News update
  • Dhaka’s air ‘unhealthy for sensitive groups’ Wednesday morning     |     
  • US proposes that the UN authorize a Gaza stabilization force for 2 years     |     
  • Democrat Zohran Mamdani is elected New York City mayor     |     
  • Martyr Mugdha's brother Snigdha steps into politics with BNP     |     
  • FAO Warns of ‘Silent Crisis’ as Land Loss Threatens Billions     |     

সুগন্ধা সৈকতের নাম ‘বঙ্গবন্ধু বিচ’ করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক Nation 2024-02-22, 10:14am

gjjttrurt-ddfdf48e694f9b94e99ba33e858d04e61708575246.jpg




কক্সবাজারের সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু বিচ’ করার একটি প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একটি সমুদ্র সৈকতের বহু পুরনো নাম হঠাৎ করে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

গত সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।

চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। ফলে তারা এখনো কোন পদক্ষেপ নেননি।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছু করতে গেলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের এ্যাপ্রুভাল লাগবে। আমরা যতদুর খোঁজ নিয়ে দেখেছি এই ক্ষেত্রে সেই এপ্রুভাল নাই। তাই আমরা কোন ব্যবস্থা নেইনি”।

সমুদ্র সৈকতের নাম বদলের এই প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল।

এর সভাপতি মো. সোলায়মান মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যেহেতু কক্সবাজার দিন দিন মানুষের যাতায়ত বেড়ে যাচ্ছে। বিচ এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে এত বিচ অথচ জাতির পিতার নামে একটা বিচ থাকবে না? সেই তাগিদ থেকেই আমরা এই বিষয়ে আবেদন করেছি”।

ঐ সংগঠন বলছে, তাদের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে তা সচিবের কাছে পাঠিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রণালয় থেকে সেটি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়।

তবে বুধবার বিবিসি বাংলা যখন তার সঙ্গে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে, তিনি বলেন, ''সচিবের কাছ থেকে একটু আধটু শুনেছি, এ নিয়ে বিস্তারিত আমার জানা নেই''।

তাহলে মন্ত্রীর অগোচরে চিঠি কিভাবে গেলো কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে? এমন প্রশ্নে মন্ত্রীর জবাব, “আমি এটা খেয়াল করি নাই। এটা কী করে হয়? আমি এ বিষয়ে আগামীকাল কথা বলবো”।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামে 'বঙ্গবন্ধু' যুক্ত করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন নেয়ার বিধান চালু হয়েছে ২০১৯ সালে। তবে ট্রাস্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, সমুদ্র সৈকতের নাম বদলের কোন প্রস্তাবের কথা তাদের জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাদুঘরের কিউরেটর ও ট্রাস্টের বাছাই কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার জানা মতে, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এমন কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি”।

নাম পরিবর্তনের উদ্যোগে যেভাবে

গত আটই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ নামের একটি সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়। সংগঠনের সভাপতি মো. সোলায়মান মিয়া সাক্ষরিত ঐ চিঠিতে কক্সবাজারের সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের নাম 'বঙ্গবন্ধু বিচ' এবং সুগন্ধা ও কলাতলী বিচের মাঝখানের জায়গাটিকে বীর 'মুক্তিযোদ্ধা বিচ' নামকরণের দাবি জানানো হয়।

সেই চিঠিতে দেখা যায়, ঐদিনই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার সচিবকে মার্ক করে চিঠিতে সাক্ষর করেন।

এর দশ দিনের মাথায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিশাখার সহকারি সচিব মো. সাহেব উদ্দিন সাক্ষরিত ঐ চিঠিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দুটি পয়েন্টের নাম পরিবর্তনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিলেন।

ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার চিঠি পাঠানো হয় জেলা প্রশাসকের কাছে।

ঐ চিঠিতে বলা হয়, 'স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সুগন্ধা বিচকে ‘বঙ্গবন্ধু বিচ’ এবং সুগন্ধা ও কলাতলী বিচের মাঝখানের খালি জায়গার নাম হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ’।

ঐ চিঠির বিষয় কথা বলতে মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব সাহেব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে বুধবার এ নিয়ে তিনি বিবিসি বাংলার কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা চিঠিটা পেয়েছি। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছু করতে গেলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের এ্যাপ্রুভাল লাগবে। আমরা যতদুর খোঁজ নিয়ে দেখেছি এই ক্ষেত্রে সেই এপ্রুভাল নাই”।

“অনুমোদন ব্যতীত বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছু করা সুযোগ নাই। প্রপার অথরিটি যারা তাদের অনুমোদন ছাড়া এটা ব্যবহার করা যাবে না” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. ইমরান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঐ চিঠির পর বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। এরপর বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

এ নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা করতে দেখা যায় অনেককে। মো. জামালউদ্দিন নামে একজন ফেসবুক পোষ্টে লিখেন, ‘সুগন্ধা বিচ বঙ্গবন্ধু বিচ নামে মেনে নিতে পারলাম না। ছোট্ট একটা বিচ কেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে হবে আমার প্রশ্ন”।

ইউটিউব ও ফেসবুকেও অনেককে ট্রল করে পোস্ট করতে দেখা যায়। বুধবার কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে অনেকে আবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলছেন, “বঙ্গবন্ধু বিচ ঘুরতে এলাম”।

কোন কোন ফেসবুক গ্রুপ থেকে নতুন নামকরণের বিষয়টি নিয়ে গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে মতামতও জানতে চাওয়া হয়। সে সব মতামতে বেশিরভাগ ফেববুক ব্যবহারকারীদেরই এ নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গেছে।

যদিও কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের নাম পরিবর্তন হয় নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই নি। সুতরাং আগে এ সমুদ্র সৈকতের নাম যেটি ছিলো সেটিই আছে”।

“একটা মিনিস্ট্রি একটা প্রপোজাল করলেন, সেটা তো তাৎক্ষনিকভাবে তো এটা কার্যকর করার কিছু নাই। বিষয়গুলো আমাদের দেখতে হবে। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কোন অনুমোদন নেই”, বলছিলেন মি. ইমরান।

বঙ্গবন্ধু নামকরণে ট্রাস্টের অনুমতি প্রক্রিয়া কী?

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করার এক ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই ধরনের কোন কিছুর নামকরণ করার আগে তাতে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের অনুমতি লাগবে।

তবে সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় শুধু নাটক, সাহিত্যকর্ম ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আগে থেকে এ ধরনের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের নামে কোন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল জাদুঘরের কিউরেটর ও নাম বাছাই কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নামে এমন কিছু করতে হলে আগে থেকেই ট্রাস্টের কাছে আবেদন করতে হয়”।

নিয়ম অনুযায়ী কেউ নামকরণের আবেদন করলে সেই আবেদন বাছাই করা হবে ট্রাস্টের সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটনের নেতৃত্বে।

যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিলে পরবর্তীতে সেটি ট্রাস্টের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই নামকরণ হতে পারে বঙ্গবন্ধু তা তার পরিবারের কারো নামে।

মি. খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কক্সবাজারের একটি সমুদ্র সৈকতের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করার বিষয়ে কিছু খবর পত্রিকায় দেখেছি। তবে আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন আবেদন করা হয়নি, কিংবা এমন কোন অনুমোদনও ট্রাস্ট দেয় নি”। বিবিসি বাংলা