News update
  • Chuadanga farmers thrive as cauliflower yields hit new high     |     
  • Jamaat and allies set to begin seat-sharing discussions from Tuesday     |     
  • ACC sues ex-minister Obaidul Quader, 13 more over illegal flat     |     
  • Japan Issues Tsunami Alert After Strong 7.6 Quake     |     
  • Bangladesh Plans Record Flag-Parachute Display on Victory Day     |     

তেলের দাম বেঁধে দিয়ে রাশিয়াকে বাগে আনা কতটা সম্ভব হবে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক জ্বালানী 2022-12-06, 9:39am




রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬০ মার্কিন ডলারের বেশি দামে বিক্রি না হতে পারে - তা নিশ্চিত করতে সোমবার থেকে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে বিশ্বের শিল্পোন্নত শীর্ষ সাতটি দেশের জোট (জি-সেভেন) এবং অস্ট্রেলিয়া। একই দিনে সাগর পথে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো। মূল লক্ষ্য - তেল বিক্রি থেকে রাশিয়ার আয় দিয়ে ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা খর্ব করা । কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন সাথে সাথেই দেখা দিয়েছে – এ ধরণের শাস্তি প্রয়োগ করা আদৌ কতটা সম্ভব হবে?

আংশিকভাবেও যদি তা নিশ্চিত করা করা যায় তাহলে রাশিয়া এবং বাকি বিশ্বের ওপর তার পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে? রাশিয়াই বা পাল্টা কী ব্যবস্থা নিতে পারে? এর তাৎক্ষণিক যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তা হলো - সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম চড়ে গেছে। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম একদিনে দুই শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮৭ ডলার ছাড়িয়ে যায়। নরওয়ের জ্বালানি পরামর্শক সংস্থা রিস্টাডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ের্গেন লিয়ন মনে করেন বাজারে তেলের দাম চড়বেই। “রাশিয়া খুব পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে তারা এই মূল্য সীমা মেনে কারো কাছে কোনও তেল বিক্রি করবে না, “ বিবিসিকে বলেন মি লিওন। “ফলে আগামী মাসগুলোতে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি হবে। আগামী সপ্তাহগুলোতে তেলের দাম বাড়বে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৯৫ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনমনীয় রাশিয়া

রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে তারা জি-সেভেন জোটের বেঁধে দেওয়া এই মূল্যের কোনও তোয়াক্কা করেনা।

ক্রেমলিন হুমকি দিয়েছে - যেসব দেশ এবং কোম্পানি জি সেভেনের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে তাদের কাছে তেলই বিক্রি করা হবেনা । তাতে যদি তেলের উৎপাদন কমাতেও হয় তাতেও রাশিয়া পিছপা হবেনা। রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক রোববার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া রোসিয়া-টুয়েন্টি ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জি-সেভেন জোটের এই উদ্যোগ নস্যাৎ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য রুশ সূত্র উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এমন একটি ডিক্রি জারির উদ্যোগ নেয়া হলো - যাতে কোন রুশ কোম্পানি যেন জি-সেভেনের বেঁধে দেওয়া দামে তেল বিক্রির জন্য কোন বিদেশী কোম্পানির সাথে যোগাযোগ না করতে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এখন পর্যন্ত রাশিয়াকে খুব বেশি চাপে ফেলেছে তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই। ২০২১ সালের চেয়ে জ্বালানি রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় এ বছর বেশি হবে।

ফলে, প্রশ্ন উঠেছে তেলের বাজারে একটি দাম বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করা আদৌ সম্ভব কিনা। এটা সত্যি যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি কেনাবেচায় সংশ্লিষ্ট শীর্ষ জাহাজ কোম্পানি থেকে শুরু করে বীমা কোম্পানি এবং ব্যাংকগুলোর অনেকগুলোই জি-সেভেন এবং ইউরোপ-ভিত্তিক। তাদের ওপর নজরদারি করলেই বেঁধে দেওয়া দামে তেল বিক্রি করতে রাশিয়া হয়তো বাধ্য হবে। তবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে সাপ্লাই চেইন বা কেনা-বেচার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবগুলো পক্ষের ওপর। কিছু ইনস্যুরেন্স এবং শিপিং কোম্পানি সাবধান করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কাগজে-কলমে ভুয়া মূল্য প্রদর্শন শক্ত কিছু নয়। তাছাড়া তেলের কালোবাজার ওপেন সিক্রেট। ইরান এবং ভেনিজুয়েলা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বহুদিন ধরেই কালোবাজারে তেল বিক্রি করছে। মালিকানা অস্পষ্ট এমন ভুতুড়ে ট্যাংকারে করে তেল একদেশ থেকে একদেশে যায়। মাঝ সমুদ্রে ট্যাংকার থেকে অন্য ট্যাংকারে তেল সরানো হয়। অন্য ব্রান্ডের কিছু তেল মিশিয়ে দিয়ে তেলের উৎপত্তিস্থল ধোঁয়াটে করে ফেলা হয়।

