News update
  • UN Warns Nearly 900 m Poor Face Climate Peril     |     
  • Global Finance Leaders Eye Gaza’s $70b Reconstruction Plan     |     
  • Over 1 million tickets sold for 2026 World Cup in North America: FIFA     |     
  • Daily struggles persist in Gaza even as ceasefire offers some respite     |     

নবজাগরণের খোয়াব ওরফে ভদ্রবিত্ত হিন্দুর ইসলামোফোবিয়ার শুরুয়াত

মতামত 2024-06-25, 9:08pm

bangalir-itihas-adipoabo-f7f264147f92446a36ecda74c222b9171719328136.jpg

Bangalir Itihas, Adipoabo. Nihar Ranjan Roy



— Debottom Chakrabarty

আমরা সবাই জানি যে এই নবজাগরণের উৎপত্তি ইতালিতে। সেই ইতালির 'করোনা' নামক নবজাগরণের বীজকে 'করলা' নাম দিয়ে পোঁতা হয় বাংলার মাটিতে। ফল যা হওয়ার কথা ছিল, তাই হয়। এই আধা-সামন্ত্রতান্ত্রিক, আধা-ঔপনিবেশিক দেশে সেটি আধখ্যাঁচড়া কাকজ্যোৎস্না বই অন্য কিছু হওয়ার কথাও ছিল না, হয়ওনি।

কিন্তু সেটি করতে গিয়ে ভদ্রবিত্ত উচ্চবর্ণ হিন্দুরা যে কুকাজটি করেন, সেটা মারাত্মক। প্রথমেই ইতিহাস ও সাহিত্যের ন্যাতা মেরে একটি কৃত্রিম কালপর্ব ঘোষিত হয় - আদিযুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ। এই ফর্মুলায় মধ্যযুগকে 'অন্ধকারাচ্ছন্ন' হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া থেকেই ভদ্রবিত্ত হিন্দুর ইসলামোফোবিয়ার সূত্রপাত।

ইতিমধ্যে উইলিয়াম জোনস তাঁর কারখানায় আবিষ্কার করে ফেলেছেন সেই যুগান্তকারী তত্ত্ব - প্রাচীন ভারতীয় আর্য এবং পাশ্চাত্য উন্নত দেশের লোকজন একই গোষ্ঠীভুক্ত, মানে একেবারে ভাই-বেরাদরের সম্পর্ক। এইবারে ভারতীয় হিন্দু উচ্চবর্ণের প্রতিভুদের জিভ দিয়ে লালা গড়ানো শুরু হয়। পাশাপাশি শুরু হয় ইতিহাসের নির্মাণ।

সেই ইতিহাসে প্রাচীন যুগের অন্তর্ভুক্ত হয় বৈদিক সভ্যতা, গুপ্ত সাম্রাজ্য, মৌর্য সাম্রাজ্যের জয়গাথা। খেয়াল করলে দেখা যাবে এই ইতিহাসে সুচতুরভাবে উপেক্ষিত দক্ষিণ ভারতের চোল, চালুক্য কিংবা হোয়সালার কাহিনি। এর পরেই আসে সেই বহুনিন্দিত 'অন্ধকারাচ্ছন্ন' মধ্যযুগের প্রায় ৫৫০ বছরের ইতিহাস। আর এই অন্ধকার কেটে আলোর রেখা নিয়ে হাজির হয় আধুনিক ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের ইতিহাস। চমৎকার বিন্যাস! ইংরেজ প্রভুদের অনুসরণ করে এই ইতিহাস রচনায় এগিয়ে আসেন পেটোয়া ইতিহাসবিদরা। স্যার যদুনাথ সরকার খোলাখুলিই লেখেন --- The greatest gift of the English… is the Renaissance which marked our 19th Century. Modern India owes everything to it. [১]

