News update
  • Tarique Rahman’s gratitude to people for welcoming him on his return     |     
  • Attorney General Md Asaduzzaman resigns to contest election     |     
  • Zubayer Rahman Chowdhury takes oath as Bangladesh Chief Justice     |     
  • Iran’s president says his country is in a full-scale war with the West     |     
  • Dhaka’s air turns ‘very unhealthy’ amid fog     |     

পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে কালাজ্বরের প্রকোপ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2022-07-18, 9:30am




প্রায় ভুলে যাওয়া কালাজ্বর ফের হানা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ মূলত কাঁচা বাড়ির বাসিন্দারা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন৷

একসময় কলেরা বা বসন্তের মতো কালাজ্বরের প্রকোপ ছিল পশ্চিমবঙ্গে৷ তখন বহু মানুষ কার্যত বিনা চিকিৎসায় এই জ্বরে মারা গেছেন৷ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সুকুমার রায় খুব অল্প বয়সে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই কলকাতা শহরে মারা যান৷ সেই সময় তার চিকিৎসা করানো যায়নি৷ ২১ শতকে যখন কলেরার প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে, তখন পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় দেখা দিয়েছে কালাজ্বর৷ স্বাস্থ্য ভবনের সূত্র অনুযায়ী, ১১টি জেলায় কালাজ্বরে আক্রান্ত ৬৫ জন রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে৷ উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া প্রভৃতি জেলায় রোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এই রোগ চিহ্নিত করা কঠিন নয়৷ বিশেষ ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে রোগ নির্ণয় সম্ভব৷

ম্যালেরিয়া যেমন মশাবাহিত রোগ, তেমনই কালাজ্বরকে বহন করে মাছি৷ ১৪ দিনের বেশি জ্বর, কাশি, লিভার বেড়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা বা ত্বকের রং পরিবর্তন-সহ নানা উপসর্গ থাকলে বোঝা যায় কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন৷ ভিজে, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বসবাসকারী স্যান্ড ফ্লাই বা বেলেমাছি এই রোগের জীবাণু বহন করে৷ এই মাছি মানুষকে কামড়ালে তার দেহে কালাজ্বরের জীবাণু চলে আসতে পারে৷ ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এই রোগে মৃত্যু অসম্ভব নয়৷ এ বছর কালাজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা চিন্তায় ফেলার মতো৷

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের দাবি, মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা মানুষজনের মাধ্যমে এই রোগ পশ্চিমবঙ্গে ছড়াচ্ছে৷ইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘‘কয়েকটি অঞ্চলে এই রোগ বেশি হয়৷ বিশেষত গাঙ্গেয় অববাহিকা সংলগ্ন অঞ্চল, যেহেতু এ সব এলাকায় বেলে মাছির বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে৷''

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, ‘‘এই রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর রোগীকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে৷ নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ এক বাঙালি বিজ্ঞানী এই রোগের ওষুধ আবিষ্কার করেন৷ ব্রিটিশ ভারতে ১৯২০ সালে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী উদ্ভাবন করেন ইউরিয়া স্টিবামাইন-এর৷

রোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন, আক্রান্তদের যেন পাকা বাড়ি করে দেওয়া হয়৷ পাকা বাড়ি কেন? জাতীয় ও রাজ্যস্তরে একাধিক আবাস যোজনা চললেও গ্রাম বাংলার বহু মানুষের কাছে পাকা বাড়ি এখনো স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে৷ এর ফলে কাঁচা বাড়ির বাসিন্দারা সহজেই বেলে মাছির দ্বারা বাহিত কালাজ্বরের জীবাণুর শিকার হচ্ছেন৷ অর্থাৎ, অন্যান্য রোগের মত কালাজ্বর শুধুই চিকিৎসাশাস্ত্রের বিষয় নয়, এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে রয়েছে নিখাঁদ আর্থসামাজিক কারণ৷

দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা দেবেন মণ্ডল এখনো কাঁচা বাড়িতে বসবাস করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা জানতেই পারি না প্রকল্পের কথা৷ অনেক পরে যখন কানে আসে, তখন দেখি আবেদন করার দিন পার হয়ে গিয়েছে৷ গ্রামের অনেক মানুষেরই পাকা ছাদ নেই৷''

গ্রামবাসী দেবব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আবাস যোজনার টাকা পেতে গেলে কমপক্ষে হাজার পাঁচেক টাকা নেতাদের দিতে হয়৷ আবার অনেকে বাড়ির জন্য টাকা পেলেও সেটা অন্য কাজে লাগিয়ে ফেলেন৷''

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘গ্রামের হতদরিদ্র মানুষেরই এই রোগ হয়, যাদের মাটির ঘর, ঠিক মতো নিকোনো হয় না, যাদের ঘরের মেঝেতেই শুয়ে দিন কাটাতে হয়, তারা বেলে মাছির শিকার৷ এই মাছি বেশি উঁচুতে উড়তে পারে না৷ খাটে মশারি টাঙিয়ে শুলেই এর থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷ কিন্তু দরিদ্র মানুষের সেটুকু জোগাড়ের সামর্থ্য নেই৷''

অথচ গরিব মানুষের গৃহ নির্মাণের প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর রয়েছে৷ চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি রাজ্য সফরে এসে অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার সুবিধা এখানকার মানুষ পাচ্ছেন না৷ আবার এ রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে নিরন্তর অভিযোগ করে, কেন্দ্র প্রাপ্য টাকা ঠিক সময় দিচ্ছে না৷

স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ কালাজ্বর নিয়ে গবেষণা করেছেন ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী৷ ডাব্লুএইচও-র প্রাক্তন এই সদস্য বলেন, ‘‘শুধু সরকারের ঘাড়ে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ কালাজ্বরের ঢেউ ২৫-৩০ বছর পর পর ফিরে আসবে, তাতে মানুষ আক্রান্ত হবেই৷ ১৮৩০ সালে অবিভক্ত ভারতের যশোর জেলায় ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন এই জ্বরে৷ ভারতের মতো বাংলাদেশ, পাকিস্তানেও এই জ্বরের খোঁজ পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ গরিব উপমহাদেশে কালাজ্বর ফিরে ফিরে আসবে৷ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘দারিদ্র্য যতদিন থাকবে, এই রোগও থাকবে৷ এই রোগকে নির্মূল করতে গেলে দারিদ্রকে মুছে ফেলতে হবে৷'' তথ্য সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা।