বৈশ্বিক নানা সংকটের পাশাপাশি বছর জুড়ে চরম অস্থিরতা সত্ত্বেও সদ্য বিদায়ী বছরে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে যা গত বছরের তুলনায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি। চড়া মূল্যের ম্যান মেইড ফাইবারের তৈরি পোশাক উৎপাদন বাড়িয়ে বাড়তি আয় হলেও সংকটের মুখে রফতানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে বলে দাবি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে পুরো জুলাই-আগস্ট উত্তাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শ্রমিক অসন্তোষে শুরু হয় নতুন করে গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতা।
তবে এত সংকটের মাঝেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে গার্মেন্টস শিল্প। বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী বছরে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকেরা। অথচ সংকটবিহীন ২০২৩ সালে রফতানি ৩৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বিগত বছরে তৈরি পোশাক খাতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জ্যাকেট-ব্লেজারের রফতানি অনেক বেড়েছে। যার রফতানিমূল্য অনেক ভালো।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে নিটওয়ার পণ্য। যার পরিমাণ ২০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার বিপরীতে ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলারের। সাম্প্রতিক সময়ে পরিমাণগতভাবে তৈরি পোশাকের রফতানি কিছুটা কমলেও ম্যান মেইড ফাইবারের স্পোটর্স ওয়ার এবং একটিভ ওয়ারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশের রফতানি আয়ে গতি স্বাভাবিক থাকছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ম্যান মেইড ফাইবারের পোশাকগুলো চাহিদা অনুযায়ী সামঞ্জস্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের।
আগে দেড় মার্কিন ডলারের টি শার্ট কিংবা তিন ডলারের ট্রাউজার ছিল মূল চাহিদা। এখন তার সঙ্গে ৭ থেকে ৮ ডলারের শার্ট-প্যান্ট, ১০ ডলারের জ্যাকেট এবং বাড়তি দামের ব্লেজার যুক্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের মূল বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকা কেন্দ্রিক হলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যেতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার মতো অপ্রচলিত বাজারেই রফতানি আয় বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
ক্লিফটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সুনাম রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের সংকটগুলো কাটিয়ে উঠে পণ্যের খরচ কমাতে পারলে বাড়বে উৎপাদন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিজিএমইএর আওতাধীন ২ হাজার ৫৬৪টি গার্মেন্টস কারখানা পুরোদমে চালু রয়েছে। এর বাইরে দেশের আটটি ইপিজেডে রয়েছে ৬০০ গার্মেন্টস কারখানা। অবশ্য অর্থ বছরের হিসাবে গার্মেন্টস শিল্প থেকে রফতানি আয় ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।