News update
  • OIC Resolution to Address Israeli Aggression Against the Palestinian People      |     
  • 1,000+ Dead in Clashes Between Syrian Forces and Assad Loyalists     |     
  • Eid shopping rush in Dhaka despite rising prices      |     
  • Bangladeshi firms join hands with US telecom giant Starlink     |     
  • Dhaka’s air records ‘unhealthy’ Sunday morning     |     

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মানবাধিকারের অবনতি - অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

একটি অক্ষম আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে প্রকাশ করে মাত্র

মানবাধিকার 2023-03-28, 11:18pm

amnesty-inyernational-logo-6b8fd2fafb1e81ed9fc9844308b5ce6b1680023914.png

Amnesty Inyernational logo



অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন মানবাধিকারের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে দুমুখো নীতি এবং ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার এবং সার্বজনীন মূল্যবোধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ না হতে পারার ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে।

ইউক্রেনের সংকটে পশ্চিমাদের জোরালো প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে আফগানিস্তানে মানাবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি এবং শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভারত এবং নেপালে প্রতিবাদের অধিকারের উপর তীব্র কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রে একই রকম জোরালো ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপের শোচনীয় অভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে।

নারীর অধিকার এবং প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে কারণ রাষ্ট্রগুলো নিজেদের দেশেই তাদের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে৷

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বিষয়ে জোর দিচ্ছে যে অবশ্যই মানাবাধিকার সংক্রান্ত বিধি-ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রতিটি মানুষের জন্য এবং সর্বত্র তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রকাশ করার সময় বলেছে যে, বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যর্থতা - সদস্যদের স্বার্থের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলির দক্ষতা নষ্ট হওয়া- বিশ্বব্যাপী সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক শক্তি এবং খাদ্য সংকটের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যর্থতা, ইতিমধ্যেই একটি দুর্বল বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করেছে।  

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবেদন ২০২২/২৩: দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস হিউম্যান রাইটস দেখেছে যে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দুমুখো নীতি দায়মুক্তি এবং অস্থিতিশীলতাকে উস্কে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, আফগানিস্তানে মানাবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি রোধে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপের শোচনীয় অভাব, শ্রীলঙ্কার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট ও মুদ্রাস্ফিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর দমন-পীড়ন এবং সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের মোকাবেলা করতে অস্বীকৃতি।

“সমস্ত মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা ৭৫ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা এবং ক্ষমতা কাঠামোর বর্তমান পরিবর্তনগুলি এমন অস্থিতিশীলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে যেখানে মানবাধিকারের উপর থেকে দৃষ্টি সরানো সহজ হয়ে উঠছে। যেহেতু দক্ষিণ এশিয়া একটি অস্থির এবং অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে আছে, তাই সব ধরণের আলোচনা ও কথোপকথনের কেন্দ্রে মানাবাধিকারকে রাখা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ডেপ্রোজ মুচেনা।

ভিন্নমতের নির্মম দমন

সাধারণ মানুষ অন্যায়, বঞ্চনা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই অঞ্চল জুড়ে পথে নেমেছিল, কিন্তু আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা সহ বেশিরভাগ দেশেই তারা তীব্র দমন-পীড়ন এবং অত্যধিক, কখনও কখনও প্রাণঘাতী, বলপ্রয়োগের সম্মুখীন হয়েছিল।

শ্রীলঙ্কায়, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে জনগণ মূলত যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছিল, সেই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ প্রাণঘাতী গোলাবারুদ, কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করার ফলে মানুষের মৃত্যু ও আহত হবার ঘটনা ঘটে। শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার ও নির্বিচারে আটক করা হয় এবং সন্ত্রাস-সম্পর্কিত এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়।

