আর কিছুক্ষণ পরেই ছুটি হতো জুনিয়রদের। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির এক সদস্য।
তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র সেকশনের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে মুহূর্তেই বিকট বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ক্যাম্পাসের মোট ১১টা ভবনের মধ্যে ৪-৫টি ভবনে জুনিয়র সেকশনের ক্লাস। হয়। দুপুরে ছুটির কিছুক্ষণ আগে প্রশিক্ষণ বিমানটি একটি জুনিয়র সেবশনের ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন চোখের সামনে দেখেছি ভাই। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। আর কিছুক্ষণ পরেই সবার ছুটি হতো।
এদিকে দুর্ঘটনার পরে আতঙ্কে ছুটতে থাকেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুইতলা ভবনের নিচ তলায় আঘাত লেগে মুহূর্তেই বিমানের ট্যাংক বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুইতলায়। মাইলস্টোন কলেজের এই ভবনে তখন নিয়মিত পাঠদান চলছিল। বিমান বিধ্বস্তের পর দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন সবাই। চিৎকার আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।
দুর্ঘটনার পরপরই একে একে বের করে আনা হয় হতাহতদের। ঘটনাস্থলে আসে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, গুরুতর আহতদের উদ্ধার কাজে যোগ দেয় হেলিকপ্টার। কয়েক দফায় হেলিকপ্টারে করে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিমানটি বিধস্ত হওয়ার সময় যে বিকট শব্দ হয় তা কোনো বোমার থেকে কম নয়। প্রথমদিকে ঘটনাস্থলে আগুনের তীব্রতায় কেউ কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
নিহত বেড়ে ২০
এ পর্যন্ত বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। আর আহত ও দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭১ জন।
ডিএনএ পরীক্ষায় হস্তান্তর হবে মরদেহ
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ডিএনএ স্যাপম্পলিংয়ের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, হতাহতের ঘটনায় যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মরদেহ দ্রুততম সময়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলেও বার্তায় জানায় আইএসপিআর।