Nazrul Islam
নজরুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) গ্রামগঞ্জে আজকাল ফকির দেখা যায় না; ঢাকা শহরে সর্বত্রই ফকির নজরে পড়ে এবং লোকজন দানখয়রাত আগের তুলনায় বেশি করে বলে ফকির গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে ভিড় জমিয়েছে। প্রতি কয়েক মিনিটে একজন বা দুইজন ফকির এসে দোকানের সামনে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়।
বাংলাদেশে তো সব সময় গরিব ফকির ছিল বা এখনোও আছে; এই সুদূর কানাডাতেও ফকির দেখা যায়; বড়ো বড়ো রাস্তাগুলির মোড়ে, শপিং মলের গেটে, রেল স্টেশনে ঢুকতে এদের নজরে পড়ে; আমাদের দেশের ফকিরের সঙ্গে এদের পার্থক্য রয়েছে। এ দেশে ফকির (low income person) সরকার থেকে সোশ্যাল ভাতা পায়, তারপরেও ভিক্ষা করে মদ, নেশা এবং সিগারেট কিনে। এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজগার করে
যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে থাকে, অনেকের সঙ্গে নিজস্ব কুকুরও থাকে।
ঢাকা শহরে রাতে শাহ আলী মাজার সংলগ্ন মাঠ ও সড়কে ঢালাও বিছানা করে লোকজন ঘুমায়। মাজারের সামনে মাঠে এবং সড়কের ফুটপাথে একজাতীয় লোক বালিশ ও কম্বল রাতের জন্য ৬০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে থাকে। যারা কম্বল-বালিশ ভাড়া নিয়ে থাকে, ওরা সারা দিন কাজ করে বা কোনো কাজে ঢাকা শহরে এসে রেস্টুরেন্টে খেয়ে ফুটপাথে ঘুমিয়ে পড়ে। মাজারের মাঠে রাতে কোনো খালি জায়গা দেখা যায় না; সবাই যার যা
কিছু আছে মাথায় দিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
অসংখ্য মহিলাও খোলা মাঠে ঘুমায়; এক ভোরে দুটো ছোট্ট উলঙ্গ বাচ্চা তাদের মায়ের সঙ্গে নজরে পড়লো; বাচ্চা দুটো চিৎকার করে কাঁদছে, মহিলা জোরে থাপ্পড় মেরে কি যেন বলছে; ওদের এই অবস্থায় কান্না দেখে পকেটে হাত দিয়ে যা পেলাম, বাচ্চাদের হাতে দিয়ে সরে পড়লাম। প্রায় প্রতিদিন আমি এই দৃশ্য দেখার জন্য মাজারের মাঠে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতাম। এ সব অসহায় মানুষের পরিবর্তন কবে হবে? মাজারে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা ঢুকার ব্যবস্থা রয়েছে; এখানে পায়খানা -প্রস্রাবের বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় রাতে লোকজনেরা মাঠে বা সড়কের পায়ে চলার পথে ঘুমায়। তবে বৃষ্টি হলে ওদের বিশেষ অসুবিধা হয়। কে কার খবর রাখে ? বৃহস্পতিবার সারা রাত এখানে লোকজনের ভিড় এবং মাজার জেয়ারত করে।
মাজার সংলগ্ন বালুর মাঠ এরিয়াতে অনেক বিল্ডিং উঠছে; সারা রাত কাজ হয়, পাশে অনেক বস্তি; রিক্সাওয়ালা, কাজের বুয়া বা অন্য পেশার লোক অধিকাংশই পরিবার নিয়ে বস্তিতে ভাড়া করে থাকে। অনেক পরিবার ৫-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকে। কেউ কেউ নিজের পরিবার মা-বাবা বা শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে থাকে।
ভোরে এই মাজার সড়কে কিছু মহিলাকে দেখেছি ছোট্ট টুলে বসে লোকদের মাথায় পানি দেয় এবং মনে মনে কি বলে? তার পাশে একটা পাত্রে চুন, পানি ও বোতলে ভেষজ ঔষধ। জিজ্ঞেস করতেই বলে জন্ডিসের চিকিৎসা করি; আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম, এতে কি রোগ ভালো হয়? বলে, ইনশাল্লাহ ভালো হয়।
বুঝলাম বনাজী ঔষধে হয়তো কাজ করে; নতুবা রোগী কেন আসবে?
