News update
  • Jhenaidah-4 MP missing after going to India for treatment     |     
  • UN HR chief wants BD provide safety to fleeing Rakhine people      |     
  • Quader dissatisfied over the plan of imposing 15% VAT on metro rail     |     
  • Gaza hospital says 20 killed in Israeli strike on Nuseirat     |     
  • Officials warned against negligence in OMS food distribution     |     

ঢাকার ভূমিকম্প কী বার্তা দিচ্ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2023-05-05, 7:34pm

resize-350x230x0x0-image-222158-1683278869-a62be49f415020faac8398a6964cdd141683293674.jpg




পৃথিবীর কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঢাকা শহর জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই শহরের জনসংখ্যা। সব ধরনের সেবা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় সবাই জড়ো হয় এখানে। কর্মব্যস্ত রাজধানী কিছুটা হলেও স্থবির থাকে শুক্রবার। কারণ, শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। কিন্তু শুক্রবার সরকারি ছুটির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছুটি থাকে। একসপ্তাহের কর্মব্যস্ততা শেষে মানুষ একদিন শান্তিতে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সকালে রাজধানীর বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙিয়েছে ভূমিকম্পের কাঁপুনি।

শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।

ভূতত্ববিদদের অনেকে বলছেন বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে।

তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পের মতো ঢাকার আশপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ভূতত্ববিদ হুমায়ুন আখতারও বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখেছি আমরা।

এর আগে দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, রাজধানীর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের দুর্বল ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, ঢাকার আবাসিক এলাকার মাটি নরম ও দুর্বল। এ ধরনের মাটিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বহুতল ভবন হলে তা মাঝারি মাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

ভূতত্ববিদরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ঢাকা শহর ও এর আশপাশের এলাকা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে আট মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের অন্তত ছয় হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাণহানি হবে অন্তত তিন লাখ মানুষের।

এ অঞ্চলের ভূমিকম্পের ইতিহাস:

সৃষ্টির পর ভৌগলিক নানান পরিবর্তনে পৃথিবী। কোটি কোটি বছর ধরে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনে বিলীন হয়েছে দৈত্য-দানব আকৃতির প্রাণীও।

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায়, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে। আর এই গোটা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। আবার প্রতিটি স্তর একাধিক টেকটনিক প্লেটে গঠিত। এসব বিশাল আকারের প্লেটগুলো নানান সময়ে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে আলাদা আলাদা ভূমি। আর ঠিক এমনই ইউরেশিয়ান, ভারত ও বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে তৈরি বাংলাদেশ। আর এসব প্লেটের ধাক্কায় অতীতে এ দেশে অনেকবার ভূমিকম্প হয়েছে।

ভূ-পর্যালোচকরা বলছেন, ১৮শ’ থেকে ২ হাজার বছর আগে কুমিল্লায় আসে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি গোষ্ঠী। কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে বৌদ্ধবিহার স্থাপন করলে ৮০০ থেকে হাজার বছর পর ভূমিকম্পে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন হলে তাদের একটি অংশ পুনরায় ফিরে যায়।

১৫৪৮ সালে ভূমিকম্প সিলেট ও চট্টগ্রাম ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়। ভূপৃষ্ঠে ফাটলসহ কাদাপানি উদ্গীরণ হয়। আর ১৬৪২ সালেও তীব্র ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট। ১৭৬২ সালে টেকনাফ মিয়ানমার চ্যুতিতে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড ৬ মিটার উপরে উঠে যায়। এ ছাড়া মিয়ানমারের চিদুয়া আইল্যান্ড ৬ মিটার উপরে উঠে আসে এবং সীতাকুণ্ড পাহারে কাদাবালু উদ্গীরণ হয়।

১৭৭৫, ১৮১২, ১৮৬৫ সালে সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হলেও ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে বহু দালানকোঠা ও নদীর পার দেবে যায়। বলা হয়, এই ভূমিকম্পের ফাটলে পরে মারা পড়েছিল মরমী কবি ও বাউল শিল্পী হাসন রাজার হাতি। আর ১৮৯৭ সালে ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে বাড়িঘর ভেঙে ৫৪৫ জন মারা যান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ময়মনসিংহ রাজশাহীসহ ঢাকা জেলা। এ ছাড়া ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পেও ঘরবাড়ি ও মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশে ১৯০০ সালের পরবর্তী সময়ে প্রায় ১০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৬৫টির বেশি ভূমিকম্প ১৯৬০ সালের পরবর্তী সময়ে রেকর্ড করা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ফ্রিকোয়েন্সি লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।