News update
  • Dreams of returning home dashed by reality in Gaza City     |     
  • Hospitals overwhelmed in DR Congo, food running out     |     
  • Israel’s Ban on UNRWA to Undermine Ceasefire in Palestine     |     
  • Dhaka’s mosquito menace out of control; frustration mounts     |     
  • 10-day National Pitha Festival begins at Shilpakala Academy     |     

বাবা তুমি দেখে যাও, যাদের জন্য এতো করেছ তারা সব ফিরিয়ে দিচ্ছে...

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2025-01-05, 1:50pm

retewtewtwe-664e216434f7906b83a9018c876d72ba1736063443.jpg




জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খানের নতুন বিয়ের খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই পড়ে গেছে। তবে তাহসানের নববধূ রোজা আহমেদের বাবা বরিশাল নগরীর বাসিন্দা ফারুক আহমেদ ওরফে পানামা ফারুক, যিনি র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।  

২০২৪ সালের ৪ জুন রোজ তাঁর ফেসবুক পেজ রোজা ব্রাইডাল মেকওভারে বাবাকে ঘিরে এক আবেগী স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য সেটা হুবাহু তুলে ধরা হল। 

আলহামদুলিল্লাহ!এই মাত্র নিউইউর্ক সিটিতে আমার রোজাস ব্রাইডাল মেকোভার এন্ড বিউটি কেয়ার সেলুনের ডেকারশন এবং সেটআপের কাজ শেষ হল।  সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয় কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। কিন্তু কি মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান তাই সব থেকে আদরের ছিলাম সবার। আর বাবা আমাকে সব সময় বলত “ আমার ছোট্ট পরিটা কইরে”। সেই সময় বরিশাল শহরে আমাদের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। ছোট বেলায় কখনো কমতি পাই নি। এর বাসায় দাওয়াত, তার বাসায় দাওয়াত আর যেতেই হবে কারণ আমাদের ছাড়া দাওয়াত অসম্পূর্ন হবে। এমন দিন গিয়েছে দিনে ৪ টা দাওয়াতেও অংশ নিয়েছি। শুধু দেখা করে আসার জন্য।  হঠাৎ বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ওপাড়ে। যতদিনের হায়াত তিনি নিয়ে এসেছেন ততোদিন ছিলেন আমাদের সাথে। অভিযোগতো অনেক জমা আছে, বাবার সেই ছোট্ট পরিটার ,কিন্তু অভিযোগ কার কাছে করব? আর বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যায় নি, সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাদের এতো সম্মান করতেন তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের উপর থেকে। আর সেইদিনটাতেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি তা সবই বাবাকে ঘিরে আর সাথে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাবার ঠিক ২ মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে। আমরা অনেক ঘনিষ্ট ছিলাম একে ওপরের , কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না। আপনারা লেখাটা পড়ে ভাবতে পারেন, দাওয়াত পাইনি বলে কাঁদছি? কিন্তু দাওয়াতের জন্য নয় ,একি দালানে সবাই আনন্দ করছে, আমি, মা আর ছোটো  ভাই উৎস তখন বাসার এক কোণে। খুব চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বাবা তুমি একটু দেখে যাও, যাদের জন্য এতো করেছ তারা আমাদের সব ফিরিয়ে দিচ্ছে।  বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছেন, দাদা ভাইর অনেক আছে কিন্তু কিছুই গুছানো না, কে বুঝেছেন যে এতো অকালে উনি চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে! আর দাদার সব সম্পত্তিতেই চাচা-ফুফুদের ভাগ আছে। মায়ের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ পায় নি। আর আমি চলে আসি তাদের কোলে। আমার মা খুব সরল মনের, দিন দুনিয়ার কিছুই বুঝে না।  সে যে নিজের ভয়েস রেইস করবে বা তার সেটা রেইস করার অধিকার আছে সেটা তার ধারনার বাহিরে। কখনো তার সেই সাহস টাই ছিল না যে তার শ্বশুরকে বলবে, বাবা আমাদের সম্পত্তিটুকু আমাদের বুঝিয়ে দেন। আর উৎসতো তখন অনেক ছোট। আমারা দুই ভাইবোন তখন পিচ্চি পিচ্চি। আমাদের পড়াশোনার খরচ তখন একদম হিসাব করে টায় টায় দেয়া হতো মায়ের হাতে। তাই কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বলতাম না যাতে উৎস যেটা চায় সেটা যাতে পায়। আমার দিক থেকে একটু কম হলেও সমস্যা নেই।  বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাব আসা শুরু করে। এই রিলেটিভ একে আনে ঐ রিলেটিভ ওকে আনে। সেই সময় আমি প্রথম ভয়েস রেইস করেছি, যে আমার বয়স কম আর বাবা মারা গিয়েছে কি হয়েছে বাবার আর আমার স্বপ্নতো মারা যায় নি! ঐ দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছে্র লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হব না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কতো কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সাথে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভাল না, পর্দা করি না আরও কতো কি। মেয়েতো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এতো ভাল প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে। কিন্তু আমার ভয়েস রেইসে সবাই এইভাবে রিয়াক্ট করবে বুঝতে পারি নি। আমার মা এতো অভিযোগ শুনতে শুনতে বলল, তুই আমাকে ছুঁয়ে বল এই সব অভিযোগ কি সত্যি। আমি মাকে ছুঁয়ে বললাম না মা সব মিথ্যে। আমিতো স্কুল আর বাসা বাদে কোথাও যাই না। এই বলে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম মায়ের সাথে। ওইদিনের পর থেকে মা আমার সাথে নিয়মিত কোচিং এ যেত আবার এসে বাসার সবার জন্য রান্না করতে হতো ,খুব কষ্ট হয়ে যেত তার। তখন নিজের কাছে মনে হত আমি সবার জন্য একটা বোঝা, সব ক্ষেত্রেই আমার দোষ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ দাদাভাই অসুস্থ হয়ে পরেন, আর সেই থেকে আমার সাথে কোচিং এ যাওয়া বন্ধ করে মা কারণ তাদের সেবা যত্ন করতে হতো মাকেই।  তখন থেকেই একা একা চলা শুরু করলাম। একটা ফ্রেন্ড বলল ও স্টুডেন্ট পড়ায় আমি বললাম আমাকে একটা খুঁজে দিবি আমিও শুরু করতে চাই। বেশ একজন খুঁজতে গিয়ে দুজনকে পেয়ে গেলাম, কেজিতে পড়ে খুব অল্প টাকা বেতন। আর কোচিং এর পড়া আমার ভাল লাগত না তাই আমি নিজে নিজে বুঝে পড়তাম কিন্তু বাসার কথা ছিল কোচিং এ পড়তেই হবে। তাই কোচিং এর সময়টা আমি স্টুডেন্ট পরাতাম লুকিয়ে লুকিয়ে আর সেই টাকা জমিয়ে উৎসকে ঘুরতে নিতাম, কিছু একটা পছন্দ করলে কিনে দিতাম। বাবার যে আদর আমি পেয়েছি ও সেই আদর পায় নি তাই বাবার আদর হয়ত দিতে পারতাম না তবে কখনো যাতে আফসোস না করে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। আবার নিজের খরচটাও একটু বাড়ল, ওয়াইফাই ছিল না তাই এমবি কিনে ফেইসবুকিং শুরু করি। এভাবেই তিন মাস চলল। হঠাৎ বাজারে দাদা ভাইয়ের সাথে স্যার এর দেখা, স্যার তো বলল রোজা আসে না কেন? এরপর কি হতে পারে যারা ফেইস করেছেন তারা বুঝবেন। শুরু হয়ে গেল বাসায় বিচার সালিশ। যেহুতু সত্যি আমি কোচিং এ যায় নি তাই আমার জোর গোলায় কথা বলার মুখ ছিল না। আর কোচিং এর টাকা বন্ধ করে দিল আর বলল, তুই তো একা একাই সব পা্রো তো কোচিং এ পড়তে হবে না। আর টিউশন দুইটাও বাদ দিতে হল। এখন স্কুল আর বাসা। স্কুলে আমি অনেক পপুলার ছিলাম নাচের জন্য। ওহ ক্লাস থ্রিতে থাকতে নাচের জন্য আমি জাতীয় পুরুষ্কার পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই একা একা সাজতাম আর যারা আমার সাথে নাচ করত ওদেরকেও সাজিয়ে দিতাম। আর সবাই আমার সাথে চলতে চাইত বিশেষভাবে মেয়েরা কারণ আমি খুব ভাল সাজাতে পারি। আমার এক দূরের কাজিনের বিয়ের প্লান ছিল ঢাকা থেকে আর্টিস্ট আনবে ,তখন বরিশালে ফ্রিলানসার আর্টিস এর নামটার সাথে কেউ পরিচিত ছিল না। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মেয়েটা ঢাকার আর্টিস্ট আনতে পারেনি। আমাকে কল দিয়ে খুব মন খারাপ করে বলল, পরিবার বিয়েতে অনেক খরচ করছে, এতো বড় আয়োজন কিন্তু মেকআপের জন্য এতো টাকা দিবে না আর বরিশালের কোন পার্লার এর সাজ আমার পছন্দ না ,তোর সাজটা আমার খুব ভাল লাগে। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আপু তোমার এতো বড় বিয়ের আয়োজনে আমার কাছে সাজবা শিয়র তুমি? বলল হ্যাঁ তোর মতো করে আমাকে সাজিয়ে দিস তাহলেই হবে।সেই থেকে মেকআপের প্রফেশনাল জার্নিটা শুরু। এর পর আপুকে সাজালেও খুব ভয় হচ্ছিল আমি কি বিয়েতে যাব? কারণ কেমন না কেমন হয়েছে সাজ? মা জোর করে নিয়ে গেল। সবার এতো প্রসংশা আর ফিডব্যাক পেয়ে আমি নিজেই হতভম্ব। এরপর থেকেই আপুর অনেক ফ্রেন্ড আমার কাছে সাজা শুরু করল। মাত্র ২০০০ টাকা করে নিতাম। তবে সেই বাসার সমস্যায় আবার পড়লাম। দাদা ভাইকে বলা হল আমি পার্লার এর কাজ করি, পার্লারের মেয়ে আমি। আমি বললাম হ্যাঁ তো? পার্লারে যারা কাজ করে ওরা কি মানুষ না ? তাদের কি পরিবার নাই? দেখ তোমাদের মতো এক একটা পরিবার চালায় তারা। আমি তাদের রেস্পেক্ট করি। সেদিন সবাই অনেক উচ্চ কণ্ঠে আমাকে বলল, এই মেয়ে আমাদের মানসম্মান ডুবাবে। সেদিন অনেক জেদ হলো! শুরু করলাম ফ্রিলান্সার মেকাপ আর্টিস্টের কাজ। বরিশাল শহরে কেউ এই টার্মটার সাথে পরিচিত ছিল না কিন্তু এখন শত মেয়ে ফ্রিলান্সার মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছে দেখে খুব গর্ব হয়। যেহুতু বিয়েগুলো দুপুরে হতো মেক্সিমাম তাই অনেক সময় ব্রাইডের কাজ করতে গিয়ে স্কুল বন্ধ দিতাম। স্কুল ব্যাগে মেকাপ প্রডাক্ট নিয়ে চলে যেতাম সোজা ক্লাইন্টের বাসায়, ছুটির সময়ে চলে আসতাম বাসায়। আর সেই খবর বাসায় চলে আসে। ওইদিন রাতে বুঝে যায়, আমাকে যদি কিছু বলতে আসে আমি কাউকে ছাড় দিব না। তাই এবার আর আমাকে না বলে আমার মাকে অনেক মন্দ বলে। মায়ের সেই সরল কান্না যতবার দেখেছি নিজের জেদকে আরও শক্তিশালী করেছি। নিজেকে তৈরি করেছি মানুষ হিসেবে, একবারও নারী হিসেবে নয়।  ব্রাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে বরিশাল থেকে পুরো দেশে নাম ছড়িয়ে পড়ল। বাসায় ফাইনান্সিয়াল্লি কন্ট্রিবিউশন করা শুরু করলাম। বাহ এবার আমার পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করছে, পরিচয় দিচ্ছে। আমি সবার মধ্যমনি। কিন্তু ঐদিনটাতে বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল যে বাবা তোমার মৃত্যুর পর যতো টা কষ্ট পেয়েছি তোমাকে হারিয়ে তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে।    ব্রাইডাল মেকাপ ট্রান্সফরমেশন ভিডিও আপলোড শুরু করলাম, নিজের ব্লগ, সব কিছু মিলিয়ে ভাইরাল হওয়া শুরু হল। ঢাকা থেকে ক্লাইন্টের নক আশা শুরু করল। কিন্তু ঢাকাতে তো কারো বাসায় উঠব না অন্যদিকে পরের দিন বরিশালে ৪-৫ টা ক্লাইন্ট তাই সারাদিন কাজ করে রাত ৯ টায় লঞ্চে করে ঢাকা এসে সারাদিন কাজ করে আবার বরিশালে ব্যাক করি। এই যাতায়াতে করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে কতো মানুষের কথা শুনেছি, তবে আমাকে কেউ নারী বলে হ্যারেসমেন্ট করার সাহস পায় নি। কারণ আমার চোখ তাদের বলে দিত যে আমি জীবনে কাউকে ছাড় দেই না ,দেব না। তা বাসায় হোক আর বাহিরে হোক।  ঢাকার ক্লাইন্টের পরিমাণ বাড়ল, বাজেট বাড়ল।বিবিএ এর স্টুডেন্ট ছিলাম, কাজের পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে বেশ একটা কঠিন সময় যাচ্ছিলো। যাই হোক খুব সাহস করে বসুন্ধরাতে একটা ছোট বাসা নিয়ে স্টুডিও সেটাপ দেই। বাড়িওয়ালা খুব ভাল ছিলেন। তার পরিবার নিয়মিত আমার ব্লগ দেখতেন। কিন্তু এতো ক্লাইন্ট আসত যে পাশের বাসা থেকে কমপ্লেইন আসা শুরু করল। পরে বাসাটা ছেড়ে একটু বড় পরিসরে বাসা নিয়ে আবার নতুন সেটাপ দেই। এবার দারোয়ান মামাকে বেশ ভাল বকশিস দেই তাই আর ঝামেলা হয় না। এভাবেই আস্তে আস্তে রোজাস ব্রাইডালকে ক্লাইন্টের দৌড় গোঁড়ায় নিয়ে যাই। ঢাকা-বরিশাল সব সময় ক্লাইন্ট। পরে ফ্লাইটে যাতায়াত শুরু করি, এমন হয়েছে সকালে বরিশালে ক্লাইন্ট করে দুপুরে ঢাকাতে ক্লাইন্ট করেছি। আর তা সবসম্ভব হয়েছে মনের মধ্যে একটা জেদ ছিল কারণ এই সেক্টরের মেয়েরা অনেক অবহেলিত। আমাকে যে কথা শুনতে হয়েছে আমি আর একটি মেয়েকেও সেই কথা শুনতে দিতে চাই না। তাই শুরু করলাম মেকাপ ক্লাস। এক বছরে ৫০০+ মেয়েকে মেকাপ শিখালাম। শত শত মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াল। হঠাৎ একদিন মায়ের কল,  ইউএসএ এম্বাসি তে দাঁড়াতে হবে ইমেগ্রেশন ভিসার জন্য। বড় মামা অনেক আগে থেকে আবেদন করে ছিল। দেখতে দেখতে ভিসা হয়ে গেল। উৎস আর মায়ের জন্য দেশ ছাড়তে হবে। নিজের সাজানো সংসার বলা যায় ,তা ছেড়ে যেতে যেমন লাগে দেশ ছেড়ে আমার যেতে ঠিক তেমন লেগেছে। একটু একটু করে এ দেশে নিজের অবস্থান তৈরি করেছি আর সেই সব ছেড়ে যাব?  মজার কথা হল, যে দিন আমার ফ্লাইট ঐদিনও আমি ব্রাইডের কাজ করি। দেশে আমার সার্কেলটা খুব ভাল, দেশ ছাড়ার সময়ে আমি নিজের লাগেজ পর্যন্ত গুছাই নি। যা কিছু করার সব ওরা করেছে। ওদের ছেড়ে থাকাটাও আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সার্কেল আর নিজের স্বপ্ন সব ফেলে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে চলে আসলাম ইউএসএ তে। এখানে আমি আসার আগেই বার্গার এর দোকানে কাজ থেকে শুরু সব কাজ আমার জন্য দেখা হয়েছিল,আমাকে না জানিয়েই। আমিতো করবোই না, ঐযে আমি খুব জেদি শুরু করলাম নিউইউর্কে প্রচারণা। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ক্লাইন্ট পেলাম যাওয়ার। আস্তে আস্তে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানের প্রবাসীরাও আমার কাছে সাজা শুরু করল, ক্লাস করা শুরু করালাম। নিজেকে আবার এই দেশেও একজন প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাড়া করালাম। কসমেটোলজি এর মাধ্যমে স্কিন ,হেয়ার এবং মেকাপ রিলেটেড স্টাডি করলাম কলেজে। আর সেখান থেকেই আজকের স্টুডিও। কসমেটোলজির  উপর নতুন করে আবার পড়াশোনা, লাইসেন্স নেয়া সব চ্যালেঞ্জ নতুন করে আবার ফেইস করেছি। সেলুনে সব থেকে এক্সপেন্সিভ এবং কোয়ালিটিফুল প্রডাক্ট দিয়ে সাজিয়েছি সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট।   কথা গুলো খুব আবেক নিয়ে লেখা। শুরুতেই বলেছিলাম আমার মা একজন সরল মানুষ। বাবা মারা যাবার পর জীবনে উচ্চ সরে কথা বলতে পারে নাই, কখনো হাসতে দেখি নি। আর আজ সেই মা উচ্চ গলায় সবাইকে ফোনে বলে 'হ্যাঁ আমার বড় মেয়ে রোজাই তো আমাকে দেখছে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেক ভালো রাখছেন আমাদের। সে হয়ত স্বপ্ন দেখতে পারে নি কিন্তু তার মেয়ে হিসেবে একটু হলেও নতুনভাবে বাঁচতে শিখাতে সাহায্য করেছি।   আজ খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, বাবা তোমার সেই ছোট্ট  পরিটা অনেক বড় হয়েছে! আমার সব স্বপ্নের কেন্দ্র বিন্দু তুমি বাবা।  আজ যখন সেলফিটা তুলি আমি একটার বেশি ছবি তুলতে পারি নি কারণ এতো কান্না আসছিল। আমি শুধু একটা কথা বলব, আপনাদেরকে ভেঙ্গে দেবার জন্য হাজার মানুষ থাকবে কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনাকে একাই চলতে হবে। নিজেকে এমনভাবে গড়তে শিখুন যে যতবার বাধা আসবে ততবার হাসিমুখে মোকাবেলা করুণ,  যাতে  বাধা দেখলেও আপনাকে ভয় পায়।