News conference of the Platform for Democracy held at the National Press Club on Wednesday.
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আমাদের শুভেচ্ছা নিন। আপনারা অবহিত আছেন যে, গত বছর ২০২২ এর ৮ আগষ্ট ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ রাজ‣নতিক ঘোষণা প্রদান করেই গণতন্ত্র মঞ্চ তার যাত্রা শুরু করেছিল। এই রাজ‣নতিক ঘোষণার ভিত্তিতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিদ্যমান গণবিরোধী ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, অ‣বধ সংসদ বিলুপ্তি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন অন্তর্র্বর্তী সরকারসহ সরকার ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারের সুনির্দিষ্ট দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ গণ আন্দোলন জোরদার ও বেগবান করতে সচেষ্ট রয়েছে। প্রায় একই ধরনের দাবিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮-এর নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির চতুর্থ বছর থেকে রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑবিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সাথে গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে।
বস্তুতঃ যুগপৎ আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই আমরা বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সাথে এই অবস্থান গ্রহণ করি যে, চরম কর্তৃত্ববাদী সরকারের পরিবর্তনের পাশাপাশি গোটা অগণতান্ত্রিক, ক্সবষম্যমূলক, জবাবদিহিহীন, নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র, সরকার ও শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন নাহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও বাস্তবে অগণতান্ত্রিক জবাবদিহিহীন সমগ্র ব্যবস্থা পরিবর্তন ঘটবে না; এই অবস্থায় সময়ের ব্যবধানে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন আবার চেপে বসতে পারে। সে কারণে আমরা সংস্কার প্রস্তাবকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে হাজির করেছি। যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসাবেও সংস্কার প্রস্তাবকে উপস্থাপন ও জনপ্রিয় করে তুলতে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। গত কয়েক মাস বিএনপিসহ অপরাপর বিরোধী দলসমূহের সাথে সংস্কারের এসব এজেন্ডা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলার নিরন্তর আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যে আমরা অনেক মূল্যবান সময় পার করে ফেলেছি সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা স্বস্তির বিষয় যে কিছুটা বিলম্বে হলেও আমরা অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি'র সাথে মতৈক্যে পেঁ․ছাতে পেরেছি; আর কিছু প্রশ্নে আমরা এখনও একমতে আসতে পারিনি। আমরা আশা করি এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আরও আলাপ আলোচনা হবে; যাতে সংস্কার নিয়ে মতৈক্য আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। আমরা আমাদের প্রস্তাবসমূহ ৩১ দফায় সন্নিবেশিত করেছি। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত অপরাপর বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহও স্বস্ব অবস্থান থেকে তাদের মতো করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করার কথা। আর সরকারের পদত্যাগসহ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সমন্বয়ে আমরা দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসাবে ১ দফা প্রণয়ন করেছি। আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা এই ১ দফার পাশাপাশি সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবনাও দেশবাসীর সামনে হাজির করছি। আমরা আশা করি গণ-আন্দোলনের ১ দফার এই যে․থ ঘোষণা ও ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব আন্দোলনের রাজনৈতিক ভিত্তি আরও জোরদার করবে, আন্দোলনকে গুণগত দিক থেকে নতুন স্তরে উন্নীত করবে; পাশাপাশি আন্দোলনের প্রতি দেশবাসীর সমর্থন, সহযোগিতা এবং আস্থা-বিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলবে। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি। বর্তমান সরকারের দেশ চালানোর কোন রাজনৈতিক ও অর্থতিক দায়বধতা নেই। তাদের দখলদারিত্বমূলক শাসনে দেশ, জনগণ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বড় ধরনের বিপর্যয়ে নিপতিত হয়েছে। মানুষ অবিলম্বে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান চায়, চায় গুণগত পরিবর্তন। এবার দেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। বিদ্যমান আন্দোলনকে আমরা জন আকাংক্ষার এই পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিজয়ী করতে চাই। আমরা আশা করি আজ আন্দোলনের এই যৌথ ঘোষণার পর দেশব্যাপী রাজপথে গণঐক্য-গণসংগ্রাম আরও শক্তিশালী হবে, গণআন্দোলন গণঅভ্যত্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে আসবে এবং অচিরেই সরকারকে আমরা পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব, সক্ষম হব আন্দোলনের গণদাবিসমূহ বাস্তবায়ন করতে। এই সংগ্রামে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজেদের অবস্থান থেকে যুক্ত হবার উদাত্ত আহ্বান জানাই। একইসাথে আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠন ও জনগণের সকল অংশকেও পরিবর্তনের এই সংগ্রামে ভূমিকা পালন করার আহবান জানাই। যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফার যৌথ ঘোষণা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছি। সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৩১ দফা রূপরেখা বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র এবং সকল নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে নানাভাবে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে মেরামত ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর না করলে দেশ তার কাংক্ষিত লক্ষ্যে এগোতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন দেশে এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তি, এক নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা যাতে করে এই দেশে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না ঘটে। সেই লক্ষ্যে এবং জনগণের সরকার ও জনগণের হাতে দেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হঠানোর আন্দোলনে যুগপৎ ধারায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে নিম্নলিখিত রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক গণতান্ত্রিক সংস্কারের কার্যকর উদ্যেগ গ্রহণ করবে: ১. সংবিধানের এককেন্দ্রীক অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো এবং বিশেষভাবে বিগত এক দশকের বেশী সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হীন উদ্দেশ্যে যেসব অগণতান্ত্রিক ও বিতর্কিত সাংবিধানিক সংশোধনী এনেছে সেসব সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করে রহিত/সংশোধন এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
২, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সকল মত ও পথের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পেঁ․ছানোর জন্য একটি রিকন্সিলিয়েশন কমিশন গঠনের মাধ্যমে জাতীয় সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৩। বাংলাদেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি “নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার” ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
৪। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচারবিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে।
৫। পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
৬। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং উভয় কক্ষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে।
৭। সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আস্থাভোট ও অর্থবিলের বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করা হবে।
৮। সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনয়নের লক্ষ্যে এই সকল প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের আইন প্রণয়ন করা হবে। নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশনের আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল সংবিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে নিয়োগ প্রদান করা হবে।
