News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

ফারাক্কা ব্যারাজ: কৌশলগত আইনি পদক্ষেপের সময় এসেছে

মতামত 2025-05-14, 4:47pm

screen-shot-2025-05-13-at-10-1822d4a4bb0f4b0e5c89b2d248261e6e1747219679.jpeg

Matiul Alan, Ph D



মতিউল আলম, পিএইচডি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া

১৯৭৫ সালে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করে গঙ্গা নদীর পানি ভাগীরথী-হুগলি নদীতে প্রবাহিত করে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি করতে। প্রাথমিকভাবে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হয়েছে। গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ পরিবেশগত বিপর্যয়, কৃষি বিপর্যয়, অর্থনৈতিক দুর্ভোগ ও তীব্র সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে।

শুরু থেকেই ফারাক্কা ব্যারাজ আন্তর্জাতিক নদী আইনের মৌলিক নীতিগুলো লঙ্ঘন করেছে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জলধারা কনভেনশনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখিত "কোনো ক্ষতি নয়" নীতি অনুযায়ী কোনো দেশ অন্য দেশের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ ব্যাপক পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি "ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার" অনুযায়ী যৌথ জলসম্পদের ন্যায্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ফারাক্কার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাংলাদেশের পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং দেশের পরিবেশ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে কৃষি, মৎস্যসম্পদ ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত ব্যারাজ নির্মাণের আগে ও পরে যথাযথভাবে বাংলাদেশকে অবহিত ও পরামর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক নিয়মেরও লঙ্ঘন। এসব কর্মকাণ্ড চরম আইনি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য, যার জন্য ক্ষতিপূরণ ও সংশোধন দাবি করা উচিত।

ইতিহাসে ফারাক্কা ব্যারাজ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীকী ঘটনা ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা লং মার্চ। ১৬ মে ১৯৭৬ সালে হাজার হাজার মানুষ রাজশাহী থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত পদযাত্রা করে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদ জানায়। এ দিনটি আজও বাংলাদেশের পরিবেশ ন্যায়বিচার ও ন্যায্য পানি ভাগের দাবির প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।

বিশ্বজুড়ে একই ধরনের নদী বিরোধের সমাধান হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত বা মধ্যস্থতা সংস্থার মাধ্যমে, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। হাঙ্গেরি বনাম স্লোভাকিয়ার গ্যাবচিকোভো-নাগিমারোস মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) পরিবেশগত সুরক্ষা ও ন্যায্য পানি ব্যবহারের গুরুত্ব জোর দিয়েছে। একইভাবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ইন্দুস জল চুক্তিতে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সমাধান পাওয়া গেছে। ইথিওপিয়ার গ্র্যান্ড রেনেসাঁ বাঁধের মতো চলমান আলোচনাগুলো বহুপাক্ষিক সংলাপের গুরুত্ব নির্দেশ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে রিও গ্রান্ডের জল ব্যবস্থাপনা টেকসই কূটনৈতিক সমাধানের সফল উদাহরণ।

এসব বৈশ্বিক নজির বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে এখনই শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, ব্যারাজের ফলে পরিবেশগত, কৃষিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির বিস্তারিত মূল্যায়নের জন্য দ্রুত বহুমুখী বিশেষজ্ঞ দল গঠন করতে হবে। এ ধরনের দলিল ভারতের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশের উচিত আইসিজে বা পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশন (পিসিএ)-এর মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিযোগ দায়ের করা। আইসিজে জটিল রাষ্ট্রগত বিরোধের জন্য উপযুক্ত বাধ্যতামূলক রায় প্রদান করতে সক্ষম, অন্যদিকে পিসিএ পানি বিরোধে পরিবেশগত ও প্রযুক্তিগত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নমনীয় সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারে।

মজার ব্যাপার হলো, ভারতে অভ্যন্তরীণভাবেও ফারাক্কা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ রাজেন্দ্র সিংহ ফারাক্কাকে "অভিশাপ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই অভ্যন্তরীণ সমালোচনা বাংলাদেশের দাবিকে জোরদার করার সুযোগ করে দেয়।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমালোচনাকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের কূটনীতিকে ভারতীয় নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী ও মিডিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।

বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও পরিবেশগত ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এর সফলতার জন্য আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, হাইড্রোলজিস্ট, কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে দ্রুত একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন জরুরি।

অবশেষে, ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ জল কনভেনশন অনুমোদন করে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা বাংলাদেশের জন্য অত্যাবশ্যক। এই অনুমোদন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।

অন্তর্নিহিতভাবে, ফারাক্কা ব্যারাজ একটি বড় সংকট হলেও একইসঙ্গে একটি সুযোগ। কৌশলগত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পানির ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও সহযোগিতামূলক পথে অগ্রসর হতে পারে। পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়।