একই নির্মাণ প্রক্রিয়া চালু হয় বাংলা সাহিত্যকে নিয়েও। সেখানে আদিযুগের (যা বলতে গেলে ছিলই না) প্রতিভু হিসেবে হাজির করা হয় চর্যাপদকে। এটা খুব জরুরি নির্মাণ। কারণ আদিযুগ না থাকলে মধ্যযুগ থাকে কেমন করে! তারপরে ওই 'অন্ধকারাচ্ছন্ন' নিষ্ফলা মধ্যযুগ। অথচ ওই সময়েই সৃষ্ট হয়েছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীদাসী মহাভারত, একাধিক চৈতন্যজীবনীকাব্য, একাধিক মঙ্গলকাব্য, রামপ্রসাদ-কমলাকান্তের শ্যামাঙ্গীত, আউল-বাউল-ভাটিয়ালি-দরবেশ। এর পরে আসেন 'বাংলার স্কট', 'বাংলার মিলটন', 'বাংলার শেলি' ইত্যাদি বিচিত্র বিশেষণে ভূষিত কবি-কথাকাররা।

একই ভাবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বসে সাহেবদের প্রত্যক্ষ মদতে দিশি মোসাহেবরা শুরু করেন বাংলা শব্দভাণ্ডার থেকে নিপুণ হস্তে আরবি-ফারসি শব্দ ছাঁটাই করার জঘন্য প্রক্রিয়া। মুখের ভাষাকে সম্পূর্ণ বর্জন করে নির্মিত হয় 'সাধুভাষা' অর্থাৎ সাধুজনদের জন্য সাধুজনদের দ্বারা সাধুজনদের ব্যবহার্য ভাষা। আর তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয় দুর্বোধ্য ব্যাকরণের নিগড়ে।

এই সাধুভাষার পক্ষে ওকালতি করে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ‘বঙ্গাভিধান’-এর ভূমিকায় লেখেন, “বিবেচনা করিলে জানা যায় যে বঙ্গভাষাতে প্রায়ই সংস্কৃত শব্দের চলন যদ্যপি ইদানীং ওই সাধুভাষাতে অনেক ইতর ভাষার প্রবেশ হইয়াছে তথাপি বিজ্ঞ লোকেরা বিবেচনাপূর্বক কেবল সংস্কৃতানুযায়ী ভাষা লিখিতে ও তদ্দ্বারা কথোপকথন করিতে চেষ্টা করিলে নির্বাহ করিতে পারেন। এই প্রকার লিখন পঠন ধারা অনেক প্রধান প্রধান স্থানে আছে। এবং ইহাও উচিত হয় যে সাধুভাষা দ্বারাই সাধুতা প্রকাশ করেন অসাধুভাষা ব্যবহার করিয়া অসাধুর ন্যায় হাস্যাস্পদ না হয়েন"। [২]

এই ইতিহাস থেকে এ কথা আশা করি পরিষ্কার হবে যে শিক্ষাক্ষেত্রে এই সাধুভাষার ব্যাপক প্রচলনের ফলে যেমন 'ইতর' মুসলমানরা বঞ্চিত ও ব্রাত্য হবেন; ঠিক একই ভাবে এই শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চবর্ণের ও উচ্চবিত্ত হিন্দু ছাড়া অন্য কারও ঠাঁই মেলা নামুমকিন হবে।

বাস্তবে ঘটেও তাই। যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন ও তার ফল নিয়ে নবজাগরণপন্থীদের এত ঢক্কানিনাদ, তথ্য খুঁজলে দেখা যাচ্ছে ১৮৮৩-৮৪ সালে, অর্থাৎ রামমোহনের মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরেও, বাংলাদেশের কলেজসমূহে মোট ছাত্রসংখ্যার ৯৫% হিন্দু এবং এই হিন্দু ছাত্রদের ৮৫% উচ্চবর্ণের। [৩]

হায় রে নবজাগরণের কুহকিনী আশা!

তথ্যসূত্র:

১. শিবনারায়ণ রায় (সম্পাদিত) - বাংলার রেনেসাঁস

২. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় - জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, মদনমোহন তর্কালঙ্কার

৩. Anil Seal - The Emergence of Indian Nationalism

Sent by Kazi Azizul Huq