News update
  • Khaleda Zia hospitalised again      |     
  • The Deadliest Days for Journalists in War Zones     |     
  • NY police arrest 300 at pro-Palestinian student protests     |     
  • Dhaka to enhance eco-tech in rice cultivation to cut gas emission     |     
  • Gazans on tenterhooks awaiting news of ceasefire call     |     

পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে কি ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কৌশলগত 2023-05-22, 11:15am

73c0fb10-f7e2-11ed-9b2f-bd1fc8dd3b1b-dccdc008b8775a1f877d9c78f40e79ff1684732550.jpg




বেশ কয়েক বছর আগের কথা । যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একজন দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ভারত সফরে এসেছিলেন, আর তখনই তার সাথে কথা হচ্ছিল একজন স্থানীয় বিশ্লেষকের। তিনি বলছিলেন, সেই কথোপকথন এখনো তার কানে বাজে।

"পাকিস্তান যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের সাথে আমরাও না ডুবি" - বলেছিলেন সেই বিশ্লেষকটি। তার সাথে যার কথা হচ্ছিল তিনি হলেন ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তান এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হলে দেশজুড়ে তার সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। অন্যদিকে সেখানে চলছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, তার ওপর আছে অতি নিম্ন প্রবৃদ্ধি এবং দেশটির ঋণখেলাপি হবার আশংকা।

অন্যদিকে ইমরান খান ও দেশটির ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ক্রমশই আরো তীব্র হচ্ছে। মি. খান এমন অভিযোগও করেছেন যে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী এই সামরিক বাহিনী তাকে হত্যারও চেষ্টা করেছে।

সব মিলিয়ে দেশটিতে এক নজিরবিহীন সংকটকাল চলছে, যা থেকে ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে তা বলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

"একটি প্রতিবেশী দেশ - যার পরিস্থিতি প্রায় সবসময়ই উত্তপ্ত থাকে - তাতে যখন রাজনীতি প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে, বড় আকারের অস্থিরতা দেখা দেয় এবং বিশেষ করে সামরিক নেতৃত্বের সংহতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয় -তখন তো আপনার উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক" - বলছিলেন মি. কুগেলম্যান।

"ব্যাপারটা এমন নয় যে এই আলোড়ন উপচে পড়ে ভারতেও ছড়াতে পারে, বরং সমস্যাটা হলো - এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান হয়তো সেই সব জিনিসগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না যেগুলো ভারতের জন্য গুরুতর ঝুঁকি - যেমন সেই জঙ্গিরা যাদের মনোযোগ ভারতের দিকে।"

এ দুটি দেশের মধ্যে - ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হবার পর থেকে - তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে দুটিই কাশ্মীরকে নিয়ে।

কাশ্মীরে ২০১৯ সালে ভারতীয় সেনাদের ওপর এক জঙ্গি আক্রমণের পর ভারত পাকিস্তানের ভূখন্ডের ভেতর আক্রমণে চালিয়েছিল। ওই ঘটনার পর দুই দেশ পারমাণবিক যুদ্ধের "কাছাকাছি" এসে গিয়েছিল - সম্প্রতি এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। অবশ্য ২০২১ সালে একটি নতুন সীমান্ত চুক্তি হবার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।

ভারতের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে পাকিস্তানে এখন যে টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে - তাতে কি ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ?

অতীতের কয়েকটি ঘটনা থেকে কিছু সূত্র মিলতে পারে।

যেমন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল তার পরিণতিতে উপমহাদেশে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধ হয়, আর তার মধ্যে দিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশের।

এ ছাড়া ২০০৮ সালে এক আন্দোলনের পর জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সামরিক শাসনের অবসান হয়, নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। কয়েক মাস পরই ভারতের মুম্বাই শহরে আক্রমণ চালায় পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা।

কিন্তু এমনকি সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেখলেও বলতে হবে যে এখন পাকিস্তানে যা হচ্ছে - তা ভারতের জন্য আরো বেশি চিন্তার বিষয়, বলছেন হুসেইন হাক্কানি, যিনি একজন সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং এখন ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউট ও আবুধাবির আনোয়ার গারগাশ ডিপ্লোম্যাটিক একাডেমির স্কলার।

"এমন একটা সময় পাকিস্তানে এই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে যখন দেশটি সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন, এবং দেশটির এস্টাব্লিশমেন্ট দুর্বল ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে," বলছেন তিনি।

সামনে কী হতে পারে, কী ঝুঁকি

মি.কুগেলম্যানের মত বিশেষজ্ঞরা দুটি 'চরম' সম্ভাব্য চিত্র খারিজ করে দিচ্ছেন।

এর মধ্যে একটি হলো - পাকিস্তান ভারতের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে দু'দেশের মধ্যে মৈত্রী প্রতিষ্ঠার পথ খোঁজার জন্য ( ভারত এতে আগ্রহ দেখাবে না, তবে তা ভিন্ন প্রসঙ্গ)।