আফগানিস্তানে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীরা নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশে পুলিশ ছাত্র ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী ও রাবার বুলেট, শব্দ গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পাকিস্তানে, কর্তৃপক্ষ অধিকার কর্মী এবং জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বলপূর্বক ভেঙে দেয়। নেপালে মহাজনদের দেয়া ঋণের ফাঁদে আটকে পড়া ব্যক্তিরা বিক্ষোভকালীন সময়ে পুলিশ লাঠিচার্জের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তাদের নির্বিচারে আটক করা হয়েছিল। ভারতে, ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিক্ষোভের সময় পুলিশ এক ১৫ বছর বয়সী বালক এবং অন্য একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

বিভিন্ন দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আঘাত অব্যাহত রয়েছে। আফগানিস্তানে, তালেবান সম্পর্কে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন করার জন্য সাংবাদিকরা নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটকের পাশাপাশি নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছিল। বাংলাদেশে, যেখানে সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদন করার জন্য শারীরিক নির্যাতন, বিচারিক হয়রানি এবং অন্যান্য ধরনের প্রতিশোধের সম্মুখীন হয়েছেন, সেখানে একটি তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও খর্ব করার হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েন কারণ সাংবাদিক এবং অন্যদেরকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

অনুরূপভাবে ভারত সরকার মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের উপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের বিনা বিচারে আটক করে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে বিদেশে আলোচিত হতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ভারত সরকার সংবাদ মাধ্যম এবং বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়রানি করার জন্য অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন এবং অন্যান্য অজুহাতও ব্যবহার করেছিল। নেপালে, কৌতুক অভিনেতারা তাদের অভিনয়ের কারণে কারাদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছিল। মালদ্বীপের সংসদ একটি আইন পাস করেছে যা সাংবাদিকদের করা খবরের উৎস প্রকাশ করতে বাধ্য করতে পারে। উৎসাহজনকভাবে, মালদ্বীপ সরকার আইনটি সংশোধন করার কথা বিবেচনা করছিল, কিন্তু তা কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল।

“দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেছে বেছে মানবাধিকার আইন প্রয়োগ করে নির্লজ্জ ভণ্ডামি এবং দুমুখো নীতির একটি বিস্ময়কর প্রয়োগ দেখিয়েছে। তারা শুধুমাত্র তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করে যখন ঘটনাটি তাদের বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে এককাতারে শামিল থাকে কিন্তু স্বার্থ ঝুঁকির কারণে তাদের নিজস্ব দোরগোড়ায় একই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা নীরব দর্শক হয়ে থাকে। এটা বিবেকবর্জিত এবং সার্বজনীন মানবাধিকারের পূর্ণ কাঠামোকে ক্ষুন্ন করে,” বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ইয়ামিনী মিশ্র।

প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রতিক্রিয়ায়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২২ সালে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করে। যার লক্ষ্য হল শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে রাষ্ট্রগুলির তীব্র প্রচেষ্টার মোকাবেলা করা।  

নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষত বয়ে বেড়ায় কারণ রাষ্ট্রগুলো তাদের অধিকার রক্ষা ও সম্মান দিতে ব্যর্থ

ভারতে সুপ্রিম কোর্ট দুটি প্রগতিশীল রায় দিয়েছে, যার একটি যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকারকে সমুন্নত রাখবে এবং অন্যটি একটি বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা যেখানে বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে, সমস্ত নারীদের গর্ভপাতের সুযোগ প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে।

তবুও, বাস্তবিক অর্থে এই অঞ্চলের  বহু নারী এবং মেয়েদের কাছে এক পদ্ধতিগত বৈষম্যের অভিজ্ঞতা অব্যাহত থেকেছে।

আফগানিস্তানে, নারী ও মেয়েদেরকে জনজীবন ও সার্বজনিক স্থানগুলো থেকে কার্যত মুছে ফেলা হয়েছে। বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের কাজ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের জন্য অন্যান্য বিধিনিষেধ যেমন, তাদের পুরুষ সহচরী ছাড়া ভ্রমণ নিষিদ্ধ, মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ, জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট করা পার্কে যেতে না দেয়া সহ নতুন আদেশগুলো তাদের অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাকে আরও সীমিত করেছে।