রাস্তার দুই পাশে ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট; ভোর হতেই ভিড় জমে নাস্তা খাবার জন্য। অনেকে রুটি, হালুয়া, ভাজি নিয়ে বাসায় বা কাজে যায়।
এই মহল্লার বস্তিগুলিতে অনেক রিক্সার গেরেজ আছে : ভোর হলেই রাস্তায় রিক্সার ভিড়, ১০ মিনিট হাঁটার রাস্তা ৩০ টাকা ভাড়া, তার কমে কোনো রিক্সা পাওয়া যায় না। একটা রিক্সাওয়ালা দৈনিক ৫০০-৭০০ টাকা রোজগার করে; মালিককে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে বাসায় যায় এবং তার স্ত্রী বা ছেলেমেয়েরাও বিভিন্ন বাসায় কাজ করে দৈনিক খাওয়া এবং মাসিক কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে। যত রিক্সাওয়ালা, জিজ্ঞেস করলে বলে বাড়ি ময়মনসিং,খুলনা, রাজশাহী বা অন্যান্য জেলায়। খেয়েদেয়ে ভালো
আছে এবং কিছু বাড়িতে ও দিতে পারে।
পপি নামে ২৫-২৬ বৎসর বয়সী সদালাপী, এক মহিলা মিরপুর আমার আত্মীয়ের বাসায় বুয়া হিসাবে কাজ করে; আমাদের সে যুগে কোনো কাজের ছেলে বা বুয়াকে বাড়ির মালিকের বা বাসার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলা থাক, ভয়ে ধারে কাছে ও ভিড়তে দেখি নি। কিন্তু আজকাল যুগের পরিবর্তনে সব কিছু পাল্টিয়েছে; ও হাঁসতে হাঁসতে ঘরে ঢুকে, মনে হয় এই পরিবারের একজন। আলাপ প্রসঙ্গে জানা যায় যে সে মিরপুর
মাজারের নিকট বালুর মাঠে চারিদিকে ওয়াল দেয়া ছোট ছোট দুই কামরা বাসায় মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় থাকে। কথাপ্রসঙ্গে জানা যায় সে স্কুল থেকে SSC পাশ করেছে, স্বামী HSC পাশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তার মধ্যে কোনো রকম দ্বিধা সংকোচ দেখি নি। আমাকে হাঁসতে হাঁসতে বলে খালুজান, আমাদেরকে কানাডায় নিয়ে যান; আমি বলি, সম্ভব হলে চেষ্টা করতাম। তার জীবনের করুন ইতিহাস জানার সুযোগ হলো: ছোট বয়সে তার মা মারা গেলে বাবা আর একটি বিয়ে করে; সে তার নানী বাড়িতে মানুষ হয়েছে এবং ওরাই পড়াশুনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছে।
মিরপুর মাজারের সামনের গলিতেই বিশাল পাখির বাজার; এখানে দেশি ও বিদেশী বহু ধরণের পাখি পাওয়া যায়।
পাখির বাজারে “পাখি লাভারদের ” অবস্থা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বিক্রেতাদের অধিকাংশই যুবক ছেলে, যারা ব্যাবসায়ীদের নিকট থেকে পাখি খরিদ করে খুচরা বিক্রি করে। আমি একটা কবুতরের দাম জিজ্ঞেস করেছিলাম; বিক্রেতা ৩ হাজার টাকা চেয়েছিলো, কথাপ্রসঙ্গে সে বলেছিলো যে একটা বিশেষ ধরণের পাখি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খাঁচায় রাখা বেশির ভাগই বিদেশী পাখি, আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এগুলি স্বাচ্ছন্দে পোষা যায় বলে বিক্রেতারা বলেছিলো। অনেক যুবক ছেলেরা পাখি পোষে লাভবান হচ্ছে এবং বেকারত্ব দূর করছে। পাখির বাজারে বেশ ভিড় এবং কানাডাতে যে সব পাখি বাজারে দেখা যায়, তার অধিকাংশই এই বাজারে দেখতে পেয়েছি।
