News update
  • Bus ploughs into football match in Cumilla; 1 killed, 5 hurt     |     
  • CA Prof Yunus holding talks with 12 more political parties     |     
  • Meghna swells flooding Chandpur coasts; fish farmers hit hard     |     
  • Maritime ports asked to hoist local cautionary signal No. 3     |     

বছরে জলবায়ুজনিত আর্থিক ক্ষতি ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার: গবেষণা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক error 2025-07-25, 7:50pm

img_20250725_194805-1c7ee09e6e92e7aa2cb981cd268db5de1753451431.jpg




বর্তমানে প্রতিবছর জলবায়ুজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর, যাদের পক্ষে এ ধরনের ক্ষতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। 

ব্র্যাকের উদ্যোগে দুদিনব্যাপী ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরামের (ফিফ) অষ্টম সম্মেলনের প্রথম দিন শুক্রবার (২৫ জুলাই) বক্তারা এ তথ্য তুলে ধরেন। 

‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় জলবায়ু অভিযোজন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ২০০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, গবেষক এবং উন্নয়নকর্মী অংশ নিচ্ছেন। 

সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গ্লোবাল সাউথ বা বিশ্বের এই প্রান্তের বাস্তবতার নিরিখে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবিত সমাধানগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। 

এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের’ মহাসচিব ও মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। 

তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করছে না, এই কাঠামো জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও সহায়ক নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করতে পারছে না। কারণ ঋণগ্রহণ এখনও তাদের জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল। 

মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অর্থায়ন অত্যন্ত সীমিত। অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য যুক্তিসঙ্গত সুলভ অর্থায়নের সুযোগকে একটি জরুরি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

আসিফ সালেহ বলেন, এই পৃথিবী যেন আগুনে জ্বলছে, পুরো পৃথিবী চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখোমুখি। বর্তমানে প্রতিবছর জলবায়ুজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে বিশ্বের এই প্রান্তের মানুষগুলোর ওপর, যাদের পক্ষে এ ধরনের ক্ষতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। 

তিনি বলেন, জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে আলোচনাগুলো যেন শুধু আমাদের টিকে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জীবিকা, মানুষের মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

আসিফ সালেহ আরও বলেন, আজও বিশ্বে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ দৈনিক মাত্র ২ দশমিক ১৫ ডলারেরও কম আয়ে জীবনযাপন করছেন। এদের প্রায় ৯৯ শতাংশই গ্লোবাল সাউথ বা বিশ্বের এই গোলার্ধে বাস করেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর শুকিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল হবে প্রথম পানিশূন্য আধুনিক শহর। আর বিশ্বের বর্তমান গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার যদি ২ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, তাহলে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ প্রাণঘাতী চরম তাপদাহের ঝুঁকিতে পড়বে। এদের প্রায় সকলেই দক্ষিণ গোলার্ধ অঞ্চলের বাসিন্দা।

তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট আর ভবিষ্যতের কোনো হুমকি নয়; দীর্ঘতর তাপপ্রবাহ, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বন্যা ও খরার কারণে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে খাদ্যব্যবস্থায় ব্যাপক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বের এই প্রন্তজুড়েই এটি ঘটতে পারে। 

দুই দিনব্যাপী এই ফোরামে প্যানেল আলোচনা, ইমপ্যাক্ট টক ও প্রদর্শনীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাব্য সমাধানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের ক্লাইমেট হাবের ঊর্ধ্বতন পরিচালক ক্রিস্টিনা চ্যানের সঞ্চালনায় ‘ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডপটেশন ইন অ্যাগ্রিকালচার’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বাকি অধিবেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল কেনিয়ার জলবায়ু কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ডিজেফু গ্যাটাচোর সঞ্চালনায় ‘নেভিগেটিং আনসার্টেনটি থ্রু ক্লাইমেট ইনফরমেশন সার্ভিসেস’, ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কুলদীপ আরিয়ালের সঞ্চালনায় ‘ফার্মিং ফর দ্য ফিউচার: প্র্যাক্‌টিকেল ইনোভেশনস ফর স্মলহোল্ডার ফার্মারস’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা।

এ ছাড়া ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের ক্লাইমেট হাবের প্রধান অ্যাশলি টুম্বসের সঞ্চালনায় ‘ইউজ কেইসেস ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ারুল আবেদীনের সঞ্চালনায় ‘নেচার বেইজড সল্যুশনস’ শীর্ষক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন (শনিবার) বক্তব্য রাখবেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সমাপনী ভাষণ দেবেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম গ্লোবাল সাউথভিত্তিক উদ্ভাবন ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এর আগের সম্মেলনগুলোয় ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে কোভিড–পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট বাড়ছে। সেই সঙ্গে অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন কমে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে এবারের ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম যে বার্তাটি দিচ্ছে, সেটি হলো কেবল জনগণের জন্য নয়, বরং তাদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকেই জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।