পবিত্র রমজান মাস রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। এ সময় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদতে মগ্ন হন, আত্মশুদ্ধির পথ অনুসরণ করেন। খুলনা বিভাগের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম জামে মসজিদ তাদের অন্যতম প্রিয় স্থান।
সাদা টাইলসের সৌন্দর্যে মোড়ানো দারুল উলুম জামে মসজিদের ২২৬ ফুট উচ্চতার মিনার খুলনা বিভাগের সর্বোচ্চ। ইসলামের সৌন্দর্যবোধ ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে নির্মিত এই মসজিদটির সামনে ও পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত সবুজ বাগান। বনসাই, সুপারি, নারিকেলসহ বিভিন্ন গাছপালা পরিবেশকে মনোরম করে তুলেছে। মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা প্রকৃতির শোভা মুসল্লিদের মনে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দেয়।
মসজিদটিতে রয়েছে ১৫টি গম্বুজ, অসংখ্য মিনার ও সুদৃশ্য গেট। বিশেষভাবে নির্মিত কোরআন সদৃশ প্রবেশপথটি কওমি মাদ্রাসার সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র।
আজানের ধ্বনি ভেসে এলে মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির নুরানি জগতে প্রবেশ করতে ছুটে আসেন এখানে। সাজানো-গোছানো তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে রয়েছে ঝাড়বাতি ও আলোকসজ্জা, যা রাতে এক অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে। মসজিদের ভেতরে খোদাই করা চামড়ার ওপর আয়াতুল কুরসি ও কোরআনের অন্যান্য আয়াত খোদিত রয়েছে। ৮ পাখার ২টি বিদেশি ফ্যান মসজিদটির সৌন্দর্য ও ব্যবহারিক সুবিধা বাড়িয়েছে। মুসল্লিদের বসার জন্য রয়েছে নারকেল ও তালগাছের গোড়া দিয়ে তৈরি ২০টি বিশেষ চেয়ার।
এ মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি। রাতে মসজিদের আলোর ঝলকানি দেখা যায় অনেক দূর থেকে। ওজুর জন্য রয়েছে সুন্দর ব্যবস্থা। মসজিদের ভেতরে রয়েছে কাঠের কারুকার্য খচিত কাজ। যারা বসে নামাজ পড়েন, তাদের জন্য রয়েছে নারকেল ও তালগাছের গোড়া দিয়ে তৈরি ২০টি চেয়ার।
স্থানীয় মুসল্লিদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে নামাজ আদায় করতে আসেন অনেকে। এখানে নামাজ আদায় করে আলাদা তৃপ্তি পান তারা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনায় আসা লোকজন দেখতে আসেন এই মসজিদ।
ষাটের দশকে তালগাছিয়ার পীর হজরত মাওলানা মকসুদুল্লাহ ও আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.)-এর অনুপ্রেরণায় খুলনার বিশিষ্ট সমাজসেবক হাজি আবদুল হাকীম জমাদ্দার ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করেন জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা।
২০০০ সালে ইসলামি আইন গবেষণা অনুষদ (ইফতা) এবং তাফসির বিভাগ চালু করা হয়। মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষা শেখানো হয় এ মাদ্রাসায়। আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় এতিম ও দরিদ্রদের শিক্ষাগ্রহণে বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটির মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মোশতাক আহমদ বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে দেড় হাজারের অধিক ছাত্র রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ ছাত্র আবাসিক। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই করে থাকে। কোনো সরকারি সাহায্য ছাড়াই মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছে।’
জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘১৯৮৪ সালে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা হাজি আবদুল হাকীম জমাদ্দারের মৃত্যুর পর হাল ধরেন তার ছেলে আবদুল জব্বার জমাদ্দার। তিনিই এখন মসজিদের যাবতীয় খরচ বহন করেন।’
বিভাগের অন্যতম সুন্দর এ মসজিদ দেখে মুগ্ধ হন সবাই। এই মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাক মানবকুলে, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। সময়