৯। রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করে সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হবে। ইভিএম নয়, সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। RPO, Delimitation Order এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে। সার্বিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় সবার জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্যান্য অত্যবশ্যকীয় সংস্কার করা হবে। ১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্ন আদালতকে সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত করে উচ্চ আদালতের অধীনস্ত করা হবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২ ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তি এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ চাকরির শৃঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক পরিচালিত হবে এবং এই লক্ষ্যে বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় সৃষ্টি করা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কেবলমাত্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদন্ডে যাচাই করে বিচারক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদন্ডসম্বলিত “বিচারপতি নিয়োগ আইন” প্রণয়ন করা হবে। ১১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেট প্রণয়ন ও কর সংগ্রহের এখতিয়ারসহ অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারী মুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হবে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশে পদশূন্য না হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ না করা এবং আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ না করার বিধান করা হবে। ১২. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি “প্রশাসনিক সংস্কারর কমিশন” গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হবে। ১৩. গণমাধ্যমের পূর্ণস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান ও সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি “মিডিয়া কমিশন” গঠন করা হবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে; এই লক্ষ্যে ICT Act-2006- I Digital Security Act-2018 বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইন বাতিল করা হবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে। ১৪. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা হবে না। দুর্নীতি নিরসনে জনগণের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংঘঠিত অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় হিসাব ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ‘দুদকের’ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী “ন্যায়পাল” নিয়োগ করা হবে। ১৫. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। Universal Declaration of Human Rights অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হবে। গত দেড় দশক যাবত সংঘঠিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। ১৬. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, কর্পোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি “অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন” গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ক্সবষম্য দূরীকরণ করা হবে। ১৭. “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার” এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থ‣নতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির সকল অপতৎপরতা বন্ধ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর ও তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৮. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের বাঁচার মতো ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশু শ্রম বন্ধ করে তাদের জীবন বিকাশের উপযোগী পরিবেশ ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সকল বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে বিমানবন্দরসহ সকল ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত একটেবিল সেবাপ্রাপ্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওড়-বাওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। ১৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে উৎপাদনশীলখাত বিকাশে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হেব। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানি নির্ভরতা পরিহার করে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিস্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিল্পখাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেয়া হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ২০. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভে․মত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা হবে। বাংলাদেশ ভূ-খন্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। ২১. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রেখে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হবে। ২২. ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যার অবদানে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাঁদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এই তালিকার ভিত্তিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণার্থে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড” আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবস¤পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে। ২৪. জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যক্রম ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান বিকাশের নিমিত্তে যুগপোযোগী উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। ঘরে বাইরে, কর্মস্থলে নারী ওপর নির্যাতন বন্ধে কার্যকর আইন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ২৫. বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান ক্সনরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। একই মানের শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। যোগ্য, দক্ষ ও মানবিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সকল খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন খাতে গবেষণা উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকা দেয়া হবে। ক্রীড়া উন্নয়ন ও জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আকাশ সংস্কৃতির ক্ষতিকর প্রভাব ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৬. স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” ও “বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়” এই নীতির ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করে সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যকার্ড চালু করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। দারিদ্র্যবিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো সম্প্রসারিত করা হবে। অর্থ‣নতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। ২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে। কৃষিজমি অকৃষি ব্যবহার নিরুসাহিত করা হবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মকে․শল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এতদসংশ্লিষ্ট রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ সম্প্রসারণ করা হবে। ২৮. দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সারা দেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশের সমুদ্র বন্দর ও নে․বন্দর সমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে। ২৯. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর কার্মকে․শল গ্রহণ করা হবে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। নদী ও জলাশয় দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধে খাল-নদী খনন পুনঃখনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সামুদ্রিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত জরিপ ও মজুদের ভিত্তিতে তা আহরণ এবং অর্থ‣নতিক ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ব্লু ইকনমি’ বিকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩০. তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতকে ক্সবশ্বিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রয়োগকে প্রাধান্য দেয়া হবে। মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রয়োগিক সুযোগ সমৃদ্ধকরা হবে। ৩১. এক জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে শহরে ও গ্রামে কৃষি জমি নষ্ট না করে এবং নগরে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়নের নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করা হবে।
যুগপৎ ধারায় আগামী কর্মসূচি উপরোক্ত ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই, ২০২৩ মঙ্গলবার, ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা। ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪.০০ টা গাবতলী হতে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং ১৯ জুলাই ২০২৩ বুধবার, ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪টা উত্তরার আব্দুল্লাহপুর হতে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে
(সাইফুল হক)
সমন্বয়ক, গণতন্ত্র মঞ্চ
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ
জহুর হোসেন চে․ধুরী মিলনায়তন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা।
১২ জুলাই ২০২৩; বিকাল ৪টা