আমাদের গ্রামগঞ্জে সে যুগে প্রায় সবার বাড়িতেই গরু, ছাগল, হাঁসমুরগী ও কবুতর পুষতে দেখা যেত। এ ভাবে ফার্ম খুলে পাখির ব্যবসা আগে দেখি নি। এ জাতীয় নুতন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আমাদের ছেলেদের মধ্যে থাকা উচিৎ এবং প্রশংসার যোগ্য। সে যুগে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে চাকুরীর পিছনে দৌড়াতো; আজকাল চাকুরীর বাজার সোনার হরিনের মতো, খুঁজে পাওয়া যায় না, বা পাওয়া গেলে ও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ঢাকা শহরে অনেকগুলি বাজারে এই বিদেশী পাখি পাওয়া যায়; ওখানে কেউ কেউ বলতে শুনেছি, ঢাকা ব্যাতিত অন্যান্য শহরে ও আজকাল দেশি বিদেশী পোষা পাখির ব্যবসা রয়েছে। আজকাল যুবক ছেলেরা বসে না থেকে বিভিন্ন ব্যবসায় নিজেদের মনোনিবেশ করছে।
এই অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় এক মুদি দোকানদারের সঙ্গে সখ্যতা হলো। সে অনেকদিন সৌদি আরব থেকে কাজ করে ফেরত এসে একটা এপার্টমেন্ট কিনেছে। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। সাধারণতঃ যারা সৌদি আরব থাকে, তারা ধার্মিক হয় ; কিন্তু ওর বেলায় একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম। সে শাহ আলী মাজার ভক্ত এবং প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে মাজারে যায় ; ধর্ম সম্পর্কে ওর ভালো জ্ঞান আছে,তবে মাজার পন্থী। প্রতিদিন ওর দোকানের সামনে গেলে বলে, মামা, বসেন আলাপ করি, আপনার জন্য চা নিয়ে আসি।
আমি বলি দুঃখিত, আমি বাইরে চা খাই না। পাশেই আমার আত্মীয়ের দোকান, ওর ওখানে গিয়ে খানিক বসি এবং লোকজনের অবস্থা অনুধাবন করি। একটা cone-icecream হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে দাদা খান, না করলে শুনবে না; সকাল হলে লোকজন স্রোতের মতো কাজে বের হয় এবং সন্ধ্যার দিকে ঘরে ফেরত আসে; সবার হাতে বাজার ভর্তি ব্যাগ।
যে কয়েকদিন ঢাকা ছিলাম, প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকাল মিরপুর শাহ আলী মাজারের সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতাম। অনেক সময় দাঁড়িয়ে দেখতাম মাজারে ভক্তদের ভিড়। বিশাল আকারের এক ডেকচি; সেখানে নিয়মিত টাকা জমা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে উঁকি মেরে দেখতাম ভক্তরা কি পরিমাণ টাকা দিচ্ছে। মাজারের দুটি গেট, একটি দক্ষিণ ও আর একটি পূর্ব দিকে- সঙ্গেই রয়েছে পুলিশ সিকিউরিটি পোস্ট।
গ্রামে এক ধরণের লোক আমাদের ছেলেপেলেদের রাজনীতির দিকে টেনে এনে বিভ্রান্ত করছে বলে অনেকের ধারণা। এ সব ছেলেপেলেরা দেশে গ্রামে থেকে পরিবেশ নষ্ট করে ও উপজেলার টেন্ডারবাজির পেছনে দৌড়ায়। এতে সরকারি কাজ টেন্ডারবাজির জন্য ব্যাহত হচ্ছে। এদের জন্য গ্রামের নিরীহ মানুষ অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এদের সাথে গ্রামের সহজ সরল মানুষ মুখ খুলে কথা বলতে সাহস পায় না। গ্রামে অহরহ জমিজমা নিয়ে ঝগড়াঝাটি থেকে শুরু করে মারামারি এবং মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত হয়।
এ সব সমস্যা থেকে ফিরে আসতে হলে, উপজেলায় বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ চালু করে বেকার ছেলেদের কাজে ব্যস্ত রাখা দরকার। স্থানীয় প্রশাসন গ্রামে গ্রামে কর্মহীন ছেলে / মেয়েদের চিহ্নিত করে যত্ন সহকারে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে; প্রতিটি ছেলে বা মেয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে, নিজেদের মেধা কাজে লাগাতে পারে।
