News update
  • OIC Condemns Ecuador’s Opening of a Diplomatic Office in Al-Quds     |     
  • No escape, death follows families in Gaza wherever they go     |     
  • Armed forces' magistracy powers extended by 60 days     |     
  • Hamid's departure: Body formed, Kishoreganj SP withdrawn     |     
  • The Taliban Took Everything – Even My Hope     |     

৯৩ তম বছরে জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মতামত 2021-11-24, 1:22pm

madrasa-ed275cc8fb1872352051fcb5fd1e20e71637738520.jpg

Madrasa



মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

অধিকার বঞ্চিত লক্ষ লক্ষ মাদরাসা ছাত্রদের একক প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া হাঁটি-হাঁটি পা পা করে বিভিন্ন চঁড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে আজ প্রায় ১০০ বছরের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটি মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করে আসছে।

বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম মাদরাসা ছাত্রদের একক প্রতিনিধিত্বশীল ঐতিহ্যবাহী বিপ্লবী যুব কাফেলা। এই যুব কাফেলাটি এমন একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন যা মাদরাসা ছাত্রদেরকে প্রকৃত যোগ্য ওয়ারেসে নবী হিসেবে গড়ে তোলার একটি প্রতিষ্ঠান। মাদরাসা শিক্ষার দ্বীনি পরিবেশ ও রূহানী (আধ্যাত্মিক) চরিত্র রক্ষা ও ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য মাদরাসা ছাত্ররা সুদূর অতীত থেকেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। তাদের এ আন্দোলনকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সুসংগঠিত করা এবং একটি এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম বিপ্লবী সংগঠন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ১৯২৯ সালে এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে কলিকাতার মুসলিম হলে সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম লাভ করে। ফুরফুরার পীর সাহেব কেবলা হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক (রহ.)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় এ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মাওলানা আকরাম খাঁ ও সুসাহিত্যিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। সেদিন থেকে জমিয়তে তালাবার নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্রদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফলেই মাদরাসা শিক্ষা বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার সমান্তরালে জাতীয় শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। মাদরাসা ছাত্ররা আজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।

শায়ত্বশাসিত মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, দাখিল-আলিমের মান, ফাযিল-কামিলের মান, মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল আজকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা। মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্য রক্ষা, মর্যাদা উন্নতকরণ ও সর্বোচ্চ ইসলামী শিক্ষার স্বতন্ত্র পরিবেশ গড়ার উদ্দেশ্যে একটি এফিলিয়েটিং ক্ষমতা সম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার জন্মলগ্ন থেকে। তারই প্রেক্ষিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৮৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া এবং ২০১৩ সালে ঢাকায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা হয়েছিল তা আজও বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বা নামফলকে ইসলাম কথাটা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে ইসলাম সুদূর পরাহত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় শুধুমাত্র থিওলজী ফেকাল্টির কয়েকটি বিভাগ বাদ দিলে শিক্ষাকাঠামো, পরিবেশ পুরোটাই একটি স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, কেবলমাত্র আলিয়া মাদরাসাগুলোর ফাযিল-কামিল ও অনার্স কোর্সগুলোর পরীক্ষা কার্যক্রম ও সার্টিফিকেট প্রদান ছাড়া ইসলামী পরিচয় দিতেও যেন লজ্জাবোধ করে। উপরন্তু ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম মাদরাসায় অনার্স কোর্সগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ মান বজায় রাখার জন্য যে শিক্ষক ও অবকাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়েও তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের সমান যোগ্যতা অর্জন করা সত্বেও আজকে তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে বিমাতা সুলভ আচরণ করা হচ্ছে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ঔপনিবেসিক প্রভাব বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে খোঁড়া অজুহাতে বাংলা-ইংরেজী বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ যারা এ বিভাগ দুটি সহ অন্যান্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিল তারা অপেক্ষাকৃত জেনারেল ছাত্রদের চেয়ে রেজাল্ট ভাল করেছে, এমনকি ফাসর্ট ক্লাস ফার্স্ট হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে দূর্নীতি ও অনৈসলামী কর্মকান্ড বজায় রাখার জন্য অন্যান্য আধুনিক বিভাগে অনার্স পড়তেও মাদরাসা ছাত্রদের প্রতি বেরিকেড সৃষ্টি করা হচ্ছে। অপরদিকে মাদরাসার সিলেবাসে ধর্মীয় বিষয়ের সংকোচন করে সাধারণ শিক্ষায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে। যাতে করে মাদরাসা ছাত্রদের মাঝ থেকে ঈমান-আকীদা ও নৈতিক চরিত্র ধ্বংসত করা যায়। উপজেলা-এমনকি গ্রাম পর্যায়ে সরকারী স্কুল-কলেজ থাকলেও সারাদেশে তিনটি বাদে সরকারী কোনো মাদরাসা নেই। স্কুল-কলেজের তুলনায় মাদরাসাসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বরাদ্ধও খুবই সামান্য। উপরন্তু নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষা আজকে স্বতন্ত্র অস্তিত্বই হারাতে বসেছে।

অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষার ফাদার প্রতিষ্ঠান ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলো বিশেষত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলো জাতীয়করণ না করার মাধ্যমে মাদরাসাগুলোকে ছাত্রশুন্য করে দেয়া হচ্ছে এবং এগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। দেশে হাজার হাজর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে; যার অধিকাংশই সরকারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ১০০% বৃত্তি ও টিফিনসহ নানান ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে ইবতেদায়ী মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার এবং সরকারী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি শিক্ষকরাও বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। যা মাদরাসা শিক্ষাকে পঙ্গু করার অন্যতম একটি কৌশল। এমতাবস্থায় দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র-শিক্ষক, সর্বোপরি সর্বস্তরের তৌহিদি জনতাকে সাথে নিয়ে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও ইসলামী শিক্ষা রক্ষা তথা মাদরাসা শিক্ষাকে রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাসমূহ জাতীয়করণ করার দাবীতে মাদরাসা ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া