News update
  • UNRWA Situation Report on Crisis in Gaza & Occupied West Bank     |     
  • Intimidation or bloodshed cannot halt Bangladesh’s march to democracy     |     
  • Khaleda Zia integral to an important chapter in BD history: Yunus     |     
  • Enthusiasm marks Victory Day celebrations across Bangladesh     |     
  • Dhaka-Delhi ties deep; to be shaped by trust, dignity, mutual respect     |     

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ কী?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2025-03-07, 7:35am

c5432f8283eb10544db053ecc7fdc134d9be912e3907b6f3-ca18f2fcdd8895577d652500d6fd007a1741311302.jpg




দীর্ঘ ১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয় গত শনিবার (১ মার্চ)। তবে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে, প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ইসরাইলের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় জোর দিয়েছে হামাস। দু’পক্ষের এমন অবস্থানে উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন পর গাজায় মানবিক ত্রাণের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। দেশটির দাবি, দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন না করে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়া উচিত। কিন্তু হামাস এই প্রস্তাব নাকচ করে জানায়, দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধের স্থায়ী নিরসন ও গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তাবে তারা রাজি নয়।

গত মঙ্গলবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’য়ার সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চালিয়ে যেতে ইসরাইল প্রস্তুত। তবে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য হামাসের হাতে থাকা আরও কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।

তেল আবিবের দাবি, হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জিম্মি আটক রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত এবং ৩৫ জন মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে ইসরাইলের দাবি সামগ্রিক অগ্রগতিকে শূন্যের কোঠায় ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে রুখতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যেকোনো উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত রাখতে এবং চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সম্পূর্ণ দায়িত্ব এর মধ্যস্থতাকারী ও জামিনদারদের।

গত সোমবার টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে হামাসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, হামাস আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নেতানিয়াহু যেকোনে উদ্যোগ এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সৈন্য প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং গাজার পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে হামদান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘকে ইসরাইলকে আলোচনায় ফিরে আসার জন্য চাপ দেয়ার আহ্বান জানান।

যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনের জন্য ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করতে গত মঙ্গলবার মিশরের রাজধানী কায়রোতে এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন আরব বিশ্বের নেতারা। এতে মিশরের দেয়া প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ‘সত্যিকার শান্তি’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

২০২৩ সালে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করে ইসরাইল। এরপর স্থল, নৌ বিমানে টানা ১৫ মাস গাজায় হামলা চালায় ইসরাইল। বর্বর এই হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হন ১ লাখের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজায় মানিবক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয় এবং বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে শুরু করে। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ২৫ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। সেই সঙ্গে ৮ জন জিম্মির মরদেহও হস্তান্তর করে হামাস।

এসময় নিজেদের উদ্যোগে পাঁচজন থাই জিম্মিকেও মুক্তি দেয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল।যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরাইল সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অনিশ্চয়তার মুখে থাকা যুদ্ধবিরতির এ পর্যায়ে ইসরাইল গাজায় সমস্ত মানবিক সাহায্যেরে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানার আছে

গত ১ মার্চ প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরাইল মানবিক সহায়তার সব প্রবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি গাজাকে নরকে পরিণত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। টানা ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসকারী ২৩ লাখ গাজাবাসীকে টিকিয়ে রাখার জন্য খাবার, জ্বালানিসহ সব পণ্যের সরবরাহের ওপর গত রোববার পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল।

সম্প্রতি নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাবটি দেন। প্রস্তাবের অধীনে গাজায় এখনো হামাসের হাতে থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের অর্ধেক প্রথম দিনে মুক্তি পাবেন। এই জিম্মিদের মধ্যে জীবিত ও মৃত উভয়ই থাকবেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্টে নেতানিয়াহু জানিয়েছে, মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরাইল ৫০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরাইল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৫০ দিন বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

ইসরাইলের এই প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়েছে নেতানিয়াহু আরও কলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবে সম্মত। কিন্তু হামাস তা প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির অবস্থান তুলে ধরেছে যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। যদিও প্রথম ধাপের চুক্তিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুর ওদেহ গাজায় ইসরাইলি অবরোধের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ইসরাইল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য হামাসকে দোষারোপ করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি আরও বলেন, খাদ্য এবং অন্যান্য মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয়া করা একটি অপরাধ। তবুও হোয়াইট হাউস এখন খাদ্য সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি মানব ইতিহাসের একটি নতুন ভয়াবহ অধ্যায়।

এরপর কী হবে

পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসব উপলক্ষে কিছু জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৪২ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে।

ইসরাইলের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধবিরতির মূল শর্তাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়া যুদ্ধপরবর্তী গাজার শাসনব্যবস্থা নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে।

ইসরাইল জানিয়েছে, হামাস আর গাজায় ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। অন্যদিকে হামাস জাতীয় ঐক্যমত্য সরকার বা টেকনোক্র্যাটিক সংস্থার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এরইমধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরাইলি হামলায় সম্প্রতি দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাস নতুন কমান্ডার নিয়োগ করেছে এবং অবিস্ফোরিত বোমাগুলোকে আইইডি হিসেবে পুনঃব্যবহার শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি সত্ত্বেও উভয় পক্ষই নতুন করে সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, গাজায় নতুন করে লড়াইয়ের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের যুদ্ধাস্ত্র, বুলডোজার এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ২.০৪ বিলিয়ন ডলারের বোমা বডি এবং ওয়ারহেড, ৬৭৫.৭ মিলিয়ন ডলারের অন্যান্য বোমা বডি এবং নির্দেশিকা কিট ও ২৯৫ মিলিয়ন ডলারের বুলডোজারসহ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বিক্রির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আপাতত সুতোয় ঝুলছে। এ পরিস্থিতিতে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছে।

সূত্র: টিআরটি গ্লোবাল