নেপালে, নারীদের সম নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অব্যাহত রয়েছে। যদিও যে সময়ের মধ্যে একটি ধর্ষণের মামলা আইনিভাবে চলতে পারে সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তবুও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার জন্য অত্যধিক সংক্ষিপ্ত সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের কার্যকর প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতাও এ অঞ্চলে লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানে ক্রমবর্ধমান লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে, স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্বারা নারীদের ধর্ষণ বা হত্যার শত শত ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এই ধরনের অপরাধের জন্য দায়মুক্তি ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে। পাকিস্তানে, স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নারীদের বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তবুও জাতীয় পরিষদ ২০২১ সাল থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা গার্হস্থ্য সহিংসতার বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতে, অন্যান্য বর্ণ-ভিত্তিক ঘৃণামূলক অপরাধের মধ্যে অন্যতম দলিত এবং আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে দায়মুক্তির সাথে। কর্ণাটকের সরকারী বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের হিজাব পরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

“এই অঞ্চলের নারীরা প্রতিবাদের অগ্রভাগে রয়েছে, প্রায়ই তারা তাদের শরীর, জীবন, পছন্দ এবং যৌনতার উপর রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবারের পক্ষ থেকে যে পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা চ্যালেঞ্জ করে। লিঙ্গ-ভিত্তিক ন্যায়বিচার বজায় রাখতে রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যর্থতা, নারীদের দমন, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের স্তব্ধ করার মত ভয়ানক উত্তরাধিকার রেখে যায়,” বলেন ইয়ামিনী মিশ্র।

মানবতার জন্য হুমকির মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী গৃহীত বর্তমান প্রচেষ্টা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত

মহামারী-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক মন্দা, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি অর্থনৈতিক সঙ্কট, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা সহ এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে এবং বাইরে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারগুলিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে, যেখানে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মান ক্রমবর্ধমান দুর্গম হয়ে উঠেছে।

আফগানিস্তানে, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট দেশের ৯৭% জনগণকে দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত করেছে।  যখন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি ৭৩% ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তখন সবচেয়ে দরিদ্রতম এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সর্বোচ্চ দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছে।

২০২২ সালে, অনিয়ন্ত্রিত জলবায়ু সংকটের ধ্বংসাত্মক পরিণতিগুলি খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যা উপেক্ষা করা যায়নি।  বিশেষ করে পাকিস্তানে যেখানে তাপপ্রবাহ, খরা এবং তারপরে বিধ্বংসী বন্যা প্রায় ৭৫০,০০০ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। এই প্রেক্ষাপটে, এটি বিশেষভাবে হতাশাজনক ছিল যে জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভরতা আমাদের জীবনকে সবচেয়ে বড় হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এ কথা জানার পরেও বিশ্ব সম্প্রদায় মানবতার সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভরতাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এই সমষ্টিগত ব্যর্থতা, বর্তমান বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার আরেকটি স্পষ্ট উদাহরণ।

দক্ষিণ এশিয়া 'মানবসৃষ্ট' সংকটগুলি সহ এমন অনেক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে যা একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং পরস্পর সংযুক্ত - এই অঞ্চলের অন্তত তিনটি দেশ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং উচ্চ ঋণের বোঝা নিয়ে আছে – এবং প্রাকৃতিক সংকট, দক্ষিণ এশিয়ার গ্রাউন্ড জিরো অবস্থানের কারণে এখানে প্রথমেই চরম তাপপ্রবাহ থেকে ধ্বংসাত্মক বন্যা উভয়ই ঘটে থাকে। আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম না হয়, তাহলে আমাদের এই সংকট থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই," বলেন ইয়ামিনি মিশ্র।

