ভারতের আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের শেয়ারদরে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) প্রাক-বাজার লেনদেনে বোয়িং কোম্পানির শেয়ারদর ৭.৫ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়; যা সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন।
বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম কমে ১৯৭ ডলার ৮২ সেন্টে নেমেছে।
এর আগে সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান, যাতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, আহমেদাবাদের কাছাকাছি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি দিল্লি থেকে দুবাই যাচ্ছিল বলে জানা গেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
এই দুর্ঘটনা ড্রিমলাইনার সিরিজের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এই ঘটনার আগ পর্যন্ত এই সিরিজের বিমানের দুর্ঘটনার কোনো রেকর্ড ছিল না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুর্ঘটনার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি খুবই দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
স্যাক্সো ইউকে-এর বিশ্লেষক নিল উইলসন বলেন, “ড্রিমলাইনার প্রোগ্রাম বোয়িংয়ের অন্যতম আস্থার জায়গা ছিল। এই দুর্ঘটনা সেই আস্থাকে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে।”
বোয়িং অবশ্য দুর্ঘটনার পর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও ভারতীয় ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বোয়িং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা সমস্যায় ভুগেছে। ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলো। এই নতুন দুর্ঘটনা সেই পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় নতুন বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বিমান দুর্ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের কোনো আরোহী বেঁচে নেই। বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন।
স্থানীয় পুলিশপ্রধান জিএস মালিক জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটিতে থাকা কোনো যাত্রীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জিএস মালিক জানান, আবাসিক এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ায় কিছু স্থানীয় বাসিন্দারও মৃত্যু হতে পারে।
তবে সব আরোহীর মৃত্যুর ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত বা আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে বিমানটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পরই এটি আছড়ে পড়ে।
বিমানটিতে ২৩২ জন সাধারণ যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান ছিলেন।
সামাজিক মাধ্যমে এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি ঘরবাড়ির খুব কাছ থেকেই উড়ে যাচ্ছিল। এরপরই হাঠাৎই সেটি নিচে নামতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পরে প্রচণ্ড ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
এদিকে জানা গেছে, বিমানটি আছড়ে পড়েছে গুজরাটের আহমেদাবাদের একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে, যেখানে এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা থাকতেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এতে অন্তত ৫ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বিমানের একটি অংশ ‘বিজে মেডিকেল কলেজের’ ছাত্রাবাসের ভেতরে আটকে আছে। ছবিতে হোস্টেলের ক্যান্টিনের টেবিলে কিছু খাবারের প্লেটও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।