পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালে দেশে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ চালু হয়। ওই সময় থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যার চেষ্টা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ঘটনায় ফোনকল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্থানে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আত্মহননে উদ্যত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেছেন। তবে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকজন মারা গেছেন। এ ছাড়া আত্মহত্যা সংক্রান্ত কল পেয়ে ১ হাজার ১৩৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় জানানো হয়, ৯৯৯ এর ‘রেসপন্স টাইম’ (সাড়া দেওয়ার সময়) আরও কমানোর চেষ্টা চলছে।
‘আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে এই আলোচনার আয়োজন করে সিআইডি। এতে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ‘৯৯৯’ এর দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া ৯৯৯-এ বর্তমানে ৫০০ জনবল রয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি কল পেয়েছি। এরমধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ফোন কলের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা মোট কলের ৩৩ শতাংশ। এরমধ্যে ৭৮ ভাগ পুলিশি সেবা, ৯ ভাগ ফায়ার সার্ভিস এবং ১১ ভাগ অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত সেবা।
৯৯৯ এর এই কর্মকর্তা বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলারের অবস্থান জানার সুবিধা না থাকায় আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হয়, আপনি কোথা থেকে বলছেন? এতে সময় ব্যয় হয়। এ জন্য কলারের অবস্থান জানার সুবিধা যুক্ত করার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। এটি কার্যকর হলে রেসপন্স টাইম কমে আসবে, আরও দ্রুত মানুষকে সেবা দেওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সিআইডি প্রধান ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসীন খানের আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি লাইভে ছিলেন। এ ঘটনা কেন সিআইডি জানতে পারল না? আমাদের কেউ দোষারোপ করেনি। কিন্তু আমার কি দায়িত্ব নেই? আমি সিআইডির সাইবার পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করলাম। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের সিঙ্গাপুর কেন্দ্রিক অফিসে জানতে চাইলাম।
তারা জানায়, লাইভের প্রথম দিকে মহসীনের কথা-আচরণ স্বাভাবিক ছিল, তিনি আত্মহত্যা করবেন এমনটা মনে হয়নি। তিনি পারিবারিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। ফলে ফেসবুক আত্মহত্যার বিষয়টি বুঝতে পারেনি। লাইভের শেষের আড়াই মিনিটে তারা এটি বুঝতে পারে। ফেসবুককে অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন তারা আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের সঙ্গে কাজ করে।
সিআইডি প্রধান জানান, মহসীন যখন লাইভ শুরু করেছিলেন তখন যারা ভিডিও দেখছিলেন তাদের আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। কাউকে দোষারোপ নয়, তাদের সচেতন করাই আমাদের উদ্দেশ্য। যাতে ভবিষ্যতে তারা আমাদের জানাতে পারেন।
সিআইডি আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে বলেও জানান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের সাবেক চেয়াররম্যান অধ্যাপক ড. নেজাম উদ্দিন আহমেদ, ফনিক্স ওয়েলনেস সেন্টারের অধ্যাপক ড. সানজিদা শাহরিয়া, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহসান উদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সূত্রঃ আরটিভি।