অকার্যকর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করা দরকার

আফগানিস্তানে, স্বাধীনভাবে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদনের বিষয়টি একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধাপরাধও সংঘটিত হয়েছিল কারণ তালেবান প্রাক্তন প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বা তাদের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। তালেবানের বিচার ব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্য বলে  বিবেচিত হয়নি যখন দেখা গেল আফগানিস্তানে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড ফিরে এসেছে, এবং যা একটি উল্লেখযোগ্য পশ্চাদগতির প্রতীক। ভারতে, কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রধানত মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তি ভেঙে দিয়েছে, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে যে এটি আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্মিলিত শাস্তির একটি রূপ। নেপালে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংঘাতের সময় সংঘটিত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সত্য, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের প্রচেষ্টা পুরোপুরি অপর্যাপ্ত ছিল।

উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়প্রার্থীরা  প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নিপীড়িত এবং তারা তাদের নিজ দেশে বা অন্য কোন দেশে জোরপূর্বক ফিরে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে, যেখানে তাদের মানাবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, যদিও আনুমানিক ১০০,০০০ রোহিঙ্গা শিশু স্কুলের বাইরে থেকে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির উদ্বেগ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যন্ত এবং বন্যাপ্রবণ ভাসান চর দ্বীপে স্থানান্তর করার পরিকল্পনায় অটল রয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইতোমধ্যেই মোট ৩০,০৭৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নিজ দেশে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা আফগানরা প্রতিবেশী দেশগুলি যেমন ইরান এবং যাওয়ার পথে তুরস্কের মতো অন্যান্য দেশগুলি থেকে তাদেরকে জোর করে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল।

এই গুরুতর উদ্বেগগুলোর অনেকগুলি কার্যকরভাবে সমাধান করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অক্ষমতার কারণে দায়মুক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা অত্যাবশ্যক যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থাগুলো যেগুলি আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য তৈরি করা হয় তা দুর্বল করার পরিবর্তে যেন আরো শক্তিশালী করা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা, নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) ঐতিহ্যগতভাবে উপেক্ষিত দেশসমূহ ও পরিস্থিতিগুলো নিয়ে যাতে তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে।

নির্লজ্জ দুমুখো নীতি বেশি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ তৈরি করে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু সংকট, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং মানবিক দুর্ভোগ থেকে সম্পদ এবং মনোযোগকে সরিয়ে নিয়েছে। পশ্চিমের দুমুখো নীতি দেশগুলিকে তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির সমালোচনাকে এড়াতে, উপেক্ষা করতে এবং বিচ্যুত করতে উৎসাহিত এবং সক্ষম করে।

“এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে কার্যকর এবং ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগযোগ্য মানাবাধিকার সংক্রান্ত বিধি-ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবী। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধ এটা প্রমান করে যে বিশ্বের কিছু ধনী দেশ, নিরাপত্তা চান এমন বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রহন করতে এবং তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বাসস্থানের সুযোগ দিতে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি সক্ষম ছিল। তবে, পশ্চিমারা যুদ্ধ ও দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে আসা আফগান ও রোহিঙ্গাদের প্রতি একই উদারতা দেখায়নি। এই নির্লজ্জ দুমুখো নীতি অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করা উচিত এবং দেশগুলিকে অবশ্যই মানাবাধিকার সংক্রান্ত বিধি-ভিত্তিক একটি নূতন ব্যবস্থার জন্য প্রচেষ্টা বাড়ানো উচিৎ," বলেন ডেপ্রোজ মুচেনা।

“ধনী দেশগুলির দুমুখো বা দ্বৈতনীতি তাদের বিভ্রান্তিকর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদে যেমন স্পষ্ট, তেমনি স্পষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের বিশাল অবদানের ক্ষেত্রে। ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু সংক্রান্ত অনেক জরুরী অবস্থার জন্য দক্ষিণ এশিয়া গ্রাউন্ড জিরোতে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা এই অঞ্চলটির দেশগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ এবং বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাসের জন্য বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে আরও তুলে ধরে। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সহ আরও দেশের দরকার যে দেশগুলো এখনও পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং তারা যেন খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই বিশ্বের প্রত্যেক ব্যাক্তি ও সর্বত্র মানবাধিকারের জন্য কথা বলে।" - অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রেস রিলিজ