News update
  • No Media Faced Arson Attacks in 53 Years: Mahfuz Anam     |     
  • Janaza of six Bangladeshi peacekeepers held at Dhaka Cantonment     |     
  • Bangladesh stock market loses Tk 10,500cr in a week     |     
  • Dhaka’s air turns ‘very unhealthy’ on Sunday morning     |     
  • Project to transform N’ganj into a climate-resilient green city     |     

ব্রাজিলে ৭টি ভাষার উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

গ্রীণওয়াচ ডেস্কঃ Nation 2022-02-22, 9:57pm




মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এবছরের ইউনেস্কো প্রতিপাদ্য "প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জন: সংকট ও সম্ভাবনা"-এর আলোকে বাংলাদেশ দূতাবাস ব্রাসিলিয়া যথাযথ মর্যাদায় উদ্দীপণাপূর্ণ প্রানবন্ত পরিবেশে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে। ইউনেস্কো-ব্রাজিল ও রাজধানী ব্রাসিলিয়া সরকারের সংষ্কৃতি ও শিক্ষা বিভাগের সহযোগিতায় ব্রাজিলের জনগণ এবং এদেশে বসবাসকারী বিদেশির কাছে একুশের বার্তা পৌঁছে দেবার নিমিত্ত্ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি বহুজাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস দিবসটি উদযাপন করে।  

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রথম পর্যায়ে একুশের সকালে রাষ্ট্রদূত মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে সূচিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসে স্থাপিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অৰ্পন করেন। দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সংক্ষিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা সশ্রদ্ধ চিত্ত্বে স্মরণ করেন। বায়ান্নর শহিদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে তিনি বলেন যে, বাঙালির ভাষা আন্দোলনই ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের দ্বিতীয় পর্যায়ে দূতাবাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্ণার হতে পরিচালিত  ইউনাস্কো-ব্রাজিল ও রাজধানী ব্রাসিলিয়া সরকারের সহযোগিতায় দূতাবাস ব্রাজিল সময় সকাল ১১৩০ ঘটিকায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ২০৩০ ঘটিকায়) ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে এক আলোচনা সভা (webinar) এবং বর্ণাঢ্য বহুজাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠা্নের আয়োজন করে যা দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্ণার থেকে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব- পশ্চিম, ইউনেস্কো-ব্রাজিলের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরষ্কার বিজয়ী Global Voice-র পরিচালক জনাব এডি আভিলা বক্তব্য রাখেন। 

আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন যে ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুই দশকব্যাপী সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে একাত্তরে চুড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। ভাষাশহীদদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণ বঞ্চনাহীন এক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষার প্রবর্তনসহ মাতৃভাষার সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উদ্যোগের উপর আলোকপাত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ত্বে বিগত এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। দাপ্তরিক নানা কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদানের সাফল্যের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় মুঠোফোনের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি বিতরণের সুফল হিসেবে বিদ্যালয় হতে ঝড়ে পড়া হ্রাস, বাল্য বিবাহ হ্রাস, শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা আনয়নসহ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তিনি তুলে ধরেন। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবার লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তিনি কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

সচিব- পশ্চিম তাঁর বন্তব্যে মহান ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন এবং ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আমাদের জাতীয় জীবনে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। জনাব আভিলা তাঁর বক্তব্যে নৃতাত্ত্বিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বলিভিয়ার পঞ্চাশটির অধিক ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠির শতাধিক ভাষা রক্ষার বিষয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজ তুলে ধরেন এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং গুরুত্ব আলোচনা করেন। 

ব্রাসিলিয়া সরকারের প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত করে এ বিষয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

ইউনেস্কো- ব্রাজিলের প্রতিনিধি মার্লোভা নোলেতো তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- ২০২২ এর প্রতিপাদ্য বিষয়টিকে সামনে রেখে সকল ভাষার ডিজিটাইজেশনের উপর জোর দেন। এ ধরণের একটি বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দিনটিকে সবার মাঝে পরিচিত করার এ প্রয়াসের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন যে, ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের এ উদ্যোগে তাঁরা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবেন।

ব্রাজিলে নিযুক্ত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত তাঁদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। 

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের উপস্থাপনায় "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি", “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি”-এর সাথে নৃত্য ছাড়াও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কিউবা, মিসর এবং জ্যামাইকার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনলাইনে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ উপভোগ করেন। বিপুল সংখ্যক ব্রাজিলিয়ান ছাড়াও বিশ্বের সকল মহাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি অন লাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টালে অনুষ্ঠানটির প্রচারণা ছিল উল্লেখযোগ্য। 

অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল ১১ ভিন্ন ভাষার শিশুদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে দেয়া ছোট ছোট বক্তব্য। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য দক্ষিণ আমেরিকার জনগণের নিকট পৌছে দিতে দূতাবাসের এই অনলাইন অনুষ্ঠানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে বলে দূতাবাস আশাবাদী।