তবে একটা জিনিস লক্ষণীয় : মেয়েদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন হয় নি। ছেলে এবং মেয়েকে আমাদের সমাজে এখনও ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। মেয়েকে মা-বাবা মাথার বোঝা হিসাবে দেখে ; মেয়ে পড়াশুনা করলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে, বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়ি যাবে এবং চার দেয়ালের মধ্যে থেকে বাচ্চা লালন, এই মনোভাব পোষণ করে। পশ্চিমা দেশগুলিতে কি মেয়ে বা কি ছেলে, সবাইকে শিক্ষা নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক, এই মনভাব মাবাবা এবং সরকারের রয়েছে। মেয়ে কলেজে পড়ে, ১৮-১৯ বয়স, মা-বাবা
বিয়ের জন্য অস্থির। বললাম ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, আপনার দায়িত্ব সমান ভাবে দেখা এবং পড়াশুনা করানো। আমার কথায় সন্তুষ্ট না; সমাজকে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ২১-২২ বৎসরের এক মেয়ে আমাকে বলছিলো; জেঠাজি, আমি পড়াশুনায় ভালো ছাত্রী ছিলাম, মা-বাবা আমাকে পড়াশুনা করতে দেয় নি।
সে যুগে শহরে কিছু সংখক ছেলে বাসায় বাসায় গিয়ে ছেলেমেয়ে পড়িয়ে পয়সা রোজগার করতো; ছাত্র/ছাত্রীরা আজকাল পড়াশুনার পাশে পাশে নিজেদের চলার জন্য যে কোনো ধরণের কাজ করে পড়াশুনার খরচ এবং পরিবারকে সাহায্য করে। কলেজ বা ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা দোকানে, রেস্টুরেন্টে, ট্যাক্সি বা রিক্সা চালিয়ে অথবা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে পয়সা রোজগার করে। পড়াশুনার পাশে পাশে ওরা ভবিষ্যতে কি করবে এ সব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। এদের অনেকেই কিভাবে ইউরোপ, আমেরিকা,কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া অথবা মিডল ইস্ট দেশ গুলিতে গিয়ে কাজ করে দেশে সাবলম্বী হবে সে সব চিন্তা করে।
আজকাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগ- এরা সদাসর্বদা বিদেশে আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
দেশের প্রায় দুই কোটির মতো লোক বিদেশে কাজ করে দেশে টাকাপয়সা পাঠায় ; এটা সত্যিই দেশের জন্য, তথা জাতির জন্য সুখবর। প্রতিটি গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই ; দুই/চার জন বিদেশে নেই। কেউ আজকাল জিজ্ঞেস করে না, কি কাজ করে?
গ্রামে বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিলে দেখা যায় ঘরে ঘরে মহিলারা একাকী জীবনে অভ্যস্ত; মহিলারা ছেলেমেয়ে বা দাদা/দাদীরা নাতিনাতনি নিয়ে ব্যস্ত; স্বামীরা যতদূরেই থাকুক না কেন, দৈনিক অন্ততঃ একবার মোবাইলে কথা হয়,“তুমি কেমন আছো? কবে আসবে?” এই পথ চাওয়া তো আর শেষ হয় না। এভাবেই কষ্ট করে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠায়। যে সব লোক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে থাকে, তাদের প্রায় সবাই দেড় থেকে দুই
বৎসর পর এক বা দুই মাসের জন্য দেশে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হয়; এ ভাবে অনেকে ২৫-৩০ বৎসরও বিদেশে জীবন /যৌবন কাটিয়ে দেশে আসে।
আমার এক পরিচিত ব্যক্তি, ৪২ বৎসর সৌদি আরব থেকে পয়সা কামাই করে দেশে বাড়ি ও জমিজমা করেছেন; যতবার মক্কায় ওমরাও করতে গিয়েছি, দেখা হয়েছে। একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “তোমরা কানাডার পাসপোর্ট নিয়ে যখন তখন ঘুরতে আসো।” আমি ৪২ বৎসর সৌদি আরব থাকি; দেশে যেতে চাইলে বৈধ কাগজ বানানোর জন্য পয়সা খরচ করে তবেই দেশে যাই। কি যে কষ্ট?
