News update
  • G20 Backs Climate Declaration as US Boycotts Summit     |     
  • Two Mild Quakes Jolt Dhaka; Epicentres Traced to Badda     |     
  • Bangladesh earthquake death toll rises to 10; scores injured     |     
  • CA for Armed Forces' efficient role to ensure smooth, festive polls     |     
  • Tarique Rahman calls for urgent disaster preparedness after quake     |     

ঢাকায় এক অনন্য উদযাপন: মানুষ, জলবায়ু এবং সংস্কৃতির পুনর্মিলন

জলবায়ু 2025-09-02, 5:07pm

img-20250902-wa0017-01-64f8332db0eacc22b15e546728a0c8d11756811265.jpeg

ঢাকায় এক অনন্য উদযাপন; মানুষ, জলবায়ু এবং সংস্কৃতির পুনর্মিলন



সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের উদ্যোগে এবং 'ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাট লোকাল লেভেল' (CALL) কর্মসূচির অংশ হিসেবে 'বায়োফিলিয়া: রিকানেক্টিং পিপল, ক্লাইমেট, অ্যান্ড কালচার' শীর্ষক এই অনন্য আয়োজনটি আজ ঢাকার একটি প্রখ্যাত কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুব-নেতৃত্বাধীন থিঙ্ক-অ্যান্ড-ডু ট্যাঙ্ক 'জেনল্যাব' এই উদ্যোগের জলবায়ু যোগাযোগ অংশীদার হিসেবে দিনব্যাপী এই উৎসবের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে। প্রাণবন্ত এই উৎসবে কূটনীতিক, নীতিনির্ধারক, স্থানীয় নেতা, শিল্পী, উদ্ভাবক এবং সাধারণ নাগরিকরা একত্রিত হয়েছেন। আয়োজনের লক্ষ্য ছিল কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু কার্যক্রম এবং সংস্কৃতির ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে উদযাপন করা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট-এর এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং প্রতিনিধি ভ্যালেন্টাইন আচানচো। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ ও বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতা জরুরি। আমাদের হাতে সীমিত সময় ও সম্পদ রয়েছে, তাই যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংকট কেবল টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও বহু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথেও জড়িত।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স করিন হেনচেজ পিগনানী  পিনিয়ানি এবং দূতাবাসের শাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন লিরা অতিথিদের স্বাগত জানান এবং দিনব্যাপী এই আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

'সাউন্ডস অফ দ্য সয়েল' শীর্ষক একটি প্রাণবন্ত বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের, বাউল শিল্পী এবং শহুরে শিল্পীরা এতে সুরেলাভাবে একত্রিত হন। তাদের লোক-ফোক ফিউশন সুর মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যকার চিরন্তন বন্ধনকে প্রতিধ্বনিত করে। এর মধ্য দিয়ে জলবায়ু, সংস্কৃতি এবং সম্প্রদায়ের পুনর্মিলনের জন্য উৎসর্গীকৃত দিনের সূচনা হয়।

সকালে 'নেচার-কালচার-আস: বায়োফিলিয়া জার্নি' শীর্ষক একটি ভিজ্যুয়াল গল্প বলার সেশনে বায়োফিলিয়ার মূল চেতনা তুলে ধরা হয়। এরপর ছিল 'কল টকস: ভয়েসেস ফ্রম দ্য ক্লাইমেট ফ্রন্টলাইনস', যেখানে জেনল্যাবের নির্বাহী পরিচালক রাতুল দেব কল টক এর বক্তা - যারা তৃণমূল পরযায়ের মানুশজন তাদের কোচিং করিয়েছেন। এখানে কমিউনিটির প্রতিনিধিরা তাঁদের মাঠপর্যায়ের দৃঢ়তা এবং অভিযোজনের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো তুলে ধরেন। এই পর্বের একটি বিশেষ অংশ ছিল 'সিনার্জি ফর লোকাল ক্লাইমেট সলিউশনস' শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা, যেখানে নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ এবং অনুশীলনকারীরা স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু কার্যক্রমে সহযোগিতা নিয়ে তাঁদের মতামত বিনিময় করেন।