চীন-ভারত ফ্যাক্টর

তবে সবচেয়ে বড় কথা বর্তমানে রুশ তেলের বড় দুই ক্রেতা চীন এবং ভারত আদৌ জি-সেভেনের বেঁধে দেওয়া মূল্য মানবে কিনা - তা নিয়ে বিস্তার সন্দেহ রয়েছে। রাশিয়া তেল বিক্রি করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করে চীন ও ভারতের ওপর, বিশেষ করে চীনের ওপর। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে রাশিয়ার সাথে তাদের জ্বালানি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে চীনে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় উৎপাদন বাড়বে, এবং সেই সাথে বাড়বে তেলের চাহিদা। ফলে, মস্কোর সাথে দাম নিয়ে বচসার কোনও পথ চীন এখন নেবে না।

দাম নিয়ে জি-সেভেন জোটে আপোষ?

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে রুশ তেলের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ নিয়ে জি-সেভেন জোটে অনেক তর্ক-বিতর্ক, মতবিরোধ হয়েছে, এবং ৬০ ডলার মূল্যটি শেষ পর্যন্ত “একটি আপোষ।“ ইউরোপের কিছু দেশ, বিশেষ করে যাদের জাহাজের ব্যবসা রয়েছে, তারা চাইছিল এই মূল্য যেন ৭০ ডলারের নিচে না করা হয়। অন্যদিকে ইউক্রেন এবং তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা যেমন পোল্যান্ড এবং বাল্টিক দেশগুলো দামের সীমা ৩০ ডলার নির্ধারণ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। অনেকে বিশ্লেষক মনে করছেন এমন একটি দাম শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দামে আসলে রাশিয়া এখন চীন বা ভারতে তেল বিক্রি করছে। রুশ উরাল ব্রান্ডের তেলের দাম শুক্রবারও ছিল ব্যারেল প্রতি ৬৭ ডলার। পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো চাইছিল না যে বেঁধে দেওয়া দাম এতটাই কম হয় যাতে সেই দামে রাশিয়া তেল বিক্রির উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং জ্বালানির বাজারে সরবরাহের সংকট তৈরি হয়।

ক্ষুব্ধ ইউক্রেন

এ কারণেই ইউক্রেন একবারেই খুশি নয়। তারা মনে করছে এই দাম রাশিয়ার ওপর কোনও চাপই তৈরি করবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শনিবার খোলাখুলি বলেন, জি-সেভেন “কঠিন সিদ্ধান্ত” এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ৬০ ডলারে তেল বিক্রি করতে পারলে রাশিয়া বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে যা দিয়ে তারা স্বচ্ছন্দে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ধরে রাখবে। এই দাম নির্ধারণের বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে রাশিয়াকে বাগে আনার উপায় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে মতভেদ বাড়ছে। অনেক দেশ মনে করছে এমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় যাতে তাদের ওপরই মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ভয় বাড়ছে। পশ্চিমা অনেক দেশের মধ্যে এমন আশংকাও রয়েছে রুশ তেলের সরবরাহ বেশি কমে গেলে জ্বালানির বাজারে দাম বাড়বে, এবং তাতে ক্ষতির চেয়ে রাশিয়ার লাভ হবে। কম তেল বেচেও বেশি আয় হতে পারে তাদের। তেলের সরবরাহ কম গেলে বাকি উৎপাদকরা উৎপাদন বাড়িয়ে ঘাটতি মেটাতে প্রস্তুত তার কোনও লক্ষণ নেই। বরঞ্চ ওপেক প্লাস জোট রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে -তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত তারা বদলাবে না। রুশ তেলের ওপর দাম বেঁধে দেওয়ায় মি. পুতিন কতটা চাপে পড়েন তা বুঝতে এখনও সময় লাগবে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তে জ্বালানির বাজারে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে -তা পরিষ্কার । তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।