News update
  • Bangladesh Faces $1.25 Billion Export Loss from US Tariffs     |     
  • Israel Expands Gaza Assault as UN Warns of ‘Genocide’     |     
  • World Ozone Day Highlights Progress and Future Action     |     
  • DG Health Services gives 12 directives to treat dengue cases     |     
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     

ভোজ্যতেলের চাহিদার অর্ধেক কি সরিষা থেকে আসবে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খাদ্য 2022-12-29, 3:45pm




বাংলাদেশ সরকার বলছে যে, দেশের অভ্যন্তরে ভোজ্যতেলের যে চাহিদা রয়েছে আগামী তিন বছরের মধ্যে সেই চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ মেটানো হবে সরিষার তেল দিয়ে।

আর এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি বছর থেকেই সরিষার চাষ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভোজ্যতেলের প্রায় ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে মূলত সয়াবিন এবং পামঅয়েলই বেশি আমদানি হয়।

এই নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভোজ্যতেলের ৪০-৫০ ভাগ বাংলাদেশেই উৎপাদন করা হবে বলে জানান তিনি।

চলতি বছরই সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান তিনি।  

বাড়ছে সরিষা চাষ

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এ বছর বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ সরিষার চাষ হয়েছে।

বাংলাদেশে যেসব জেলায় সরিষার ব্যাপক চাষ হয় তার মধ্যে অন্যতম মানিকগঞ্জ জেলা।

এই জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ বলেন, চলতি বছর এই জেলাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে।

চলতি মৌসুমে ৪৭ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত বছর ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল।

“তার মানে এ বছর আমার জমির আবাদের এরিয়া বাড়ছে প্রায় ২৫.৮৬%,” বলেন তিনি।

গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৪৮ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হয়েছিল। এবছর এই উৎপাদন ৩৭-৩৮ শতাংশ উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

“এ বছর উৎপাদন হবে প্রায় ৬৬ হাজার মেট্রিক টন সরিষা।”

জেলার এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সরিষার তেল এবং আস্ত সরিষা-দুটিরই দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আস্ত দানা সরিষা ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারী বাজারে এই দাম কিছুটা কম।

এছাড়া সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত জাত ব্যবহারের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ৬.১০৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল।

চলতি বছর এই পরিমাণ বেড়েছে। এ বছর এরইমধ্যে ৭.৯৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস বিভাগের পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, “এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬.৭ লক্ষ হেক্টর। এবারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আরো বেশি (চাষ) করছে।”

চাহিদা বাড়ছে?

সরিষার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে সংশ্লিস্টরা বলছেন যে, সারা দেশেই সরিষার তেলের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সাথে দেশেও ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ার কারণে গ্রাম এবং শহর- সবখানেই সরিষার তেলের চাহিদা তুলনামূলক বেড়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রধান হেলাল উদ্দিন বলেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে সরিষার তেলের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

এই চাহিদা তেলের মোট চাহিদার ৫-৭ শতাংশ পূরণ করে বলে জানান তিনি। আর বাকি পুরোটাই আমদানি করে আনতে হয়।

তবে রোজার সময়ে সরিষার তেলের চাহিদা আরো বেশি বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি। তখন ভোজ্যতেলের চাহিদা ১০শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।

কতটা সম্ভব?

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিবছর ভোজ্যতেল আমদানি করতে সরকারকে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়।

এই ব্যয়ের একটি বড় অংশই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি দেশে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যায়।

সরকার বলছে, ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তেল ফসলের উৎপাদন ২৪ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব। যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।

বাংলাদেশে সাধারণত আমন ধান চাষের পর জমি পতিত থাকে এবং এর পরে সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের তেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে, সরকার আমন ধানের পর জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদে সেখানে সরিষা চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আর এর জন্য দেশের বিজ্ঞানীরা আমন ধানের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে যেটি ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়।

এরপর জমি পতিত না রেখে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা হবে যেটি ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে পরিপূর্ণ হয়।

আর এর পর ওই জমিতে আবার বোরো চাষ করা সম্ভব বলেও জানান কৃষি মন্ত্রী।

এদিকে, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ৪০-৫০ শতাংশ সরিষার তেলের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা মনে করেন এটি প্রায় অসম্ভব।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রধান হেলাল উদ্দিন বলেন, ভোজ্যতেলের প্রায় অর্ধেক চাহিদা সরিষার তেলের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয় কারণ দেশে সে পরিমাণ সরিষার চাষই হয় না।

এছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে এই তেলের চাহিদাও সয়াবিন তেলের তুলনায় কম বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মি. উদ্দিন বলেন, মানুষের ভোজ্যতেলের অভ্যাস সয়াবিন থেকে সরিষার তেলে হঠাৎ করেই পরিবর্তন করা যাবে না। তার জন্য সময় যেমন দরকার তেমনি উৎপাদনও ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে।

তবে বিকল্প ধারার কৃষি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নয়া কৃষি আন্দোলনের সংগঠক ফরিদা আক্তার বলেন, ভোজ্যতেলের চাহিদার অর্ধেক সরিষার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

তবে এর জন্য ব্যাপক হারে উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

সরিষা উৎপাদন করা হয় যে সময়ে সেই একই সময়ে রবি ফসল হিসেবে আরো কিছু ফসলও উৎপাদিত হয়। যার কারণে এখানে চাষ পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

এর প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তিনি বলেন, সরকার একবার বোরো ধান উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেয়ার কথা বলে, আবার তামাক চাষের জন্য অনুমতি দিচ্ছে। এসব ফসল সেই জমিতে হয় যেখানে সরিষা উৎপাদিত হতো।

বিদেশি নির্ভরতা কমাতে সরিষার চাষ বাড়াতে হলে, তামাক চাষ বন্ধ করে সরিষার জমি বাড়াতে হবে।

ফরিদা আক্তার মনে করেন, ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে মানুষের মধ্যে এই তেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।

তিনি বলেন, “এক সময় তো আমাদের দেশে সরিষা ছাড়া আর কোন তেল তেমন ব্যবহার করা হতো না।  সয়াবিনের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে কারণ এটি আমদানি করে সেটা পরিচিত করাতে হয়েছে।”

তাঁর মতে, সরিষার তেলের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তবে সেটা অসম্ভব নয়।

ভোজ্যতেলের চাহিদার ৫০ শতাংশই সরিষার তেলের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।