আমাদের সে যুগে ভোর হলে, ফার্মগেট, নিউমার্কেট বা এখানে/সেখানে দেখতাম গরিব অশিক্ষিত দিনমজুর ওড়া/কোদাল নিয়ে কাজের জন্য অপেক্ষা করে। আজকাল আমাদের শিক্ষিত দামাল ছেলেরা ভোর হতেই বাংলাদেশ তথা বিশ্বের উন্নত দেশ গুলিতে কাজের খোঁজে বের হয়। ইতালি,অস্ট্রিয়া,পর্তুগাল, জার্মানি বা অন্যান্য দেশে রেস্টুরেন্ট, কৃষি এমন কি যে যা পায় তাই করে দেশে টাকা পাঠায়। আজকাল কেউ জিজ্ঞেস
করে না ,“তুমি বা তোমরা বিদেশে কি কাজ করো ?”
আমার আজও মনে পড়ে ১৯৭৭ কি ১৯৭৮ এর দিকে আমার এক পরিচিত, লন্ডন থেকে ঢাকা এসেছেন। লন্ডন পড়াশুনা শেষ করে,কাগজ তৈরী করতে একটু বেশি সময় লেগেছে। বিয়ে করবেন, মনস্থির করেছেন। আমি ওর বিয়ের পাত্রীর খোঁজ দিয়েছিলাম। পাত্রী মাস্টার ডিগ্রী, অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার, আমি তাঁর সঙ্গে গিয়েছি পাত্রী দেখার জন্য। পাত্রী দেখতে সুন্দরী এবং স্মার্ট, সরাসরি প্রশ্ন করছেন,“আপনি লন্ডন কি কাজ করেন?” উনিতো হতবাক, চুপ করে পাত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, পরে আমাকে বললেন,“আমি যে কাজ করি, ওকে বলা যাবে না, তাছাড়া ও পছন্দ করবে না।” আজকাল পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, দেশে ও আজকাল পড়াশুনা করে white – collar job পাওয়া যায় না।
আমি সচরাচর ঢাকা সদর ঘাট থেকে লঞ্চে আরাম করে নদী ও চারিদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে চাঁদপুর এক/দুই দিন আত্মীয় বাড়ি থেকে যাই; এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। বিরাট লঞ্চ, কেবিনে লাগেজ রেখে সামনে নদীর দৃশ্য দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। প্রায় প্রতিটি কেবিন লোকে ভর্তি, কেউ কেউ আমার মতো চেয়ার নিয়ে ব্যালকনিতে বসে অপরূপ দৃশ্য দেখছে। কতক্ষণ পর পর ছেলেরা এসে চা নাস্তা বা রাতের খাওয়া দিচ্ছে; আমি বাইরে কোনো কিছুই খাচ্ছি না, একটা ড্রিংক এবং বিস্কুট নিয়েছি, বাইরের দিকে
তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। যাত্রী ভর্তি লঞ্চ ও কার্গো মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করছে। এ আমার পরিচিত পথ, কতই না এ পথে আসা-যাওয়া করেছি।
১৯৬৮ সনে এক সন্ধ্যায় চাঁদপুর হয়ে ঢাকা যাবো; মতলব থেকে লঞ্চ মিস করছি; নদীবন্দরে ৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে। রাত ১০টার দিকে হুঁশিয়ারি সংকেত অমান্য করে একটা লঞ্চ যাবে দেখে অনেকের সঙ্গে আমিও সাহস করে লঞ্চে উঠে বসলাম। লঞ্চ ছেড়ে দিলো; কিছু সময়ের মধ্যেই বিপদ দেখা দিলো, মানুষের চিৎকার আর আল্লাহুআকবার ধ্বনি, সারেং লঞ্চ তীরে ভিড়ালো। আর কখনও নদী পথে এ জাতীয় উদ্যোগ নেই নি।
