ করে।

গ) সামাজিক সংহতি: উচ্চ সামাজিক সংহতি এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ,জবাবদিহিতা দুর্নীতি হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ঘ ) মিডিয়া এবং পাবলিক ডিসকোর্স: কানাডিয়ান মিডিয়া এবং পাবলিক ডিসকোর্স সংবেদনশীলতার পরিবর্তে নীতি ও প্রশাসনের দিকে বেশি মনোনিবেশ করে, যার ফলে রাজনীতিকে শান্ত পরিবেশ থাকে।

উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে দুর্বল গণতন্ত্র , অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উচ্চ স্তরের দুর্নীতির মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যা তীব্র রাজনৈতিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত ৫৩ বৎসরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভাব,আর্থিক সংকট,দুর্নীতির কারণে দেশে ভয়ানক অরাজকতা বিদ্যমান। বাংলাদেশের মিডিয়া, পত্রপত্রিকা, ফেইসবুক এবং লোকজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে এই দেশ কঠিন সমস্যায় রয়েছে, এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে সবাই এক ছত্রছায়ায় এসে দাঁড়াতে হবে। দেশের এই চরম মুহূর্তে ব্যক্তিগত বা দলগত মতামতের পার্থক্য ভুলে গিয়ে এক হয়ে কাজ করতে হবে।