যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে তিনি পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই চীনা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দশ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
এর আগে তিনি মেক্সিকো ও কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ও মাদক আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে দেশ দুটি থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন।
চীনের বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন যে তার প্রশাসন সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে আলোচনা করছে, জানা যাচ্ছে চীন, মেক্সিকো ও কানাডায় ফেনটানিল (প্রচণ্ড ব্যথার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) পাঠাচ্ছে।
ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নেও শুল্ক প্রয়োগের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। "চীন অপব্যবহারকারী। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুবই খারাপ আমাদের জন্য," বলেছেন তিনি।
"তারা আমাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন। সেজন্যই আমাদের শুল্কের দিকে যেতে হবে। নিজেদের ফিরে পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ। ন্যায্যতা পাওয়ার জন্যও এটা একমাত্র উপায়"।
এর আগে সোমবার শপথ গ্রহণের পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সহযোগীদের সাথে থাকা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা এবং তাতে অন্যায্য কিছু থাকলে তা চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে চীনা একজন শীর্ষ কর্মকর্তা 'সুরক্ষাবাদ'-এর সমালোচনা করেছেন।
চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শেসিয়াং যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে 'উইন উইন' সমাধানের আহবান জানান।
এর আগে নিজের নির্বাচনী প্রচারের সময় মি. ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করেছিলেন।
তবে শুল্ক বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন।
"যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শুল্ক আরোপের দিকে এগিয়ে যায় কানাডাও তার জবাব দেবে—এবং সবকিছুই আলোচনার টেবিলে আছে," বলেছেন তিনি।
অটোয়াও এখন কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কানাডা, চীন ও মেক্সিকো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে তিন শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী দেশ।
শুল্ক হলো ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, এর মাধ্যমে তারা প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, কর্ম সুরক্ষা ও রাজস্ব বাড়াতে পারবেন।
তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এর কারণে আমেরিকানদের বেশি মূল্য দিতে হতে পারেও এবং কোম্পানিগুলো বিদেশীদের পাল্টা পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দাঙ্গাকারীদের ক্ষমার পক্ষে অবস্থান
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরই এক নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে হামলায় জড়িত ১৫শ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, "এসব ব্যক্তিরা কয়েক বছর জেল খেটেছে যেখানে এ দেশে খুনিরাও এমনকি জেলে যায় না"।
এরপর তিনি পুলিশকে সমর্থন করা নিয়েও আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তিনি বলেন, অপরাধের জন্য জেলে যাওয়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও তিনি মুক্তি দিয়েছেন।
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় জড়িতরা মি. ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
"তিনি আমার জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ যা তিনি নিজেও কল্পনা করতে পারেন না," বলছিলেন রাচেল পাওয়েল, যিনি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনায় একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি।
"তিনি আমাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে এনেছেন এবং এজন্য আমি ঋণী। ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প," বলছিলেন তিনি।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সাবেক প্রাউড বয়েজ নেতা হেনরি এনরিক তারিও ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন।
"তিনি আমাদের মুক্তি দেবেন - এ নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ ছিল না," তিনি বলছিলেন এক সাক্ষাতকারে।
"তিনি আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন"।
রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে ২২ বছরের জেল দেয়া হয়।
"২২ বছর সংক্ষিপ্ত দণ্ড নয়, এটা আমার পুরো বাকী জীবন," বলছিলেন তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামো
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি – স্টারগেট গঠনের ঘোষণা দেন, তখন তার সাথে ছিলেন প্রযুক্তি জগতের বড় নাম স্যাম অল্টম্যান ও ল্যারি এলিসন, এছাড়াও ছিলেন জাপানের টেক টাইকুন মাসাইয়শি সন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এই কোম্পানি ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামোতে। এতে করে ১ লাখ নতুন চাকরী তৈরি হবে।
ওরাকলের ল্যারি এলিসন জানান যে টেক্সাসে ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ চলমান। এজন্য সেখানে দশটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পরে বিশটিতে উন্নীত হবে।
ওপেনএআই-এর অল্টম্যান বলেন, এটাই 'এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প'।
আর মাসাইয়শি সন বলেন, 'আমেরিকার সোনালী যুগের সূচনা হলো'।