চাঁদপুর পৌঁছতে রাত ৮টা বেজে গেলো ; মতলব থেকে স্বপন মোবাইল ফোনে লঞ্চ টার্মিনালে আসবে বলে জানিয়েছে। লঞ্চ থেকে বের হয়ে দেখি ও টার্মিনালে অপেক্ষা করছে। রাতে আত্মীয় বাসায় থেকে পরদিন স্বপন সহ মতলব চলে গেলাম ; গ্রামের বাড়ি, খোলামেলা ভালো লাগছে। মতলব বাজার, ছেলে/মেয়েদের আলাদা স্কুল; ক্লাসে গিয়ে ছেলেমেয়েদের ঘুরে ঘুরে দেখছি, পুরানো স্মৃতি স্মরণ করছি; আশেপাশের গ্রাম গুলি যাওয়া আসার পথে বেশ ভালো লেগেছে। ১৯৭০ সনের দিকে আমি মতলব স্কুল ছেড়েছি; ও সময়কার কোনো শিক্ষকই আজ এর বেঁচে নেই। স্কুল গেটে দিয়ে ঢুকতেই সেই নামকরা হেডমাস্টার ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারী ও তাঁর স্ত্রীর কবর নজরে পড়লো। খানিক দাঁড়ালাম, শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছে, কবর জেয়ারত করে ভিতরে গেলাম। কিন্তু কাউকেই চিনি না; নিজের লেখা তিনটা বই নিয়ে অফিসে গিয়ে নিজের ঢোল নিজেই বাজালাম, পরিচয় দিলাম। অনেকে কুশল বিনিময় করলো এবং সেই পুরানো স্মৃতি নিয়ে আলোচনা হলো।
নিজের গ্রাম, সে যুগের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছি ; আমার যুগের লোকজনের অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন,বাকিদের সঙ্গে দেখা; গ্রামের মেঠো পথ আজ আর নেই, পরিবর্তে ইট বালির রাস্তা হয়েছে।
আজকাল আর কাঠ বা বাঁশের সেতু পার হওয়ার প্রয়োজন হয় না, যে কোনো বাড়িতে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়।
গ্রামে যেটুকু সময় থেকেছি ; ভালো লেগেছে।
গত ৪১ বৎসর রুটি রোজগারের নিমিত্তে আমার অতি প্রিয় “ছোট্টগ্রাম” এনায়েতপুর এর মায়া ছেড়ে বিদেশে রয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে বিদেশে থেকে কি পেয়েছি হিসাব মিলাতে গেলে দেখি অনেক কিছু হারিয়েছি।
এই ছোট্টোগ্রামে কিছু কিছু লোক যারা আমাদের অগ্রগামী এবং যাদের হাত ধরে আমরা এগিয়েছি, তাদের প্রায় সবাই এই দীর্ঘ সময়ে একে একে বিদায় নিয়েছেন। এদের- ই একজন জনাব: খোরশেদ আলম (এক্স –চেয়ারম্যান) গত ৭ই জুলাই এবং তাঁর স্ত্রী তিন দিন পর (১০ই জুলাই ২০২৪), দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। খোরশেদ আলম সাহেবের সঙ্গে ছিল ছোটকালে আমার অন্তরঙ্গতা। বয়সে অনেক বড়, দেশে গেলে হাসিমুখে খোঁজ খবর নিতেন। তিনি স্থানীয় উনিয়নের দুই টার্ম চেয়ারম্যান এবং একজন সমাজকর্মী হিসাবে কচুয়া উপজেলায় পরিচিত। তিনি ইউনিয়নের সড়ক ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। জন সেবামূলক কাজে যোগদানের পূর্বে তিনি কয়েক বৎসর “চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে” কর্মরত ছিলেন।
খোরশেদ আলম সাহেব আমাদের গ্রামের এক অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের একমাত্র ছেলে। বাবামায়ের অতি আদরের একমাত্র ছেলে, অঢেল সম্পত্তির মালিক, তাই স্কুল জীবনেই বিয়ে করিয়ে মা-বাবা পুত্রবধূ ঘরে তুলে নেন। অনেকেই স্কুল জীবনে বিয়ে করলে, বেশিদূর পড়াশুনায় এগুতে পারে না। কিন্তু ওনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, চাঁদপুর কলেজ থেকে গ্রাডুয়েশন করে চাকুরীতে যোগদান করেন। মা-বাবার শখ, উনি
চেয়ারম্যান ইলেকশন করে দেশের কাজ করবেন; তাই চাকুরী ছেড়ে ১৯৮০র দিকে উনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ইলেকশন করেন। সেবার আমি নিজেও ওনার সঙ্গে এলাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে পাশ করেছিলেন। আমি খোরশেদ আলম সাহেবকে একজন সামাজিক মানুষ হিসাবে ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি। হাসিখুশি মানুষ, সবাই ওনাকে ভালোবাসতেন। খোরশেদ আলম এবং স্ত্রী দুজনের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেধনা ও পরকালের শান্তি কামনা করি।
