News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

১২ জুলাই ২০২৪: কোটা সংস্কারের দাবিতে ছুটির দিনেও রাজপথে সরব শিক্ষার্থীরা

খবর 2025-07-12, 8:11am

image-214737-1752211543-bafd122c70f55964161f3aab68a974391752286266.jpg




সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ১২ জুলাই (শুক্রবার) ছুটির দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শুক্রবার শাহবাগে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৪টায়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এরপর বিকেল ৫টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মিছিল নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় ছাড়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের ৬৪ জেলায় অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেব। আমাদের এক দফা দাবি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।’

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার আন্দোলনের ১২তম দিন ছিল শুক্রবার।

শুক্রবার রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

এদিন বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটায় কলাভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে পার্শ্ববর্তী বাহাদুর শাহ পার্ক, কবি নজরুল কলেজের সামনে দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।

এদিন ঢাকার বাইরে প্রায় ১৫টি স্থানে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা মানবন্ধন করতে গেলে ছাত্রলীগ তাতে বাধা দেয়।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল পাঁচটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন তারা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ বিক্ষোভে অংশ নেন।

এদিন চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে বিকেল পাঁচটায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজ ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা অংশ নেন। মিছিলটি ষোলশহর থেকে ২ নম্বর গেট, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি হয়ে নগরের আলমাস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।

এদিন সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরের সড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়।

এদিন ময়মনসিংহেও কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেন। এছাড়া ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নেছা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মানববন্ধন করেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বগুড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। নোয়াখালীর মাইজদী শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা ষড়যন্ত্র করে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, সেই প্রেতাত্মারা যে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়, তা আমি অস্বীকার করতে পারব না। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা করা, সুবিধা-অসুবিধা দেখা। এটি কেউ বাধাগ্রস্ত করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আদালতের প্রতি সবার আস্থা ও শ্রদ্ধা-সম্মান থাকা উচিত। কোটা আন্দোলনের নামে কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’