র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান। তবে যতদিন দায়িত্বে থাকবেন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সমসাময়িক বিষয় এবং সাম্প্রতিক আভিযানিক কার্যক্রম সম্পর্কে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন র্যাব মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে গুম খুনসহ কিছু অভিযোগ আছে। র্যাবের দ্বারা যারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সেসবের বিচার নিশ্চিত করা হবে। ভবিষ্যতে এ বাহিনী এমন কোনো কার্যক্রমে কারও নির্দেশে জড়িত হবে না ।‘
র্যাব মহাপরিচালক আরও জানান, ‘র্যাবে আয়নাঘরের বিষয়ে তদন্ত চলছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত করছে। তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেয়া হবে। তবে যতদিন থাকব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব ।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টের পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ১৬ জন র্যাব সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানো ২৩ জনকে গ্রেফতার এবং নির্দেশদাতাসহ ৩৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযানে।
তিনি আরও বলেন, এ চার মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য চেষ্টা করে আসছি আমরা, তবে আমি মনে করি, এখনও প্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে যায়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দেশের জনগণের আশা, যে পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চান তারা দেখতে সেখানে এখনও যেতে পারিনি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায়।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের সময় ১৬৮টি অস্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছে র্যাবের, তারমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৯০টি।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় হামলা, হত্যা ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে এবং নাশকতার নেতৃত্বদানকারী হিসেবে যাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে; তাদের মধ্যে ০৪ জন সাবেক মন্ত্রী, ১৭ জন সাবেক এমপি, সাবেক মেয়র/উপজেলা/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ৪০ জন, কাউন্সিলর/মেম্বার ১৬ জন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বপুরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ৩০ জন সরাসরি গুলিবর্ষণকারীসহ সর্বমোট ৩৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব মহাপরিচালক ফের বলেন,সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই র্যাব সৃষ্টির পর আজ পর্যন্ত যে সমস্ত জনগণ র্যাবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিত যেমন নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনসহ হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারে কাছে দুঃখ ও ক্ষমা প্রকাশ করছি। এ সমস্ত ঘটনার বিচার সুষ্ঠুভাবে হয় সেটার আমরা প্রত্যাশা করি। অন্তর্বর্তী সরকার গুম, খুন কমিশন গঠন করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত করছে। আশা কবছি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, তার তদন্ত হবে এবং বিচার হবে। এভাবেই আমাদের দায়মুক্তি সম্ভব।
র্যাব সৃষ্টির পর থেকে সংস্থাটির বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে এসময় সংস্থাটির মহাপরিচালক দেশ গঠনে সকল মানুষের সহায়তা কামনা করেন এবং আগামীতে কারও নির্দেশেই খারাপ কর্মকাণ্ডে জড়াবে না সংস্থাটি বলেও জানান। সময় সংবাদ