এনায়েতপুর একটি ছোট্টগ্রাম, সে যুগে এই গ্রামে ৭-৮ টি বাড়ি এবং লোকসংখ্যা ও কম ছিল। এই গ্রামটি ছিল আম, জাম, কাঁঠাল, খেজুর,তালসহ নানান জাতের গাছগাছালিতে ভর্তি। সন্ধ্যা হতেই গ্রামে ভুতুড়ে অন্ধকার নেমে আসতো। গ্রামের লোকজন সে যুগে রাতে চেরাগ, কুপি বা হারিকেন ব্যবহার করতো এবং রাতের খাবার খেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তো। সে যুগে মানুষের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা ছিল না। ভোর হতেই মসজিদ থেকে সু-মধুর আজানের ধ্বনি “আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম, ঘুম থেকে নামাজ ভালো” শুনা যেত। এ ছাড়া গোয়ালঘরে গরুর হাম্বা হাম্বা ডাক এবং পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মা-চাচীরা জেগে বলতেন “সকাল হয়েছে, ঘুম থেকে উঠো এবং হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়তে যাও।” সকালে চিড়ামুড়ি খেয়ে কাচারীতে চাচাতো ভাইবোনেরা মিলে জোরে জোরে আওয়াজ করে আরবি পড়ে ঘরে ফিরতাম। ওই যুগে
কারও বাড়িতে পানির কল ছিল না, সবাই পুকুরের পানি দিয়ে গোছল, রান্না ও খাওয়ায় ব্যবহার করতো।
প্রতিটি বাড়িতেই ছিল কয়েকটা পুকুর, এবং বাড়িগুলি ছোটছোট খাল দ্বারা আলাদা করা ছিল, বর্ষা হলে মনে হতো যেন এক একটি বাড়ি ছোট্ট এক একটি দ্বীপ। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বিরাট আন্দি (দীঘি) যার চারিদিকে বসত বাড়ি, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে হলে সাঁকু বা নৌকা ব্যবহার করা হতো।
এই গ্রামটি গ্রেটার কুমিল্লা এবং বর্তমান চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় অবস্থিত। চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি নিচু এলাকার মধ্যে একটি ; বৈশাখ- জৌষ্ঠ মাসে সর্বত্র পানি, ব্যাঙের ডাক এবং মাঠ ভর্তি সবুজ আর সবুজের খেলা। আমরা ছোটরা সে যুগে এই পানিতে ঝাপাঝাপি করে আনন্দ করতাম, বাড়ির কয়েকজন সমবয়সী চাচাতো ভাই মিলে পুকুরের এ পার থেকে ওপার সাঁতার কেটে আনন্দ করে চোখ লাল করে ঘরে আসলে মা- চাচীরা বকুনি দিতো। সুদিনে পুকুর বা খালে মাছ ধরে নিয়ে আসলে মা-চাচিরা খুশি হয়ে রান্না করতো। এ ছাড়া আরও কত কি স্মৃতি, এ নিয়ে পূর্বে লেখা হয়েছে।
বৃষ্টির রসিকতা:
রবিবার ১৪ই জুলাই, কানাডার স্কারবোরো (থমসন মেমোরিয়াল পার্ক) এ বৃহত্তর ফরিদপুর এসোসিয়েশনের বাৎসরিক বনভোজন হয়ে গেলো। পুরা থমসন পার্কের পিকনিক স্পটগুলি বিভিন্ন দেশের লোকে লোকারণ্য ছিল। সকাল এগারটা থেকেই সুন্দর সুন্দর সাজে ফরিদপুর এসোসিয়েশনের ছেলেমেয়ে ও লোকজন আসা শুরু করে। পরিচিত মুখদের মধ্যে ছিল ইমাম হোসাইন ভাই, ভাবি, মোস্তফা এবং ওর ছেলেমেয়ে যাদের সঙ্গে ১৯৯০ থেকে পরিচিত। এ ছাড়া আমার ফেইসবুক বন্ধু রোকেয়া পারভীন (আপা) যিনি