বিকালে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার ওপর আলোকপাত করা হয়। 'ক্লাইমেট ইনোভেশন স্পটলাইট' শীর্ষক আয়োজনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেকসই কৃষি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগকালীন পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা বিষয়ে স্থানীয় উদ্ভাবক, স্টার্টআপ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাঠকর্মীদের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। দিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল 'থ্রেডস অফ দ্য আর্থ' শীর্ষক টেকসই ফ্যাশনের একটি ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী। এতে কবিতা, কোরিওগ্রাফি এবং ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার সঙ্গে প্রাকৃতিক কাপড়, রিসাইকেল করা ডিজাইন এবং ঐতিহ্যবাহী বুননের সমন্বয় ঘটানো হয়। প্রতিটি পোশাক যেন দৃঢ়তা এবং স্থায়িত্বের গল্প বলছিল।

মূল মঞ্চের বাইরে দিনব্যাপী 'বায়োফিলিয়া বিয়ন্ড দ্য স্টেজ' বিভিন্ন ধরনের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে। দর্শনার্থীরা 'ইন লাইট' শীর্ষক প্রকৃতি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন, 'কল ক্যানভাস' শীর্ষক অংশগ্রহণমূলক শিল্পকর্মে অংশ নেন, 'ক্লাইমেট ভিলেজ'-এ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত হন এবং 'ক্লাইমেট লেন্স ভিআর'-এর মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখভাগের বাস্তবতা ভার্চুয়ালি অনুভব করেন। এছাড়া, আগত অতিথিরা 'ট্রি অফ কমিটমেন্টস'-এ জলবায়ু সুরক্ষার জন্য তাঁদের ব্যক্তিগত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, যা সম্মিলিত দায়িত্ব ও আশার প্রতীক ছিল।

সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্প ও জলবায়ু সুরক্ষার প্রতি সমর্থন এক হয়ে ধরা দেয়। এতে প্রখ্যাত থিয়েটার দল 'দ্য থিয়েট্রিক্যাল কোম্পানি' জলবায়ু সংকট ও মানুষের সংগ্রাম নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী নাটক মঞ্চস্থ করে। এরপর ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড জলের গান-এর এক দারুণ পরিবেশনা, যা প্রকৃতি, নদী ও মানুষের টিকে থাকার গল্পকে সুরে–সুরে ছড়িয়ে দেয়।উৎসবের সমাপ্তি হয় 'ইকোস অফ দ্য ডেল্টা' শীর্ষক নৃত্য, সংগীত এবং গল্প বলার এক কাব্যিক সংমিশ্রণে, যা দর্শকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।

'ফ্রেন্ডস অফ ক্লাইমেট' শীর্ষক সমাপনী সেশন এবং জলবায়ু অঙ্গীকার অনুষ্ঠানে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান জলবায়ু শপথ পাঠকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান। এছাড়া, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম এনডিসি সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সবাই জলবায়ু সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হন এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার শপথ নেন।

এই আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল 'ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাট লোকাল লেভেল' (CALL) নেটওয়ার্কের উদযাপন। এই নেটওয়ার্কটি নয়টি সুইস এনজিও-এর একটি যৌথ উদ্যোগ: সিবিএম (ক্রিশ্চিয়ান ব্লাইন্ড মিশন), এনফ্যান্টস ডু মন্ডে, জিএআইএন (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন), হেক্স/ইপিইআর, হেলভেটাস বাংলাদেশ, সলিডার সুইস, সুইসকন্ট্যাক্ট, সুইস রেড ক্রস এবং টের দেস হোমস।

সমাপনী বক্তব্যে করিন হেঁচো পিনিয়ানি সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করার জন্য তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যদি আমরা আমাদের নদীগুলো এবং এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকা রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের সবুজ দক্ষতা ও সবুজ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের শ্রমশক্তির ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় নয়, বরং পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ায় নিহিত।” পরিশেষে প্রধান জলবায়ু শপথ পাঠকারী মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান সবাইকে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য অঙ্গীকার করতে এবং এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেন।

বায়োফিলিয়া ২০২৫ শুধু একটি দিনের ইভেন্ট হিসেবে নয়, বরং মানুষ, জলবায়ু এবং সংস্কৃতিকে সংযুক্তকারী ঐক্য ও প্রতিশ্রুতির এক অনন্য প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রাকৃতিক খাবার ও ফ্যাশন, শিল্প ও উদ্ভাবন, এবং থিয়েটার ও সংগীতের এক সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানটি প্রমাণ করে যে একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য মানুষ, জলবায়ু এবং সংস্কৃতির পুনর্মিলন আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।   - প্রেস বিজ্ঞপ্তি