News update
  • COVID sub variant wave hits Bangladesh; vigilance urged      |     
  • Design woes stall Barguna’s Sonakata Canal Bridge Project      |     
  • Iran retaliates after Israeli strikes on its nukes, military     |     
  • Enact July Declaration, inspire nation make a bold restart     |     
  • Israel warns 'Tehran will burn' if Iran attacks again     |     

নোয়াখালীতে শিক্ষককে মারধর-অপদস্থ, সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

বিবিসি বাংলা শিক্ষকতা 2025-04-24, 7:17pm

erweeq23-336f19d37908025f68197dfd4bbecbf41745500656.jpg




নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে 'মারধর' করার ঘটনা নিয়ে আলোচনা- সমালোচনার মধ্যেই স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

তারা আজ বৃহস্পতিবার ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ মিছিল করে ওই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেছে।

প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী অভিযোগ করেছেন, স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক কর্মকর্তাদের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় একদল লোক গতকাল বুধবার তার অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে মারধোর করে।

সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

অন্যদিকে,আজ শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জন করায় স্কুলটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাপ্রবাহ এতদূর গড়ালো যেভাবে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এই স্কুলের নাম নরোত্তমপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবীর সঙ্গে পরিচালনা কমিটির সাবেক কর্মকর্তদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে গত বছরের অক্টোবর মাসে।

ইউনুস নবীর দাবি, তাকে গত বছরের ২৪শে অক্টোবর জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে যাননি। কিন্তু আদালতে পদত্যাগের বিষয়টি স্থগিত রাখার আদেশ পেয়ে গতকাল তিনি স্কুলে যান।

স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্যরা তার অফিস কক্ষেএসে তাকে মারধর করে তার জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।

এবং, এক পর্যায়ে তাকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।

মারধোরের শিকার হয়ে ছেঁড়া পোশাক পরাবস্থায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তার এমন একটি ছবি গণমাধ্যমেও আসে।

প্রায় ১১ বছর ধরে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ইউনুস নবী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওইদিন তার কাছ থেকে "জোর করে" পদত্যাগপত্র নেওয়ার পর তিনি আদালতে মামলা করেন।

তার দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওইদিন স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল মানুষ জোর করে তাকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করান।

"তবে ইউএনও ওইসময় ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন নাই" জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি বেগমগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে ঘটে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বিবিসিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে ওইসময় একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিলো।

"ওইদিন তার (ইউনুস নবী) সাথে (পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর) নিয়ে ঝামেলা করেছে এলাকার লোকজন। এরপর থেকে তিনি আর স্কুলে যেতে পারেন নি," বলেন তিনি।

ফের স্কুলে কেন?

বেগমগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে ইউনুস নবী যে মামলাটি করেছিলেন, আদালত চলতি বছরের ২০শে মে পর্যন্ত ওই পদত্যাগপত্রের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এরপর তিনি গতকাল বুধবার সকালে আবার স্কুলে যান।

"গিয়ে আমি আমার অফিস কক্ষের চেয়ারে বসি। তারপর এলাকার এক-দেড়শো লোক এসে জামা-কাপড় ছিঁড়ে, মেরে স্কুল থেকে বের করে দেয় আমায়," বলেন তিনি।

এই হামলাকারীরা কারা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা স্কুলের সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেনের লোক। "তারা আমার কাছ থেকে ৩৩ লক্ষ টাকা চাইছে।"

ইউএনও মো. আরিফুর রহমান বলেন, "মারধর ও জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি আমায় জানিয়েছেন তিনি...আমরা এই ঘটনার সত্যতা তদন্ত করে দেখবো।"

তবে তিনি এও জানান, গতকালকে ইউনুস নবী প্রশাসনকে না জানিয়ে স্কুলে গিয়েছেন।

"ওনাকে নিষেধ করছিলাম যে যেহেতু পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে না, আপনি দেখে-শুনে যান। কিন্তু উনি হুট করে গেছেন। কেন গেছিলেন, জানি না," যোগ করেন তিনি।

তিনি এও জানান, ইউনুস নবী এলাকার লোকজনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে যেতে না পারায় শিক্ষকদের বেতন হচ্ছিলো না। তখন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়।

যদিও ইউনুস নবীর দাবি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিচালনা কমিটির সভাপতির ঘনিষ্ঠ।

ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী

ইউএনও মো. আরিফুর রহমান বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্কুল কমিটির সাবেক সদস্যদের সাথে ইউনুস নবীর "আগে থেকেই বিরোধ ছিল।" এরপর গত পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর তারা ইউনুস নবীর বিরুদ্ধে দুুর্নীতির অভিযোগ করে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি দাবি করেন, ইউনুস নবী বিদ্যালয়ের ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

"ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তা তদন্তে যায়। উনি টাকার হিসাব দিতে পারেন নাই...পদত্যাগ করার পর এই নিয়ে দুইদিন উনি স্কুলে গেছেন। প্রথমবার তাকে বের করে দেয়।"

"গতকালও ওনাকে একই প্রক্রিয়ায় বের করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি," বলেন মি. হোসেন।

তবে তিনি দাবি করেন যে, মি. নবীর জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ বানোয়াট।

এসময় কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইউনুস নবী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই অনিয়মের কারণে চাকরি করা অবস্থায় জেল খেটেছেন এবং গ্রেফতার হয়েছেন।

"কিন্তু ওই সময়ের এমপি'র কারণে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারিনি আমরা," বলেন তিনি।

রাজনৈতিক পাট পরিবর্তনের পর মুক্তার হোসেন আবার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবীর ভাষ্য, "পুনরায় স্কুলের সভাপতি হওয়ার কারণেই এরা এরকম করছে।"

অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, "৫৯ টাকাও আত্মসাৎ করি নাই। তদন্ত রিপোর্টেও টাকা-পয়সা অনিয়মের কথা লেখে নাই।"

উল্লেখ্য, স্থানীয় সাংবাদিক হাসিব আল-আমিনের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বিবিসিকে জানান, ইউনুস নবীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা ধরনের দুর্নীতি অভিযোগ ছিল।

উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন– শিক্ষার্থীদের প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ানো, পরীক্ষার হলে নকল সাপ্লাই করা, কৌশল করে শিক্ষকদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

তবে মি. নবী সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।