News update
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     

লিবিয়া হয়ে ইতালি যাত্রা: ৫ মাস ধরে খোঁজ নেই ১৪ যুবকের

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2025-07-21, 1:47pm

624f1e0bab2729089ff7b992dedb5ed7d8472044f9dfb947-cfce5945294eed22f93b1518aac594631753084050.png




উন্নত জীবনের আশায় লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের ১৪ জন যুবক। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে ওই যুবকদের কোনো খোঁজ নেই।

তাদের পরিবারের অভিযোগ, দালালচক্রের মাধ্যমে তারা লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর বন্দি অবস্থায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। তাদের মুক্তির জন্য পরিবার থেকে ভিটেমাটি বিক্রি করে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে লাখ লাখ টাকা দিলেও এখন পর্যন্ত সন্তানের কোনো খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো।

জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়েছিলেন এই ১৪ যুবক। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর একপর্যায়ে দালালদের মাধ্যমে তারা মাফিয়া গোষ্ঠীর হাতে বন্দি হন। শুরু হয় নির্যাতন। তারপর তাদের মুক্তির জন্য দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। অনেকেই কয়েক দফায় মুক্তিপণ দেয়ার পরও ছেলের খোঁজ পাননি।

নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন, রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে সালমান বেপারী এবং চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার। একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায় এবং নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈও একই দালালচক্রের ফাঁদে পড়েছেন।

এছাড়াও, বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসীর ছেলে খলিল খালাসী, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, জলিল বয়াতীর ছেলে আল-আমিন বয়াতী এবং সিদ্দিকুর রহমান ঘরামীর ছেলে আলী ঘরামী সবাই একই যাত্রায় নিখোঁজ হয়ে পড়েছেন।

খলিল খালাসীর বাবা আজিজ খালাসী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবুল হাওলাদার জোর করে ছেলের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। বলে, ‘ইতালি পাঠাব’। এরপর একে একে আমি ৩৬ লাখ টাকা দিয়েছি। প্রথমে ১৬ লাখ, এরপর ৫ লাখ, শেষে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে আরও ১৫ লাখ টাকা নেয়। এখন আমার ছেলে কোথায় আছে তাও জানি না।’

নিখোঁজ সোহেল চৌকিদারের স্ত্রী রুনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী যাওয়ার আগে বাড়িতে তিনটি মেয়ে রেখে যান। জীবনের সব জমানো টাকা, এমনকি বাড়ির জমিজমাও বিক্রি করে দিয়েছি। বাবুল প্রথমে নেয় ১৪ লাখ, পরে ১২ লাখ, শেষে ৫ লাখ। কিন্তু এখন পাঁচ মাস ধরে আমার স্বামীর কোনো খবর নেই। না খেয়ে দিন কাটে, মেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারি না।’

নিখোঁজ লিটনের বাবা কানাই রায় বলেন, ‘বাবুল, তার স্ত্রী চুন্নু বেগম, এবং মেয়ে সোনিয়া ও শশী এই চারজন মিলে আমার কাছ থেকে মোট ৫৫ লাখ টাকা নেয়। একবার ২০ লাখ, তারপর ১৫, পরে আবার ২০ লাখ টাকা। লিবিয়ায় আমার ছেলেকে বন্দি করে নির্যাতন করে টাকা আদায় করেছে। এই প্রমাণের ভিডিওও আমার কাছে আছে। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি ‘

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মানবপাচার চক্রের হোতা হিসেবে পরিচিত বাজিতপুর গ্রামের মৃত আয়নাল হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদার প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে প্রথমে ইতালি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৫-২০ লাখ টাকা করে নেয়। পরে লিবিয়ায় জিম্মি করে আরও ৩০-৪০ লাখ টাকা আদায় করে। তার স্ত্রী চুন্নু বেগম এবং দুই মেয়ে সোনিয়া ও শশি আক্তারও এই প্রতারণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা এখন পুলিশের সহায়তা চেয়ে দালালচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান। এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বলেন, ‘নিখোঁজ স্বজনদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এসব পরিবারের কেউই শুরুতে বিষয়টি প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের জানাননি। ফলে তাদের সঠিকভাবে সহায়তা করা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের বিপজ্জনক পথে পাড়ি না দিতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।’

এই ঘটনার পর পুরো বাজিতপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে এখন শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভের ছায়া। পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে কান্না আর প্রহারের প্রহর গুনে।