News update
  • Rail link with Khulna cut off as train derails in Chuadanga     |     
  • 3 killed, 10 injured in Pabna Bus-truck collision     |     
  • UN Chief Appalled as Gaza Crisis Deepens, Aid Blocked     |     
  • Dhaka’s air quality ‘moderate’ also on Friday morning     |     
  • Russia 1st country to recognize Taliban rule in Afghanistan     |     

অরাষ্ট্রিক সংগঠন ও সামাজিক গোষ্ঠীও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে

মতামত 2021-06-27, 12:10pm

Bilia Seminar-165acac9d1b09eb35d81d26bfc9958dd1624774231.jpg

Bilia seminar



কেবল রাষ্ট্রই নয়, বিভিন্ন অরাষ্ট্রিক (নন-স্টেট অ্যাক্টরস : স্থানীয়-আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী (নট-স্টেট অ্যাক্টরস : উদাহারণস্বরূপ হতে স্থানীয় মসজিদ বা উপসনালয়ের সভাপতি বা কমিটি, প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য, ধর্মীয় নেতা, উগ্র-রক্ষণশীল গোষ্ঠী) বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করছে। বর্তমানে ভিন্ন ধর্ম তো বটেই, নিজের আচরিত ধর্ম নিয়েও কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। “আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং প্রত্যাশিত সামাজিক আচার-আচরণের নামেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এরা উদাহরণ স্বরুপ, শালীনতা’র নামে নারী অধিকারের উপর ভয়াবহ হস্তক্ষেপ করছে, তারা প্রথমে নমনীয় প্রচারের কৌশল নিলেও, এক পর্যায়ে এসে “ভেড়ার চেহারায় নেকড়ে হয়ে” হাজির হয়। হেডমাস্টার, স্কুল কমিটি সভাপতি, স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা, কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের হেয়ার স্টাইলের জন্য শাস্তি দিচ্ছেন। এই ধরনের আরোপিত সামাজিক সমন্বয়ের চেষ্টা (সোশ্যাল টিউনিং)’ ‘নৈতিক পুলিশিং’ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চেতনার ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত “বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জে” শীর্ষক আনলাইন বক্তৃতা প্রদানকালে এসব মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। এটি ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিলিয়া আয়োজিত বক্তৃতামালার চতুর্থ বক্তৃতা। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতিমনজুরুল আহসান বুলবুল। স্বাগত বক্তৃতা ও সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে বিলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও বিলিয়ার চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম।
মূল বক্তৃতায় অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ইতিহাসে ‘সকলের জন্য’মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু ছিল না। মতপ্রকাশের অধিকার কেবল ক্ষমতাসীন অভিজাতদের জন্য একচেটিয়াভাবে সংরক্ষিত ছিল। ইউরোপে রেনেসাঁ, মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার এবং পরবর্তীকালে আমেরিকান স্বাধীনতা, ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে ‘সকলের জন্য মতপ্রকাশের অধিকারে’র ধারণা সামনে আসে এবং ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ-এর মাধ্যমে তা সাধারণ স্বীকৃতিলাভ করে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সনদসমূহে বিধৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংজ্ঞায় আলোচনা কেবল নাগরিকের অধিকার ও রাষ্ট্র কর্তৃক লঙ্ঘনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিস্থিতির যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরণের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। সরকার দাবি করছে, জনগণের ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং তরুণরা যাতে বিপথে না যেতে পারে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত  না হয় তার জন্য এরকম আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তাতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা কমছে না। সরকারের উচিত সেই ভয় তাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং এটা মাথায় রাখা যে, কোনো আইনের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা মানেই সেই আইনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা নয়। আর বাংলাদেশে ধমকের সংস্কৃতি রাজনীতি ছাড়িয়ে সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও বিস্তৃতি লাভ করেছে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করতে গিয়ে আমরা অরাষ্ট্রিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃপক্ষসমূহকে দায়মুক্তি দিচ্ছি। ‘ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন’কে আমরা অনুবাদ করি ‘ধর্ম পালনের স্বাধীনতা’ অথচ তা হওয়া উচিত ‘ধর্ম-সংক্রান্ত, পালন বা পালন না করা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে স্বাধীনতা’। তবে আশা জাগানিয়া ব্যাপার হলো ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসার, সামাজিক মাধ্যমের নেটিজেনদের কার্যকলাপ, সামাজিক পরিসরে ক্রমশ দৃশ্যমান বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। যদিও আমরা দেখি সামাজিক মাধ্যমে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, তৃতীয় লিঙ্গ অধিকার ও নাস্তিকতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সতর্কতা দেখা যায়।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য প্রতিবাদ জরুরি, তবে প্রতিবাদের প্রথাগত ভাষা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, নতুন ভাষা উদ্ভাবনেরপ্রয়োজন রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ প্রয়োজন, অরাষ্ট্রিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃকপক্ষগুলোকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দল বা শাসনামল-নিরপেক্ষ (রেজিম-নিউট্রাল) আলোচনা।
পিআইবি-এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, পাকিস্তানে সমাজতন্ত্রের কথা বললে জেলে নেওয়া হত, ছয় দফা ঘোষণার পর প্রতিটি সমাবেশের পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হত। আমরা স্বাধীনতার পর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও মতপ্রকাশের স্বীধনতার কথা বলেছি। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু নিজে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন, কিন্তু তার দল আওয়ামী লীগ জনগণের সামনে তা সটিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে চারটি জাতীয় সংবাদপত্র চালু রাখার পরামর্শ তোয়াব খান প্রমুখ সিনিয়র সাংবাদিকরাই দিয়েছিলেন। এরশাদের সময় ‘হরতাল’ শব্দটি উচ্চারণ করা যেতো না, সংবাদপত্রে আমরা লিখতাম ‘কর্মসূচি’, ‘দুর্ভিক্ষে’র পরিবর্তে লিখতে হতো ‘ভিক্ষার অভাব’। তবে স্বাধীনতা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা নিয়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত জাতীয় স্বার্থে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিডম হাউজের সূচকে বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছর ধরে ‘পার্শিয়ালি ফ্রি কান্ট্রি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এর কারণ এই নট-স্টেট অ্যাক্টও বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আইনপ্রণেতা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমলা ও সাংসদদের তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বেগ পেতে হয়েছে। আমাদের অনেক বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি হয়নিÑসম্প্রচার নীতিমালা থাকলেও সম্প্রচার আইন নেই। - সংবাদ বিজ্ঞপ্তি