কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের ঘটনায় আরও এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি খুলনা অঞ্চলের একসময়কার দুর্ধর্ষ চরমপন্থি সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া।
সূত্র বলছে, পেশাদার অপরাধী শিমুলের সঙ্গে তানভীরও এই খুনে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আনোয়ারুলকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যায় অংশ নেন।
তানভীর ভূঁইয়া মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগের দিন সোমবার আদালতে জবানবন্দি দেন আরেক আসামি শিলাস্তি রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে উঠে এসেছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীর গত ৬ মে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে সল্টলেক ও নিউটাউনের মাঝামাঝি এলাকায় ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি আনোয়ারুলকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
এর আগে, আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি শিলাস্তি রহমান। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ‘ভারতে বাসা ভাড়া করার আগে তাকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে ট্রলি ব্যাগ কিনেছিলেন আসামি আখতারুজ্জামান শাহিন।’
এদিকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমপি আনারকে কলকাতায় রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন শিলাস্তি রহমান। নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে শিলাস্তি এরআগে, দুইবার আদালতে এসে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এমনকি নিজের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগেরও ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ নেপাল থেকে ফিরে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সিয়াম কাঠমান্ডু পুলিশের হাতে আটক আছে। এখন তাকে ভারতে বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
সংসদ সদস্য আনার চিকিৎসা করাতে ১২ মে ভারতে যান। কলকাতার অদূরে বরাহনগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে এক রাত থাকার পর ১৩ মে দুপুর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ মে সংশ্লিষ্ট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বন্ধু গোপাল। ২২ মে নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ৫৬-বিইউ ফ্ল্যাটে খুন হওয়ার কথা জানায় সিআিইডি। এ ঘটনায় বাংলাদেশে চারজন ও কলকাতায় দুজন গ্রেফতার হয়েছেন।
এদিকে, সংসদ সদস্য আনার খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে ২৬ মে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়। পাঁচদিন পর ৩০ মে তারা দেশে ফেরেন। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ওয়ারি বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।
ডিবির হারুনের অনুরোধে কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক ভাঙে দেশটির সিআইডি। সেখানে চার কেজির বেশি খণ্ডিত মাংসপিণ্ড পাওয়া যায়, যা পরে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে ওই দেহাংশ সংসদ সদস্য আনারের কি না।
পরে দেশে ফিরে ডিবির হারুন জানান, কলকাতায় আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্তকাজ শতভাগ সফল হয়েছে। আলামত উদ্ধার, পারিপার্শ্বিক ডিজিটাল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করায় তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। দুদেশের গোয়েন্দাদের তথ্য সমন্বয়ে মামলার তদন্ত পরিচালনা করায় ফলপ্রসূ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। সময় সংবাদ