আমাকে ইনফরমেশন দিয়েছিলেন। আমার ভালো লেগেছে কিছু সমবয়সী বন্ধু পেয়ে যাদের সঙ্গে কর্ম জীবনের বিভিন্ন দেশের (নাইজেরিয়া, লিবিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া) অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ; ছেলেমেরা ঝোপ ঝাড়ে বসে নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে গল্পচারিতা, দেখে বেশ ভালো লেগেছে। এ ছাড়া সারাদিন নানান আয়োজনের মধ্যে ছেলেমেয়েদের যার যেমন
খুশি অঙ্কন, দৌড় ও বয়স্কদের খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, গল্পের আড্ডা, গান ও প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন বেশ ভালো ভাবে শেষ হয়েছে।
সকাল থেকেই সূর্য ও মেঘলা আকাশের রসিকতা; বারটার পর থেকে আকাশ একটু একটু মেঘলা হতে থাকে, হঠাৎ করে দিনের দুটার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি, ছোট্ট ছাউনিতে লোকজনের ঠাসাঠাসি, তিল ধারণের জায়গাও নেই। তবে ঘন্টা খানের মধ্যেই বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসে; এই বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই ভলান্টিয়ারগণ, ছাতা, প্লাস্টিকের আবরণ মাথায় দিয়ে কষ্ট করে দূরে পার্কিং স্পট থেকে খাওয়া নিয়ে এসে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন, ওদের আন্তরিকতার প্রশংসা না করে কি থাকা যায় ?
যদিও ছাউনিতে ঠাসাঠাসি বসা, তবে খাওয়াদাওয়া ছিল ভারী মজাদার এবং বেশ উপভোগ করেছি।
এ দেশে বৃষ্টি বেশি সময় থাকে না ; বৃষ্টি হঠাৎ করে শুরু হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে থেমে গিয়ে সূর্য দেখা দেয় এবং মনেই হয় না যে একটু পূর্বেই বৃষ্টি হয়েছিল।
মেঘলা দিনের পরিবেশ আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা। কারও কাছে মেঘলা দিন মন খারাপের একটি বিশেষ দিন, আবার কারও কাছে তা ভালবাসায় স্মৃতিবিজড়িত একটি বিশেষ দিন। সুন্দর সূর্যাস্তের অনুভবের জন্য মেঘলা আকাশের প্রয়োজন। বাংলাদেশে আষাঢ় -শ্রাবন একটানা বৃষ্টি শুরু হলে আর যেন শেষ হতো না।
আকাশ ঘুমোট মেঘাচ্ছন্য,কখনও কখনও দিনে সূর্যের লুকোচুরি যেন এই এলো আর এই গেলো, একটানা বৃষ্টি শুরু হলে তো আর শেষ হবার নেই। পল্লী গ্রামে বৃষ্টির দিনে ‘পাতলা’ বা ছাতা যা ব্যতীত ঘরের বের হওয়া যেত না। মনে পড়ে বৃষ্টির দিনে পুকুর থেকে উঠে আসা কৈ, টাকি সোল্ মাছের উঠানে ধাপাধাপি এবং ‘পাতলা’ মাথায় দিয়ে গিয়ে ধরে নিয়ে আসার স্মৃতি। এই যে বৃষ্টি শুরু হলো তা আর শেষ হবার নয়; দেখতে দেখতে বন্যা নেমে আসতো। এরই মধ্যে চাষীরা মাঠের আধা- কাঁচা আধা- পাকা ধান কেটে এনে বাড়ির
উঠোনের এক কোনে জমা করতেন। মাঠে পাট কাটা বাকি, চাষীরা পানিতে ডুব দিয়ে সে পাট কেটে জাগ্ দিয়ে রেখে দিতো। বৃষ্টির দিনে অলস মন, কাচারী ঘরে ভাইবোনদের নিয়ে লুড্ডু খেলা,পুঁথি পড়া এবং মা-চাচিদের খিচুরি রান্না হলে হাফুস হুফস করে খাওয়া। সব চেয়ে বেশি মনে পড়ে তালের কোন্দা, বা ছোট নৌকা নিয়ে জমি থেকে শাপলা উঠানো। এ নিয়ে “আমাদের ছোট্টগ্রাম” বিভিন্ন সময় যা লিখেছি, তারই ছিটাফোটা তুলে
ধরলাম। চলবে: