News update
  • Dhaka, Bangkok ink five bilateral documents     |     
  • Bangladeshi youth shot dead by Indian BSF in Lalmonirhat     |     
  • Pro-Palestinian US campus protests grow as police crack down     |     
  • Mass-awareness needed to prevent heat-related illness     |     
  • New Delhi to closely watch China-BD joint military training     |     

নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পেতে যথাযথ জ্বালানি মিশ্রণ জরুরি

error 2021-07-18, 1:07pm

virtual-meeting-on-power-energy-integrated-master-plan-organised-by-energy-and-power-on-saturday-b97757a8eaf42fb8e4acfc2ca7ff3d9d1626592032.png

Virtual meeting on power energy integrated master plan organised by Energy and Power on Saturday. Photo - courtesy



 - 

নিরাপদ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী দামে পেতে হলে সঠিক জ্বালানি মিশ্রণ নিশ্চিত করতে হবে। আর বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সমন্বিত মাস্টার প্লান প্রণয়নে দেশীয় পেশাজীবীদের কাজে লাগাতে হবে। এই পরিকল্পনা প্রনয়নকালে মনে রাখতে হবে এখনতো নয়ই বরং ২০৫০ সালেও ফসিল ফুয়েলের আধিক্য থেকে বিশ্ব বেরিয়ে আসতে পারবেনা। আর এই মহাপরিকল্পনা করতে হবে বাস্তবতার বিবেচনায়, আবেগ তাড়িত হয়ে নয়। সর্বপরি এটা বাস্তবায়নে রোডম্যাপ নিশ্চিত করতে হবে।

গত শনিবার এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত “পাওয়ার এনার্জি ইন্টিগ্রিটেড মাস্টার প্ল্যান” শীর্ষক ইপি টকস এ উপরের মতামত উঠে আসে। ইপি সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির স্পেশাল এনভয় জনাব আবুল কালাম আজাদ।

আলোচনায় অংশ নেন পেট্রোবাংলা ও বিপিসির সাবেক চেয়ারম্যান মুকতাদির আলী, বিপিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির, বিইআরসির সাবেক সদস্য জনাব আবদুল আজিজ খান, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং এনার্জিপ্যাকের সিইও জনাব হুমায়ুন রশীদ, জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহমান এবং আস্ট্রেলিয়ার মেলব্রন থেকে যুক্ত ছিলেন ইঞ্জি খন্দকার আবদুস সালেক।

আবুল কালাম আজাদ ওয়ান্ড এনার্জি কাউন্সিলের সমীক্ষা উদ্ধৃত করে বলেন, বিশ্বে ২০১০ সালে ফসিল ফয়েল নির্ভরতা ছিল ৭৯ শতাংশ। ২০৫০ সালে দক্ষ ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আজকের অর্ধেক জ্বালানি দরকার হবে। কিন্তু তারপরও ঐ সময়কালে সর্বন্মি পর্যায়ে থাকলে ফসিল ফুয়েল নির্ভরতা হবে ৫৯ শতাংশ আর উচ্চ হারে থাকলে হবে ৭৭ শতাংশ। ফলে ঐ সময়কালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে পরিবেশ, জ্বালানি নিরাপত্তা বিশেষ করে সবার জন্য জ্বালানি পাওয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, আগের পরিকল্পনাও সমন্বিত ছিল। তখনও মহাপরিকল্পনাগুলো করা হয়েছে তখনকার প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে। ২০১০ এবং ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের জন্য আলাদা দুটি মহাপরিকল্পনা করা হলেও দুটি খাতের মধ্যে সমন্বয় করেই তা তৈরী করা হয়েছিলো। এবার দুটি খাত নিয়ে একটি দলিল প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা প্রনয়নকালে দেশীয় পেশাজীবীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি ১০টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল প্রসঙ্গ উল্লেখ্য করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরো ভাবা দরকার ছিলো। কেননা বাংলাদেশ যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনে তাহলেও বৈশ্বিক পরিবেশের কোনো লাভ বা ক্ষতি হবেনা। কারণ, বাংলাদেশ বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ করে মাত্র ০.৪ টন আর অ্যামেরিকার এ পরিমাণ প্রায় ১৬ টন। আমাদের উচিত ছিল নিজস্ব কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তা ব্যবহার করার।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে উদ্যোগ নিয়ে আমরা তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। তাই সোলারের পাশাপাশি বায়ু বিদ্যুৎ বিশেষ করে অপশোর বায়ু বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। এলএনজি আমদানী অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানও জোরদার করতে হবে।

সর্বপরি আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে নেপাল ও ভূটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানী বৃদ্ধি করতে পারলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো যাবে। আবার গ্রীন হাইড্রোজেন জ্বালানি বিকোশেও কাজ শুরু করতে হবে। 

মুকতাদির আলী দাবি করেন, সমন্বয়হীনতাই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। আর তার কারণে কোনো পরিকল্পনায় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। আবার পরিকল্পনা অনুসারে গৃহীত অধিকাংশ প্রকল্পই সঠিক সময়ে শেষ করা যায়না। ফলে অর্জন প্রশ্নের মুখে পড়ে। তিনি মনে করেন, দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের পরিকল্পনা দেশীয় পেশাজীবীদের হাতেই প্রণীত হওয়া উচিত।

এনার্জিপ্যাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইন্টারন্যাশনাল বিসনেস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা আছে। শিল্পখাতে সমৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরাপদ, মানসম্মত ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রস্তুতে এবং তা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটি সম্ভব হলে শিল্পখাতের যেমন প্রসার হবে এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

বিপিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান এ.এস.এম আলমগীর কবির বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে আর বিদেশী প্রতিষ্ঠান নয়, এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও জনবল দিয়ে এই কাজ করা উচিত। প্রয়োজনে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তা যাচাই করানো যেতে পারে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের অতিরিক্ত সক্ষমতা নিয়ে যে বির্তক তার কারণ হচ্ছে প্রাক্কালন অনুসারে চাহিদা বৃদ্ধি না পাওয়া, সময় মতো কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবসরে না পাঠানো।

আবার আমাদের স্পিনিং রির্জাভ অনেক বেশি, ফলে ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রির্জাভ কোনোভাবেই ২৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। 

আবদুল আজিজ খান বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কোথায় যেতে চায় তা আমরা জানি। তাই এটাকে সহায়তা করার জন্যই আমাদের পাওয়ার এনার্জি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। জ্বালানি মিশ্রণের বিষয়টিও মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে আছে। এবারের পরিকল্পনায় সোলারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর নিজস্ব গ্যাস সম্পদের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার সময় নেই। এলএনজি ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। তবে নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানও অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এখান থেকে বড় সাফল্য পাওয়ার সম্ভবনা খুব কম। তবে দেশীয় জ্বালানি প্রাপ্ততা নিয়ে একটি সমীক্ষা করা জরুরি। তা সমন্বিত মহাপরিকল্পনায় সঠিক জ্বালানি মিশ্রণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

খনি প্রকৌশলী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুশফিকুর রহমান মহাপরিকল্পনা প্রস্তুতের আগে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার ওয়ার্ক’ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার ওয়ার্ক’ করা থাকলে মহাপরিকল্পনায় একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং তা বাস্তবায়নে ‘রোডম্যাপ’ করা সহজ হবে। আর সমন্বিত মহাপরিকল্পনাকে অবশ্যই একটি সংক্ষিত দলিল করা উচিত। একই সাথে কুয়ালিটি ও অ্যাফোডেবিলিটি এবং জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের সীমা কী তা চূড়ান্ত করতে হবে।

ড. মুশফিক মনে করেন, নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করতে না পারা বা এটকে অবেহেলা করা আমাদের জন্য এক ধরনের লাক্সরি হয়ে গেছে। নিজস্ব কয়লা উত্তোলনে পানি ব্যবস্থাপনা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে জমি। কিন্তু কয়লা বা কয়লা খনি নিয়ে যারা জানেন তাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া উচিত। কোনো জনপ্রিয় ধারনা থেকে কয়লাকে ফেলে রাখা সঠিক হচ্ছেনা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, প্রতিটি মহাপরিকল্পনায় একটি নীতিগত বিবৃতিযুক্ত থাকে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লানেও তা ছিল। কিন্তু এটা অনুসরণ করতে না পারার কারণেই আমাদের জ্বালানি মিশ্রণ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আগামী পরিকল্পনায় দেশীয় সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করার সুযোগ রাখতে হবে এবং পরিকল্পনা বাস্তায়নে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে হবে। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি