অযত্ন অবহেলায় ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে জয়নুল আবেদিন পার্কের ভেতরে থাকা মিনি চিড়িয়াখানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে একটি ভালুক। শুধু ভালুক নয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা ১৯ প্রজাতির বন্য প্রাণিরই রূগ্নদশা। শরীরে পচন ধরা ভালুকের ছবি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে বন অধিদফতর।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে ৪৮টি প্রাণি। সিলগালা করা হয়েছে চিড়িয়াখানাটি। তবে ভালুকটির ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। আগের স্থানেই ভালুকটি রেখে গিয়েছে বন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
২০১৩ সালের দিকে নগরীর জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দের জায়গায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি তৈরি করা হয়। হরিণ, ভালুক, কুমির, বানর, অজগরসহ ১৯ প্রজাতির প্রাণী দেখতে এখানে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। ঘুরতে এসে অব্যবস্থাপনা ও প্রাণিদের এমন করুণ পরিণতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
মঙ্গলবার গায়ে পচন ধরা একটি ভালুকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চিড়িয়াখানাটি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের মধ্যে। তবে চিড়িয়াখানার কর্মীদের দাবি, পশু-পাখি নিয়ে কখনো গাফিলতি করেন না তারা। চিড়িয়াখানায় থাকা কামাল হোসেন নামের এক কর্মী জানান, পচন ধরা অংশে নিজের পা নিজেই কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে ভালুকটি। তারপর স্থানীয় প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এরপরও ভালুকের পায়ের ক্ষত বাড়ছে।
এদিকে, চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে বন অধিদফতর। চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানান, আইন না মেনে পরিচালিত হয়ে আসছিল চিড়িয়াখানাটি। অভিযানে ১৯ প্রজাতির ১১৪টি বন্যপ্রাণির মধ্যে ৪৮ টি জব্দের পাশাপাশি সিলগালা করা হয়েছে চিড়িয়াখানাটি।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা জানান, দেশি অথবা বিদেশি যেকোনো পশু পাখির জন্যই এখানকার পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। এরপরও নিয়ম বহির্ভূত‚তভাবে ৪৮ টি দেশীয় প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। এর মধ্যে ২৭টি আমরা নিয়ে যাচ্ছি। বাকিগুলো চিকিৎসার জন্য এখানেই থাকবে। এখন থেকে আর চিড়িয়াখানাটিতে দর্শণার্থী প্রবেশ করতে পারবেননা। চিড়িয়াখানাটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, জব্দকৃত প্রাণীগুলোর মধ্যে কিছু প্রাণীকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হবে। বাকিগুলোকে অবমুক্ত করা হবে।
এদিকে, যে অসুস্থ ভালুককে নিয়ে এতো তোলপাড় সেই প্রাণিকে চিকিৎসা দিতে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিড়িয়াখানাটিতেই রেখে গেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন। ভালুকাটিকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরানোর দাবি স্থানীয়দের।