অপর চিত্রটি হলো - পাকিস্তান হয়তো ভারতের-দিকে-দৃষ্টিনিবদ্ধ জঙ্গীদের উৎসাহিত করতে পারে সীমান্তের ওপারে একটি আক্রমণ পরিচালনার জন্য।

এ দুটি চিত্রই মি. কুগেলম্যান বাতিল করে দিচ্ছেন ।

কারণ তার মতে, এ মুহূর্তে ভারতের সাথে আরেকটি সংঘাত বা সংকট সৃষ্টি করতে পাকিস্তান আদৌ চাইবে না।

কিন্তু নতুন দিল্লিকে যা চিন্তিত করে তুলতে পারে তা হলো - এটা এমন এক পরিস্থিতি যা দুটি চরম বিন্দুর মাঝখানে পড়েছে - বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর অর্থ - "পাকিস্তান যখন অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে দিশাহারা এবং এলোমেলো অবস্থায় , তখন কোন 'ক্রস-বর্ডার' ঝুঁকির ঢাকনা বন্ধ করে রাখার মত অবস্থা তার নেই," বলছেন মি. কুগেলম্যান।

লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক শিক্ষক অবিনাশ পালিওয়ালও একই সুরে কথা বলছেন।

তিনি বলছেন, পাকিস্তানে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে 'জোড়া সংকট' চলছে তা সীমান্তে চলমান যুদ্ধবিরতির ক্ষতি করতে পারে।

'ভারতের উচিৎ মাথা থেকে পাকিস্তানের চিন্তা ঝেড়ে ফেলা'

অনেকেই মনে করেন, ভারতের এখন পাকিস্তানের ব্যাপারে এই অবসেশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে, এবং এই সংকট নিয়ে বেশি উদ্বেগেরও দরকার নেই।

এমন কিছু ভারতীয় আছেন যারা মনে করেন, পাকিস্তান যে এই সংকটে পড়েছে তা ঠিকই হয়েছে - অনেকটা অন্যের দুর্দশা দেখে মজা উপভোগ করার মতো।

এঁরা বলেন, মনে রাখতে হবে যে ভারতের অর্থনীতি পাকিস্তানের চেয়ে ১০ গুণ বড়, আর দেশটির অর্থনীতির আকার ভারতের ধনী প্রদেশ মহারাষ্ট্রের চাইতেও ছোট।

মি. কুগেলম্যান বলেন, এরকম প্রতিক্রিয়া যে হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

"অনেক দেশই চায় যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিপদে পড়ুক, বিশেষ করে যে প্রতিবেশী সীমান্তের ওপার থেকে আসা আক্রমণকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, যুদ্ধ বাধিয়েছে। যে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে তারা ভারতে সন্ত্রাসী আক্রমণের পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখেছে - এখন সেই বাহিনীকেই বিপদে পড়তে দেখে সেখানে অনেকেই বিশেষ সন্তুষ্টি লাভ করছে।"

কিন্তু মি. কুগেলম্যান এটাও বলছেন যে ভারত যদি এই সন্তুষ্টি লাভ করতে গিয়ে পাকিস্তান থেকে আসা বিপদকে উপেক্ষা করে - তাহলে সেটাও বিপজ্জনক।

মি. হাক্কানি বলছেন, "একটি পরমাণু-শক্তিধর প্রতিবেশী যদি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে তাহলে তা ভারতের স্বার্থের অনুকুল হবে না।"

তবে পাকিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত শরৎ সাভারওয়ালের মত ভাষ্যকাররা এটা বিশ্বাস করেন না যে দেশটির পতন আসন্ন।

তিনি বরং মনে করেন, পাকিস্তান আগেও যেভাবে এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই সামনে এগিয়েছে - এবারও তাই হবে।

মি. পালিওয়াল বলেন, আদর্শিক ও ধর্মীয় চরমপন্থার ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে একটি ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখানো যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে নিয়ন্ত্রণে আনাটা কত প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানের এই পরিস্থিতিতে ভারত কী করতে পারে?

পাকিস্তানে ভারতের আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন টিসিএ রাঘবন। তিনি বলছেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি বর্তমানে যে নিম্নতম মাত্রার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে সেটাকেই বজায় রাখা যায়, এবং কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতিকে ধরে রাখা যায়।

মি. হাক্কানি মনে করছেন, ভারত এ ক্ষেত্রে 'অপেক্ষা করা' এবং 'সীমান্তের দিকে কড়া নজর রাখা'র নীতি নিচ্ছে।

মি. কুগেলম্যান বলছেন, ভারতের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো প্রস্তুত এবং সতর্ক থাকা। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।